ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে ভাসে রাজশাহী শহর!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে ভাসে রাজশাহী শহর!

রাজশাহী: বৃষ্টি পাঁচ মিনিট হোক আর আধা ঘণ্টা, তফাত নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে ভাসে রাজশাহী শহর! চারদিকে কেবল থৈ থৈ পানি।

মূল শহরে তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টির পানি নেমে গেলেও মধ্য শহরের অবস্থা হয়ে পড়ে শোচনীয়।  

সড়ক ঘেঁষে থাকা ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাশনের নোংরা পানি আর বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে যায় পুরো রাজপথ। আর নিচু এলাকায় সপ্তাহজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী হয় জলাবদ্ধতা। বছরের পর বছর ধরে চলছে এ দুর্ভোগ। রাজশাহী শহরের রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সৌন্দর্য বর্ধনে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও তা ম্লান হচ্ছে জলাবদ্ধতায়। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ‘জলজট’ ও জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি আজও।

এবার বর্ষায় বৃষ্টি না হলেও শরতের শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে রাজশাহীতে। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। আর তাই জলজট নিয়েও দুর্ভোগ কাটছে না মহানগরবাসীর। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালেও বৃষ্টি হয়েছে। আর এ অল্প সময়ের এ বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে মূল ও মধ্য শহরের বিভিন্ন এলাকায়।

বিশেষ করে মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, গণকপাড়া, তালাইমারী মোড়, শিরোইল মাস্টারপাড়া, কাদিরগঞ্জ, বর্ণালী মোড়ের পেছনে, লক্ষ্মীপুর, ঝাউতলা, ভাটাপাড়া, কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার সামনে, রাজশাহী পর্যটন মোটেল রোড, সপুরা গোরস্থানের মোড় থেকে উপশহর মোড়, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মোড়, শালবাগান, মালদাহ কলোনী, কয়েরদ্বারাসহ বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টি মানেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।

এছাড়া বৃষ্টি হলেই রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়, কোর্ট চত্বরে জমেছে হাঁটুপানি।  

গুরুত্বপূর্ণ এ দফতরগুলোয় পানি মাড়িয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয় সংশ্লিষ্ট সবাইকেই। বৃষ্টি হলেই রাজশাহী শহরের অনেক রাস্তায় পানি জমে যায়। আর পাড়া-মহল্লার ছোট রাস্তায়ও জমে যায় হাঁটুপানি। তাই বৃষ্টি হলেই সড়কের জলাবদ্ধতা নিয়ে চরম আশঙ্কায় থাকেন মহানগরবাসী। কারণ সবাইকেই পড়তে হয় চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে।

তবে বৃষ্টি থামার তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যেই এসব এলাকার সড়কের পানি নেমে যায়। কিন্তু বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই জনদুর্ভোগ অনেকটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। পানি একদিক দিয়ে নামছে আবার আরেক দিক দিয়ে জমছে। ডুবছে সড়ক। আর নিচু এলাকার পানি নামতে এক থেকে দুই সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কে তাই জলজটের কারণে যানজটও লেগে থাকছে।

এর ওপর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে অনেক এলাকায় ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম চলছে। সকাল হলেই পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য সড়কের ওপরে তুলে রাখা হচ্ছে। এর ওপর যখন বৃষ্টি হচ্ছে তখন সেই দুর্গন্ধময় পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সেই পানি মাড়িয়ে চলাচল করায় অনেকে জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ওই নোংরা পানি মাড়িয়ে মসজিদে গিয়ে অনেকে নামাজও আদায় করতে পারছেন না। এর মধ্যে আবার কিছু কিছু এলাকায় উন্নয়ন কাজ চলছে। তাই সেগুলোতে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেশি।

রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মামুন সজিব বলেন, কোনো সময় সামান্য বৃষ্টি হলেই এ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ড্রেন উপচে পড়া নোংরা পানি আর বৃষ্টির পানি মিশে একাকার হয়ে যায়। এতে চলাচলে সমস্যা হয়। বৃষ্টি শেষ হলে পানি নেমে যায় ঠিকই। কিন্তু এ দুই থেকে তিন ঘণ্টায় অনেক ভোগান্তি হয় তাদের। এ নোংরা হাঁটু পানি ঠেলে মসজিদে গিয়ে নামাজও আদায় করা যায় না।

রায়হান আহমেদ নামে গণকপাড়া এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এ এলাকায় যে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায় তা মোটামুটি সবারই জানা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বৃষ্টি ও বর্ষায় এমন অবস্থা থাকলেও কোনো প্রতিকার নেই! রাস্তাটিও নিচু। ড্রেনও অপরিষ্কার থাকে। তাই একটু বৃষ্টি হলে পানিতে ডুবে যায় সড়ক। সেই পানি উপচে দোকানের মধ্যেও ঢুকে যায়। বৃষ্টি হলে রাজশাহীর কোথাও পানি জমুক আর না জমুক, এ এলাকায় পানি জমবেই।

মহানগরীর বর্ণালীর মোড় এলাকার অধিবাসী জামিল উদ্দিন বলেন, প্রায় ১৩ বছর আগে বর্ণালী মোড়ের পশ্চিম দিক দিয়ে রাজীব চত্বর হয়ে একটি বড় ড্রেন ছিল। রাস্তা নির্মাণের সময় সেই ড্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই এ এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকে। নৌকা চলাচলের মতো অবস্থা দাঁড়ায়! যান চলাচল নিয়ে সাংঘাতিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় সবাইকে। লোকজন হেঁটেও যেতে পারে না। তারা দ্রুত জলাবদ্ধতা দূর করার আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্বাস আলী সরদার বলেন, তার ওয়ার্ডের ওই এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে মানুষ এখন ত্যক্তবিরক্ত। সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রায় ১৩ বছর আগে এর সঙ্গে সংযুক্ত একটি ড্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই বৃষ্টির পানি নামতে পারে না। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তিনি কয়েকবার সিটি করপোরেশনরে প্রকৌশল বিভাগকে এ ব্যাপারে বলেছেন। এরপর ওই এলাকায় আবারও নতুন ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে বৃষ্টিতে শহরের জলাবদ্ধতার প্রশ্নে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী শরিফুল হক বলেন, বর্ণালীর মোড় এলাকায় বর্তমানে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এ কারণে পানি চলাচলের পথটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আরও সপ্তাহখানেক নাগরবাসীদের কষ্ট করতে হবে। এরপর আর এমন ভোগান্তি হবে না। এছাড়া অন্য যেসব এলাকায় পানি জমছে বৃষ্টির পরপরই তা নেমে যাচ্ছে। কোথাও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা নেই বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।