নিউইয়র্ক: বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কারের তাগিদ দিয়ে এবার যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পূর্ণ অধিবেশন সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করেছে রেজুলেশন- ৩১৮। এতে বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রবাদের উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
দুই প্রধান দলের সম্পর্ককে ‘শত্রুতা’ হিসেবে উল্লেখ করে এই প্রস্তাবে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সরাসরি ফলপ্রসু আলোচনায় বসার আহবান জানানো হয়েছে।
২০১৪ সালে সিনেটের প্রথম সভাতেই বাংলাদেশের ওপর এই প্রস্তাব পাশ করা হলো।
প্রস্তাবটি এখন বিল হিসেবে বিবেচিত হবে। বিলে বলা হয়েছে , বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কে আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমুহে অর্থনৈতিক, সন্ত্রাস মোকাবেলা, পাইরেসি মোকাবেলা, দারিদ্র দুরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমেরিকান কোম্পানিগুলোর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বছরে ছয় বিলিয়ন ডলার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে বলেও বিলে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে সিনেটের কমিটি অন কমার্স, সায়েন্স এন্ড ট্রান্সপোর্টেশন গত ১৮ ডিসেম্বর শুনানিতে “রেজুলেশন- ৩১৮” প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করে তা ফরেন রিলেশন কমিটিতে পাঠায়।
পরে ‘রেজুলেশন- ৩১৮” এর নাম ও মুখবন্ধে কিছুটা সংশোধনী এনে অন্য কোন পরিবর্তন ছাড়াই হুবহু রেজুলেশনটি পাশ করে যুক্তরাষ্ট্র সিনেট।
রেজুলেশন ৩১৮ যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে পাশ হওয়ার ফলে বিষয়টি হাউজে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস পর্যন্ত গড়াতে পারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ক্ষমতাশালী উচ্চকক্ষ সিনেট এখন চাইলে ফরেন রিলেশন কমিটিতে শুনানি বা কোন নির্দেশনাও দিতে পারবে।
উল্লেখ্য রেজুলেশন-৩১৮” শুনানিতে বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রবাদের উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গৃহীত প্রস্তাবে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সরাসরি ফলপ্রসু আলোচনার আহবান জানানো হয়েছে।
প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র মধ্যকার সম্পর্ককে ‘শত্রুতা’ হিসেবে উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে এর ফলে জরুরি করণীয় থেকে বাংলাদেশ বিচ্যুত হয়ে পড়েছে যা গভীর উদ্বেগের।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দ্রুত সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগী হয়ে এবং একই সাথে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিবাদের সুযোগ দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে এই প্রস্তাবে।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসাচিব অস্কার ফার্নান্দেস তারানকোর ঢাকা সফরের সময় গৃহীত উদ্যোগে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার বিষয়টি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্রস্তাবে।
এছাড়াও মানবাধিকার কর্মীদের উপর নির্যাতন বন্ধে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও গ্রামীণ ব্যাংকের স্বায়ত্ব শাসন পূনরুজ্জীবনে সরকারকে আহবান জানানো হয় সিনেটে পাশ হওয়া এই বিলে।
গত ১১ ডিসেম্বর সিনেটর ডিক ডারবিনের নেতৃত্বে কানেকটিকাটের সিনেটর ক্রিস মারফি ও ওয়াইওমিং এর সিনেটর মাইক এনজি প্রস্তাব আকারে বিলটি উপস্থাপন করেন।
কমিটিতে দেওয়া তার প্রস্তাবে বাংলাদেশে ১৮-দলের অবরোধে কয়েক ডজন মানুষের প্রাণহানি ও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে না পারার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ সময় ১৩২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৩
সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ