ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

মাগুরায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে চাষিরা

জয়ন্ত জোয়র্দ্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২
মাগুরায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে চাষিরা

মাগুরা: মাগুরায় পানির অভাবে কেটে রাখা পাট জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে নদী-নালা, খাল-বিলে বা পুকুর-ডোবায় পরিপূর্ণ পানি থাকার কথা থাকলেও এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না থাকায় ও প্রচণ্ড গরমে কোথাও মিলছে না পানির দেখা। তাই জমির পাট জমিতেই রেখে দিয়েছেন চাষিরা। সেগুলো জাগ দেওয়া নিয়ে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেকে আবার শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় পাট কাটাতেই পারছেন না।

এবারে ভরা বর্ষার মধ্যেও পর্যান্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। গেল বছর জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১ হাজার ৩৮৭ মিলিমিটার। অপরদিকে এ বছরের আগস্ট মাস পযর্ন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৩২৭ মিলিমিটার। গত বছরে তুলনায় এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম।

পাট চাষিরা বলছেন, শ্যালো মেশিন দিয়ে পুকুর-ডোবায়সহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমিয়ে পাট জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে করে খরচ অনেক বেশি হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা আছে। পুকুরে মেশিন দিয়ে পানি ভরতে তেল খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ লিটার। একদিন পর পর সেগুলোতে আবার পানি দিতে হয়। আবার পচা পানি পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলতে হয়। এভাবে খরচের পাশাপাশি অনেক ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলায় এবারে পাট নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছি।

তারা আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার নদীর স্লুইচ গেট বন্ধ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এটি যদি করা যেত তাহলে নদীর সঙ্গে যেসব খাল-বিল আছে সেগুলোতে পানি জমতে পারতো। সেখানে পাট জাগ দিতে সুবিধা হতো। গেট বন্ধ না করার করাণে নদীতেও পানি জমছে না।

মাগুরা আঠারোখাদা ইউনিয়নের কৃষক আফজাল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। নদী, নালা, খাল, বিল, পুকুর, ডোবা কোথাও পানি নেই। পাট জাগ দেওয়ার কথা চিন্তা করে কাটতেই পারিনি। এ জন্য ধানও লাগাতে দেরি হচ্ছে।

সদর উপজেলার অক্কুর পাড়া গ্রামের কৃষক অচিন্ত সেন বলেন, সামনে আর পাট চাষ করবো না। এ বছরে পাট আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও দুই বিঘা জমির পাট সেখানেই পড়ে আছে, কাটতে পারিনি। পাট কোথায় নিয়ে জাগ দেব সেই চিন্তাতেই দিশেহারা। বাজারে পাটের দাম একেবারে পড়ে গেছে। এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। আমাদের খরচই হয়েছে এর দ্বিগুণ। সার, কীটনাশকের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে আমাদের হাতে তেমন কিছুই থাকবে না। এদিকে বৃষ্টির অভাবে এখনও ধানের জমিও প্রস্তুত করতে পারিনি।

মাগুরা জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী, কুমার, ফটকি, চিত্র, গাড়াই ও মধুমতি নদী। নদীগুলোতে এ বছর আশানুরূপ পানি আসেনি। যে কারণে খাল-বিলগুলোতেও পানির পরিমাণ অনেক কম। তাই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পাট চাষিরা। এছাড়াও জেলার চারটি উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে পানির সংকট ও সমস্যা থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা।

মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হুমায়ন কবির বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে সদরে তুসা জাতের (লাল) পাট আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর প্রাকৃতিকভাবেই বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম থাকায় পাট নিয়ে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।