ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৪ বছরে ৬১ অসহায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন রুহুল আমীন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
১৪ বছরে ৬১ অসহায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন রুহুল আমীন

নাটোর: ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’ এই বিখ্যাত গানের কথাগুলো যথার্থতা প্রমাণ করেছেন একজন মানবিক মানুষ মো. রুহুল আমীন রুবেল। তার বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে।

 

তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নন বা জনপ্রতিনিধিও নন। তিনি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অথচ মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক আর ভালো কাজের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন একজন মানবিক মানুষ। গরীব দুঃখীদের মুখে হাসি ফোটানোই যার স্বপ্ন। শৈশবকালে তিনি দেখেছিলেন স্বপ্ন, যৌবনকালে এসে করছেন তার বাস্তবায়ন।

গত ১৪ বছরে অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের অন্তত ৬১ জন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি নিজে। ধনী কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো আর পাঁচটা মেয়ের যেভাবে ধুমধামে বিয়ে হয়, ঠিক সেইভাবে নিজ খরচে এসব অসহায় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে থাকেন রুহুল আমিন।  

শুধু বিয়ে দিয়েই তার দায়িত্ব শেষ নয়। বিয়ের পর ওইসব মেয়ে ও জামাইদের নিজের সাধ্যমত সমাদর করে থাকেন তিনি। এছাড়া প্রতি শুক্রবার গরীব অসহায়দের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার, পোশাক, নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন। তাইতো একমুঠো খাবারের আশায় শুক্রবারের জন্য অপেক্ষায় থাকেন এলাকার গরীব অসহায় মানুষেরা। সেই খাবার হাসি মুখে তুলে দেন তিনি। এমনকি গরীব ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগান দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান তিনি। তাইতো এলাকায় একজন মানবিক মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।

আর্থিকভাবে ততোটা সচ্ছল নন রুহুল আমিন। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আর নিজের গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়ে সংসার চালান। পাশাপাশি এমন জনহিতকর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে তিনি তার এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিএম মোবাইল হাউস, বিএম লেডিস কর্নার পরিচালনা করছেন।

আর্থিকভাবে সচ্ছল না হয়েও দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে গরীব অসহায় মানুষদের সেবা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। গরীব অসহায় মানুষদের মুখে হাসি দেখলেই যেন তার ভাল লাগে। কেননা নিজের যতোটুকু আছে সেই সামান্য কিছু থেকেই গরীব অসহায়দের মুখে হাসি ফোটান তিনি। এজন্য তাকে অনেকেই গরীবের বন্ধু বলে ডাকেন।  

 

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন জেলায় নিজের পরিচিত মানুষদের সমন্বয়ে গরীব অসহায় পরিবারের মেয়েদের খুঁজে বের করেন। এরপর তিনি তার নিজ খরচে বিয়ে দিয়ে থাকেন। এছাড়া নিজের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব ততটুকু তিনি গরীব অসহায় মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। এ পর্যন্ত তিনি নিজ খরচে ৬১ জন অসহায় দরিদ্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।  

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) নাফিজা (১৮) নামে এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ের  বিবাহ সম্পন্ন করেছেন তিনি। নাফিজার বাড়ি রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার শ্যামপুর নগরবাড়ি এলাকার দিনমজুর খালেকের মেয়ে। ধনী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের যেমন ধুমধামে বিয়ে দেওয়া হয়, ঠিক তেমনভাবেই নাফিজা খাতুনের বিয়ে দিয়েছেন রুহুল আমিন রুবেল।  

গরীবের বন্ধু রুহুল আমীন রুবেল বড়াইগ্রাম উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন সরকারের ছেলে। ১৯৭৭ সালে মধ্যবিত্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় ওয়ালীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বাংলা কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে তিনি নিজ এলাকায় ব্যবসা করছেন এবং সমাজের অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের সেবা করছেন।  

রুহুল আমীন রুবেল বাংলানিউজকে জানান, পড়াশোনা শেষ করার পর কোনো চাকরির চেষ্টা করেননি তিনি। ব্যবসার প্রতি তার অনেক আগ্রহ ছিল। পাশাপাশি নিজের এলাকার গরীব অসহায় মানুষদের যেন সেবা করতে পারেন সেজন্য এলাকার বাহিরে যাওয়ার সুযোগ হলেও তিনি যাননি।
 
কেননা ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল নিজের গ্রামে থাকা গ্রামের মানুষদের সেবা করা। তাই স্কুল জীবন থেকেই তিনি নিজের সহপাঠীদের অনেকভাবে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, পড়াশোনা শেষ করে আসার পর একটি হার্ডওয়ার ও ওষুধের দোকান করেন। সেখানকার আয় দিয়ে সংসার চালিয়েছেন এবং গরীব অসহায়দের সাহায্য করেছেন।  

পরবর্তীকালে বিএম মোবাইল হাউস, বিএম লেডিস কর্নার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।  ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার তেমন কোনো বড় পরিকল্পনা নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শুধু গরীব অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চাই এবং তাদের সহযোগিতা করতে চাই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।