ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সুপেয় পানির তীব্র সংকটে বাগেরহাটবাসী

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২২
সুপেয় পানির তীব্র সংকটে বাগেরহাটবাসী

বাগেরহাট: সুপেয় পানির তীব্র সংকটে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের অধিকাংশ এলাকার মানুষ। চারদিকে নদী খালে লবণ পানি এবং পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় চরম সংকট তৈরি হয়েছে।

কিছু কিছু এলাকার মানুষ বাধ্য হয়ে পুকুরের তলানির পানি পান করছে। অপরিষ্কার পানি পান করায় নানা ধরনের পানি বাহিত রোগ বাড়ছে উপকূলজুড়ে।  

সুপেয় পানির সংকট মেটাতে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে পানি সংকট মেটাতে পিএসএফ সংস্কার, পুকুর খননসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (০৮ এপ্রিল) সকালে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী জিলবুনিয়া গ্রামের আবু গাজীর বাড়িতে সরকারি পিএসএফ থেকে পানি নেওয়ার জন্য নারীদের দীর্ঘ লাইন। কারণ অনেকগুলো সম্পূর্ণ নষ্ট পিএসএফ এর মধ্যে এই একটি পিএসএফ আংশিক ভালো আছে। এখানে ৫০ কলস পানি ঢেলে, ৫ কলস বিশুদ্ধ পানি তুলতে হয়। তবু এলাকাবাসীর ভরসা এই পিএসএফ। বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় গ্রামবাসীদের।

এই পিএসএফে পানি নিতে আসা দক্ষিণ জিলবুনিয়া গ্রামের খাদিজা বেগম বলেন, পিএসএফএর টিউবওয়েলের মাথা নাই, পাশের পুকুর থেকে ৫০ কলস পানি ঢাইল্ল্যা দিয়া হেরপর ৫ কলস পানি নেওয়া লাগে। এই কষ্টের চেয়ে মরণ ভালো।

নাজমা বেগম নামে অপর এক নারী বলেন, সাপ্লাই নেই, টিউবওয়েল নেই, ট্যাংকি নেই, কিছুই নেই। শুধু আছে পানির জন্য হাহাকার। এক কলস পানির জন্য রোজা রেখে আধা কিলোমিটার দূর থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি ৩ ঘণ্টা।  

বর্ষার পানি সারাবছর ধরে রেখে খাওয়ার জন্য সরকারের কাছে একটি বড় ট্যাংকির দাবি জানান তিনি।

পার্শ্ববর্তী রায়েন্দা গ্রামের ফরিদ হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসে না। পুকুর ও বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। আশপাশের খালে লবণাক্ত পানি। বাধ্য হয়ে লবণ পানিতে গোসল রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে হয়। এই পানি খেয়ে মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা ও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা খুব সমস্যায় আছি।

শুধু শরণখোলা নয়, বাগেরহাট সদর, রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া চিতলমারী, মোল্লাহাট উপজেলায় সুপেয় পানির একই অবস্থা। এসব উপজেলার গভীর ও অগভীর নলকূপের পানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পানের অযোগ্য।  

অপরদিকে পিএসএফগুলো নষ্ট ও শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দূষিত পানি পান করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বরিশাল গ্রামের মোতালেব সরদার বলেন, বিভিন্ন সময় বেসরকারি এবং সরকারিভাবে সুপেয় পানির জন্য পিএসএফ তৈরি করে দেয়।  কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পুকুরে পানি থাকে না বিধায় পিএসএফগুলো কোনো কাজে আসে না। আমরা সরকারের কাছে প্রতি বাড়িতে একটি করে ট্যাংকি দেওয়ার দাবি জানাই।

কচুয়া উপজেলার বারুইখালী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরেই তীব্র পানির সংকটে ভুগছি আমরা। দূর-দূরান্তের পুকুর থেকে অনেক কষ্ট করে খাবার পানি আনতে হয়। এই অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে লবণাক্ততার কারণে অগভীর নলকূপ স্থাপন হয় না। দেড় লক্ষাধিক মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে তৃষ্ণা মেটায়। কিন্তু এবার একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলোতে কোনো পানি নেই। ফলে মানুষের মাঝে খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে। পানি সংকট নিরসনে নতুন পরিকল্পনা, মজা পুকুর পুনঃখনন, পিএসএফগুলো সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী এবং পরিবার ভিত্তিক ট্যাংকি সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট নিরসনে পিএসএফ সংস্কার, পুকুর খননসহ আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে আমরা মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা নিশ্চিত করে থাকি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।