নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে একাত্তরের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম ইচ্ছা, বাংলানিউজেই যেন তার মৃত্যুর খবর প্রথম ছবিসহ ছাপা হোক!
মহান স্বাধীনতার মাসে ৭১-এর রণাঙ্গনের বীর সেনানী, প্রবাসে বাংলাদেশিদের প্রিয়মুখ রতন বড়ুয়া হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তার তিনটি অন্তিম ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এর মধ্যে প্রথম ইচ্ছাটি হলো, তার মৃত্যুর সংবাদটি ছবিসহ যেন প্রথম বাংলানিউজে ছাপা হয়! মুক্তিযুদ্ধে দেশ ও মাটি রক্ষায় বিজয় ছিনিয়ে আনলেও মরণব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এখন আর পেরে উঠছেন না রতন বড়ুয়া।
শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনের ছেলে ফাহিম রেজা নূর একটু আগে ফোন করে ব্যথা জড়িত কণ্ঠে জানালেন, হঠাৎ করেই চিকিৎসকরা জানালেন, রতনদা যুদ্ধে আর পেরে উঠছেন না। রতনদা নিজেও তা বুঝতে পারছেন।
ফাহিম রেজা জানালেন, রতনদা ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় তিনি ফাহিম রেজা নূরকে হাতে ধরে অনুরোধ করে দায়িত্ব দিয়েছেন, বাংলানিউজের এ প্রতিনিধির মাধ্যমে তার তিনটি অন্তিম ইচ্ছার কথা যেন প্রকাশ করা হয়!
এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, বাংলানিউজেই যেন তার মৃত্যুর প্রথম খবর ছবিসহ ছাপা হয়। দ্বিতীয় ইচ্ছা হচ্ছে- মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেন তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিদায় জানানো হয়। আর তার তৃতীয় ইচ্ছাটি হলো- নিউইয়র্কে তার জীবদ্দশায় তিনি প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি লাশ সৎকারে ও দেশে পাঠাতে নিরলস সাহায্য করেছেন। তার সেই মানবিক কাজের স্বীকৃতির তিলক যেন মৃত্যুর পর তার কপালে এঁকে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অন্য কোনো বাঙালির হাতেই যেন তার এ কর্মের রেকর্ড ভঙ্গ হয়।
তিনি এটাও বলেছেন, এর আগে বাংলানিউজে প্রকাশিত তার একটি খবর নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি অনুভব করছেন, তার মৃত্যুর খবরটি যেন প্রথম বাংলানিউজেই ছবিসহ ছাপা হয়।
বাংলানিউজ প্রতিনিধি এ খবর জানার পর হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা রতন বড়ুয়ার সঙ্গে কথা বললে নীরব কান্নার অশ্রুতে খুবই ক্ষীণ কণ্ঠে রতন বড়ুয়া তার ইচ্ছার কথা পুনর্ব্যক্ত করে শুধু বললেন, ‘কোনো কষ্ট দিয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। ’
বাগবিতণ্ডার ঊর্ধ্বে স্বল্পভাষী, পরোপকারী, নিরহঙ্কারী, মানবাধিকার কর্মী ও ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা রতন বড়ুয়া প্রবাসীদের সবার কাছেই ছিলেন প্রিয়মুখ।
রতন বড়ুয়া বর্তমানে জ্যামাইকা হাসপাতালের ৪র্থ তলায় ‘হসপিস’এলাকায় ৫ নম্বর কক্ষে রয়েছেন। মানবকল্যাণে চিরকুমার এই মানুষটিকে দেখার জন্য এবং তার জন্য প্রার্থনায় তার ভাইয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে সব প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রতন বড়ুয়ার ফেসবুক প্রোফাইল- https://www.facebook.com/ratan.barua.58
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৪