ঢাকা: ‘চলার পথ যত কণ্টকাকীর্ণ হোক, যত রক্তক্ষরণ হোক’ সব বাধা পায়ে দলে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসলে, স্বাধীনচেতা হলে অনেক বাধা আসে। ’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি উদযাপন উপলক্ষে রোববার (০২ জানুয়ারি) সকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।
সব বাধা পদদলিত করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলার পথ যত কণ্টকাকীর্ণ হোক, যত রক্তক্ষরণ হোক—সব বাধা পায়ে দলে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে যাবো। এটাই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা। ’
তিনি বলেন, ‘চলার পথ যত অন্ধকারচ্ছন্নই হোক না কেন, যত বন্ধুর হোক না কেন, যত কণ্টকাকীর্ণই হোক সেখানে আমরা থেমে থাকবো থাকবো না। অন্তত আমি এই প্রতিজ্ঞা করছি, থেমে থাকবো না। ’
শত্রুর বুলেট-বোমা পরোয়া করেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি অনেক বুলেট, বোমা, গ্রেনেড আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আমি সেগুলো নিয়ে কখনও পরোয়া করি না। ’
টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি জানি স্বাধীনচেতা হলে অনেক বাধা আসে। আর দেশকে ভালোবেসে, শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যারা পথ চলে—তাদের পথ চলা কখনও সহজ হয় না। অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। ’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দীর্ঘ সময় বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয় ২০০৪ সালে। সেই গ্রেনেড হামলায় তিনি প্রাণে বাঁচলেও নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী।
মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার কয়েকটি লাইন উদ্বৃত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি কবির ভাষায় বলতে চাই যে The woods are lovely, dark and deep, But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.’
সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ। এটা হঠাৎ করে আসে না। সুষ্ঠু পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি। আশু করণীয়, মধ্যমেয়াদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছি এবং যার ফলেই আমরা পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি বলেই আজকে এই অর্জন করা আমাদের সম্ভব হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘কাজেই এটা আমরা ধরে রাখতে চাই। ধরে রাখতে চাই এই জন্য, আজকে আমরা যে অর্জনটা করতে পেরেছি। আমরা সামনের দিকে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবো। ’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এই ২০২১ সালও পেরিয়ে এসেছি, আজকে ২০২২ সাল। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখানেই থেমে থাকিনি। আমরা আমাদের বদ্বীপ জলবায়ু অভিঘাতে যাতে এদেশের মানুষের সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রাখার জন্য ডেল্টা প্ল্যান-১০০ প্রণয়ন করে সেটাও আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। ’
গবেষণা ও সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সময়োপযোগী কৌশল প্রণয়ণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকে টেকসই করতে আমরা একটি জাতীয় সরল উত্তরণ কৌশল অর্থ্যাৎ স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাজেডি প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছি। এই জাতীয় দলিলে উত্তরণের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় সবধরনের দিক নির্দেশনাসহ কার্যকর কৌশল থাকতে হবে। ’
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টে পলিসি বাংলাদেশেকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সবগুলো শর্তপূরণ করায় সর্বশেষ গত বছরের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়।
সহযোগীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। আর যারা সহযোগী, আমার সঙ্গে আছেন—তাদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। তারা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ’
তিনি বলেন, ‘আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আমাদের সহযোগী সংগঠন, বাংলাদেশের জনগণ এবং যারা আমার সঙ্গে আছেন; তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। উন্নয়ন সহযোগীদেরও ধন্যবাদ জানাই। ’
নতুন প্রজন্ম দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার যে লক্ষ্য, যেটা আমার বাবা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল, সে লক্ষ্যটা আমাদের অর্জন করতেই হবে। সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। নতুন প্রজন্ম এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটাই আমাদের আশা, সেভাবেই তাদের তৈরি করতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই চলার গতিটা ধরে রাখতে পারে। ’
নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে এটাই আমাদের দাবি। অন্তত আমি তাদের এইটুকু আহ্বান করবো। দেশকে ভালোবাসবে, মানুষকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। সেখানেই শান্তি, সেখানেই অগ্রগতি, সেখানেই উন্নতি, সেখানেই স্বস্তি। আর বাংলাদেশের এই চলা অব্যাহত থাকুক। ’
বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারের সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে চলবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে আমরা চলবো। চিরদিন কেউ বাঁচে না। কিন্তু যে কাজ আমরা করে গেলাম, সেই গতি যেন হারিয়ে না যায়। চলার গতি যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়। এটাই আমরা চাই। ’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে গণভবন প্রান্তে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আমার জন্য অনেক বুলেট-বোমা-গ্রেনেড অপেক্ষায় থাকে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২২
এমইউএম/এমজেএফ