নিউইয়র্ক: অবশেষে মুসলমানদের উপর গোপনে নজরদারির বিতর্কিত পুলিশি কর্মসূচি বন্ধ হয়েছে নিউইয়র্কে।
তবে সহসাই বন্ধ হচ্ছে না মুসলমানদের ওপর হয়রানি বন্ধের সব পথ।
গোপনে নজরদারি বন্ধ হলেও এখন থেকে সরাসরি পুলিশ স্টেশনে ডেকে এনে অথবা কমিউনিটি লিয়াজো’র মাধ্যমে সন্দেহভাজনদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হলেও মুসলমানদের ওপর নজরদারির বিরুদ্ধে মামলাকারী সংগঠনগুলো সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মুসলমানদের অযথা হয়রানি বন্ধে অন্তত কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসলো উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘পরবর্তী কর্মকাণ্ড ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই বোঝা যাবে মুসলমানদের অযথা হয়রানি বন্ধে আসলে কতটা নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে প্রশাসন। ’
নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, মুসলমানদের টার্গেট করে নজরদারির বিশেষ ইউনিটকে ভেঙ্গে দিয়েছে। মুসলমানদের উপর গোপনে নজরদারির কর্মসূচি বন্ধ করা হয়েছে।
১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর নিউইয়র্ক পুলিশের ‘ডেমোগ্রাফিক ইউনিট’ অথবা ‘জোন এসেমেন্ট ইউনিট’ গঠনে সহায়তা করেছিলেন সিআইএ’র একজন সাবেক কর্মকর্তা। নিউইয়র্ক জুড়ে মুসলমান ও মুসলমান মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদে নজরদারিতে তারা সক্রিয় ছিলেন বলে স্বীকার করেছে ইউনিট দু্টো।
নাগরিক অধিকার ও যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সংগঠনগুলো শুরু থেকেই এই কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করে আসছে। পরবর্তীতে এর বিরুদ্ধে মামলাও করে তারা।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে নতুন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিল ডি ব্লাজিও নগরীর নতুন পুলিশ কমিশনার হিসেবে বিল ব্রাটনকে নিয়োগ দেন। তিনি দায়িত্ব নেবার পরপরই এই সিদ্ধান্ত নিলো নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।
তবে গত জানুয়ারি মাস থেকেই ইউনিটটি নিষ্ক্রিয় রয়েছে বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দাবি করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘ঐ ইউনিটে দায়িত্বরতদের গোয়েন্দা বিভাগেরই অন্য দায়িত্বে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ’
মুসলমানদের উপর নিউইয়র্ক পুলিশের এই গোপন নজরদারিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করে আদালতে মামলা করে নিউইয়র্কের নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ গ্রুপ ‘মুসলিম এডভোকেটস’ এবং ‘সেন্টার ফর কনিস্টিটিউশনাল রাইটস’।
নিউইয়র্ক পুলিশের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে তারা বলেছে, নজরদারি ইউনিটকে ভেঙ্গে দেয়ায় তারা সন্তুষ্ট তবে নজরদারি যে বন্ধ হয়েছে,তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
‘মুসলিম এডভোকেটস’ এবং ‘সেন্টার ফর কনিস্টিটিউশনাল রাইটস’ তাদের যুক্ত বিবৃতিতে আরো বলেছে, ইউনিটটি ভেঙ্গে দেয়ায় সন্দেহের বাইরে থাকা মুসলিম কমিউনিটির উপর নজরদারির প্র্যাকটিস বন্ধ হলো।
তবে, নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট সম্পূর্ণ ও চূড়ান্তভাবে মুসলিম কমিউনিটির অধিকারকে সম্মান না করা পর্যন্ত আইনগত প্রক্রিয়ায় অধিকার রক্ষায় কর্মকাণ্ডকে সমর্থনের বিষয়টি অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছে তারা।
নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাসান নামের ব্যক্তির মামলাটি ফেব্রুয়ারিতে খারিজ করে দেয় আদালত। বর্তমানে তা আপিল বিভাগে রয়েছে।
এদিকে কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন নিউইয়র্ক চ্যাপ্টার নজরদারি বন্ধের বিষয়ে বলেছে,‘এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। ’
সংগঠনের বোর্ড সভাপতি রায়ান মোহনী বলেছেন, ‘সম্পূর্ণভাবে ধর্ম পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে গোয়েন্দাবৃত্তি সংবিধান বহির্ভূত। তাই বিষয়টি অবশ্যই আমলে নিতে হবে। ’
মেয়র ব্লাজিও মঙ্গলবার (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের প্রশাসন নগরকে নিরাপদ রাখতে একটি ‘পক্ষপাতহীন’ এবং ‘সম্মানীয়’ পুলিশ বাহিনীর প্রতিশ্রুতি দেয়।
পুলিশ ও তাদের সহযোগী কমিউনিটিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে এই সংস্কার একটি অগ্রসরমূলক পদক্ষেপ।
সুতরাং আমাদের পুলিশ এবং নাগরিকরা অপরাধীদের ধরতে একে অন্যকে সাহায্য করতে পারে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ব্রাটন দেশের বৃহত্তম এই পুলিশ বাহিনীর স্টিয়ারিং হাতে নেন। আগের কমিশনারের আমলে অপরাধ কম থাকলেও তার নীতির কারণে নগরীর নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো।
দায়িত্ব গ্রহণের সময় ব্রাটন আশ্বাস দিয়ে বলেন তিনি পুলিশ ও নাগরিকদেরকে পারস্পরিক সম্মান ও আস্থায় একত্রিত করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৪