ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লটারিতে গড়াচ্ছে নির্বাচন, নেপথ্যে আ. লীগ নেতারা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
লটারিতে গড়াচ্ছে নির্বাচন, নেপথ্যে আ. লীগ নেতারা লটারিতে গড়াচ্ছে সিলেট চেম্বারের প্রেসিডিয়াম নির্ধারণ!

সিলেট: নির্বাচনে উভয় প্যানেলের সমান সংখ্যক তথা ১১ জন করে প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় সদ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডিয়াম গঠন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে কোনো প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়াতে পরিচালকদের মধ্য থেকে এবার প্রেসিডিয়াম গঠন নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

দু’পক্ষই চাচ্ছে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নিতে। সে ভাগ্য নির্ধারণ চেম্বারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি।

একাধিক সূত্রমতে, প্রেসিডিয়ামে নিজেদের লোককে বসাতে কোটচাল চালছেন আওয়ামী লীগের দুই বলয়ের নেতারা। সভাপতিসহ ৩টি পদ নিয়ে অন্তরালে থাকা নেতারা নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করছেন! এ খেলায় কোন পক্ষ এগিয়ে যাবেন, তা নির্ধারণ হবে আজ সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে।

দুই প্যানেলের অন্তরালে আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে ভোটের আগে প্রচারণাকালে। এবার তারাই কলকাঠি নাড়ছেন চেম্বারের প্রেসিডিয়াম গঠনে। নেতৃত্বে আসার ভাগ্য নির্ধারণ করছে দুই নেতার দাপট ও ইশারার ওপর! সমঝোতার মাধ্যমে না হলে দুই পক্ষের নির্দিষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম নির্ধারণে যেতে পারে চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড।

আজ সোমবার বিকাল ৩টায় এ বিষয়ে নির্বাচিতদের নিয়ে চেম্বার বিল্ডিংয়ে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের বিজয়ী ১১ প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের নাম নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতিসহ ৩টি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে রোববার রাতে। তারপরও কোনো সুরাহায় পৌঁছানো যায়নি।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ চাচ্ছে ব্যবসায়ী পরিষদের আব্দুর রহমান জামিলকে সভাপতি করতে। আরেক পক্ষ চেম্বারের সদ্য সাবেক সহ সভাপতি ও এফবিসিআইসির পরিচালক তাহমিন আহমদকে সভাপতির আসনে বসাতে চাচ্ছে। আর একই প্যানেলের ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ ও এটিএম শোয়েব সভাপতি হতে চাচ্ছেন।

এবার সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদকে নির্বাচনে খাদ থেকে টেনে তুলেছেন ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ। বিজয়ে মোড় ঘুরাতে মূল ভূমিকায় ছিল তার অবদান। তার পরিবার থেকে ৩ সদস্য পরিষদের বিজয়ী হয়ে এসেছেন। আর পরিচালক হিসেবে এটা তার শেষ নির্বাচন। ফলে তিনিও সভাপতি পদে আসতে চাচ্ছেন।

আর সদ্য সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব আবারো সভাপতি হতে চাচ্ছেন। ফলে এ নিয়ে ঘরেই রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কোনো ছাড় না দিলে সিদ্ধান্ত লটারিতে গড়াতে পারে, এমনটি ধারণা চেম্বার নেতাদের।

সিলেট চেম্বারের পরিচালক পদে নির্বাচিত হুমায়ন আহমদ বলেন, ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি সিনিয়র সহ-সভাপতি, আব্দুর রহমান জামিলকে সভাপতি এবং জিয়াউল হককে সহ-সভাপতি পদের জন্য নাম জমা দিয়েছেন।

সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে পরিচালক পদে নির্বাচিত ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন, সভাপতি পদে তিনি, এটিএম শোয়েব ও তাহমিন আহমদ, সহ সভাপতি পদেও তিনি ছাড়াও তাহমিন আহমদ এবং সহ-সভাপতি পদে আতিক ও মুশফিক জায়গিরদার প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে মতামতের ভিত্তিতে যে কোনো ৩ জনকে নির্বাচিত করা হবে।

তিনি বলেন, সিলেট চেম্বার অব কমার্স ব্যবসায়ীদের একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। এ সংগঠনে উভয় প্যানেল থেকে প্রেসিডিয়াম হতে প্রার্থীতা জমা দিয়েছেন। তবে চেম্বার কোনো অশুভ শক্তির হাতে পড়ুক, তা কারও কাম্য নয়।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) ভোর রাতে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল জব্বার জলিল। নির্বাচনে অর্ডিনারি শ্রেণীতে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল থেকে ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ পেয়েছেন ৭১৩ ভোট, ফখর উছ সালেহীন নাহিয়ান ৭০৮, মুশফিক জায়গীদার ৬৫৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদে হুমায়ূন আহমদ ৯১১ ভোট, জহিরুল কবির চৌধুরী ৮৬৭, ফাহিম আহমদ চৌধুরী ৮৫৯, খন্দকার ইসরার আহমদ রকী ৭৯৬, আলীমুল এহছান চৌধুরী ৭৩২, মো. আব্দুস সামাদ ৬৮৮, দেবাংশু দাস মিঠু ৬৮৪, মো. নজরুল ইসলাম ৬৫৩, আব্দুর রহমান জামিল ৬৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

অ্যাসোসিয়েট শ্রেণিতে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ ৬৫৭, মুজিবুর রহমান মন্টু ৬৫৭, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব ৬১২ ও কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ৬০৭ এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের জিয়াউল হক ৫৭০ ভোট ও হাজী সরোয়ার হোসেন ছেদু ৫৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

ট্রেড গ্রুপ ও টাউন অ্যাসোসিয়েশনে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তন্মধ্যে ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে চেম্বারের সদ্য সাবেক সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, মো. হিজকিল গুলজার ও মো. আতিক হোসেন এবং গোলাপগঞ্জ টাউন অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমিনুর রহমান। এ দুই ক্যাটাগরিতে চারটি পরিচালক পদে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি।

ফলাফলে জানা গেছে, সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল থেকে সমান সংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় প্রেসিডিয়াম গঠন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কোনো প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় সমঝোতা না হলে লটারি ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
এনইউ/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।