ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

ভারতীয় উপমহাদেশকে পাল্টে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

শিহাবউদ্দীন কিসলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৪
ভারতীয় উপমহাদেশকে পাল্টে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

নিউইয়র্ক: বিশাল তেল, গ্যাস এবং হাইড্রো পাওয়ার (পানি শক্তি) সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়া। আর দক্ষিণ এশিয়া জ্বালানিনির্ভর।

এখানে জ্বালানি চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়ছেই। এ বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়েই অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরো ভারত উপমহাদেশকেই বদলে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ফরেন রিলেশন কমিটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ও নিকটপূর্ব এশিয়া বিষয়ক সাব-কমিটির শুনানিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী মন্ত্রী ফাতেমা জি সুমার এসব কথা বলেছেন। গত বুধবার এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

ফাতেমা জি সুমার বলেন, ‘নিউসিল্ক রোড’ পরিকল্পনায় দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযোগ স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগ নিয়েছে। আঞ্চলিক জ্বালানি বাজার তৈরি, ব্যবসায় ও পরিবহন খাতে সড়কের উন্নয়ন, কাস্টমস ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার সংস্কার করে নতুন আঞ্চলিক এ বাজারের সঙ্গে জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করাই ‘নিউ সিল্ক রোড’ এর লক্ষ্য।

এক্ষেত্রে আঞ্চলিক ব্যবসায়ী ফোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ কাজাকস্তান, কিরগিস্তান ও পাকিস্তানের মতো এ অঞ্চলে ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার অগ্রগতি অর্জন করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরির উদ্ধৃতি দিয়ে ফাতেমা সুমার আরো বলেন, ‘নিউ সিল্ক রোড’ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে চারটি।

প্রথমত: আঞ্চলিক জ্বালানি বাজার তৈরি করা, যেখানে জ্বালানিনির্ভর দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্য এশিয়ার উদ্বৃত্ত জ্বালানি ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত: এ অঞ্চল জুড়ে ব্যবসায় ও পরিবহন সড়কের উন্নয়ন। তৃতীয়ত: ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে কাস্টমস ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং চতুর্থত: নতুন আঞ্চলিক এ বাজারে ব্যবসার সঙ্গে জনসমষ্টিকে সম্পৃক্ত করা।

যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই একা এ কাজটি করছে না বরং এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলোকে নিয়েই অন্যদের সঙ্গে কাজ করছে। এ কর্মসূচি ‘ইস্তাম্বুল প্রক্রিয়া’র মতো আঞ্চলিক অগ্রাধিকারগুলোকে সহায়তা করবে বলে মনে করেন ফাতেমা সুমার।

শুনানিতে তিনি আরো বলেন, বিশাল তেল, গ্যাস এবং হাইড্রো পাওয়ার’এ সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়া। অন্যদিকে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষের দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা বাড়ছেই। আঞ্চলিক জ্বালানি বাজার তৈরিতে সহায়তা করতেই যুক্তরাষ্ট্র সিএএসএ-১০০০, টিইউটিএপি এবং টিএপিআই (CASA-১০০০, TUTAP এবং TAPI) এর মতো বহুমুখী প্রকল্পগুলোতে সহায়তা দিচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংকের সিএএসএ-১০০০ প্রকল্পের মাধ্যমে তাজাকিস্তান ও কিরগিজস্তানের উদ্বৃত্ত ১৩’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে নেয়া সম্ভব হবে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের টিইউটিএপি প্রকল্পে একইভাবে তুর্কেমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে নেয়া সম্ভব হবে। এই প্রথমবারের মতো জ্বালানিনির্ভর দক্ষিণ এশিয়ায় জ্বালানি চাহিদা মিটবে এবং এর অনেকটাই ‘ক্লিন’ বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তুর্কেমেনিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনে সহায়তা দিচ্ছে।

‘টিএপিআই’ এর সফল বাস্তবায়ন হলে সিনেটর কেইন’র মতে, সমগ্র ভারত উপমহাদেশের জন্য এটা হবে ‘গেম চেইঞ্জার’ বা ভারত উপমহাদেশকে বদলে দেবার প্রকল্প।

ব্যবসায় ও পরিবহনের ক্ষেত্রে আইনগত ও নিয়মতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্ক এর উন্নয়ন এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া দেশগুলোকে বহুমাত্রিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে এবং পারস্পারিক সহযোগিতায় জটিলতর পদক্ষেপে প্রতিবেশীদের সাথে একত্রে কাজ করতেও সহায়তা করছে।

ফাতেমা সুমার বলেন, কাস্টমস ও সীমান্তের ক্ষেত্রে গতিশীল বাজার তৈরিতে ব্যবসায়-ট্রানজিট করিডোর প্রয়োজন।

সীমান্তে সময়ের বিলম্ব কমাতে, প্রধান প্রধান চেক পয়েন্টে সহযোগিতা বাড়াতে, অবৈধ ও মারাত্মক দ্রব্যাদির পরিবহন রুখতে আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য, এ অঞ্চলে উন্মুক্ত ও নিরাপদ সীমান্ত।

ইতোমধ্যেই ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৫ বছরে মধ্য এশিয়ায় আন্তঃআঞ্চলিক ব্যবসা ৪৯ ভাগ বেড়েছে। গত ৩ বছরে সীমান্ত পারে ব্যয় কমেছে ১৫ ভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহায়তায় আফগানিস্তানের সীমান্তে ব্যবসা দ্রুত লাভ করেছে।

তিনি বলেন, সর্বোপরি আঞ্চলিক সম্পৃক্ততার মূলে হলো ব্যবসার সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা। মধ্য এশিয়ায় পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরিতে মধ্য এশিয়া ও আফগান নারীসহ শতশত শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষাদানে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তা, বেসরকারি খাতের অংশীদার ও সরকারকে একসঙ্গে আনতে নারী সিম্পোজিয়াম সফলতা পেয়েছে।

পাশাপাশি আঞ্চলিক ব্যবসায়ী ফোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশেসহ কাজাকস্তান,কিরগিস্তান ও পাকিস্তানের মতো এ অঞ্চলে ব্যবসায়িক সংযোগ স্থাপনে সত্যিকার অগ্রগতি অর্জন করছি।

তিনি বলেন, কীভাবে একুশ শতাব্দীতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশীদার হতে পারে এবং ব্যবসায়িক সাফল্যেও সুবিধা পেতে পারে সে লক্ষ্যেই নতুন এই ‘নিউসিল্ক রোড’ উদ্যোগ একটি শক্তিশালী স্বপ্ন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ০১ মে, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ