নিউইয়র্ক: শ্রমজীবী মানুষের অবদানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবারকে লেবার ডে উইকেন্ড ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিষদ। এরপর ১শ’ ২০ বছর কেটে গেলেও দেশটির শ্রমজীবী মানুষের বর্তমান চিত্র খুব একটা সুখকর নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এখনও শ্রমজীবী মানুষের বার্ষিক গড় আয়, ইউনিয়ন করার অধিকার , কাজের সময় সূচি , বেকারত্ব , নারী পুরুষের বৈষম্য ,সর্বোপরি জীবন যাত্রার মান প্রশ্নবিদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব লেবার ও বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনেই এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪০.৮ মিলিয়ন। তাদের মধ্যে ১১.৭ মিলিয়ন অভিবাসীই অবৈধ। এই শ্রমিকদের শতকরা ২৫ ভাগ কৃষি শ্রমিক।
লেবার ডে উইকেন্ড উপলক্ষ্যে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৩ সালের মে মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ১৫৫.৭ মিলিয়ন। এর মধ্যে ২০১২ সালে ৪ মে পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা ৮৬ মিলিয়ন। ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮.৯ মিলিয়ন মানুষ সোস্যাল সিকিউরিটি ও ডিজেবিলিটি কর্মসূচিতে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে, যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ লক্ষ ২ হাজার যুদ্ধফেরত নাগরিক বেকার।
এছাড়া এখনও সেখানে রয়েছে নারী পুরুষ বৈষম্য। ২০১২ সালের হিসেবে ফুল টাইম চাকুরে নারী শ্রমজীবীর বার্ষিক আয় ৩৭ হাজার ৭৯১ ডলার, অপরদিকে পুরুষেরা আয় করেন ৪৯ হাজার ৩৯৮ ডলার।
মূলত ১৮৯৩ সালে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার তিক্ত অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে ১৮৯৪ সালের ৩ জুন কংগ্রেসের দু’টি কক্ষেই সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবারকে শ্রমিক ছুটি দিবস হিসেবে আইন পাশ করা হয়।
এর আগে ১৮৮৫ ও ১৮৮৬ সালে মিউনিসিপ্যালিটি অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে প্রথম সরকারিভাবে লেবার ডে ছুটি স্বীকৃতি পায় । পরবর্তীতে আন্দোলনের মাধ্যমে ১৮৮৭ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রথম অরিগন রাজ্যে ও একই বছর পর্যায়ক্রমে কলারাডো , ম্যাসাচুসেটস, নিউজার্সি ও নিউইয়র্কে এই আইন পাশ হয়। পরে কানেকটিকাট, নেব্রাস্কা ও পেনসিলভানিয়া রাজ্য এ নিয়ে মামলা করে। তবে ১৮৯৪ সালে ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া ( ওয়াশিংটন ডিসি)সহ অন্য ২৩টি রাজ্য সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবারকে শ্রমজীবীদের ছুটির দিন হিসেবে আইন পাশ করে। সেই থেকে দিনটি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবীদের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ছুটির দিন হিসেবে অভিহিত হয়ে আসছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নারী শ্রমজীবীদের অবস্থান এখনও প্রান্তিক। বিখ্যাত ফরচুন ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী ফরচুন ৫শ’ প্রধান নির্বাহী পদের মাত্র ৪.৮ ভাগ এবং ফরচুন ১ হাজার শীর্ষ নির্বাহী পদের শতকরা ৫.২ভাগ নারীদের দখলে।
এছাড়া গত এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সকল কর্পোরেট বোর্ডে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১২.১ থেকে ১৩.৩ ভাগে আটকে রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেতা ও গ্রাহকদের ব্যয়ের ৮০ ভাগই নারীদের নিয়ন্ত্রণে কিন্তু,সৃজনশীল কর্ম পরিচালনায় ও বিজ্ঞাপন ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা মাত্র ৩ ভাগ।
তবে এ পরিস্থিতির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রে ভালো করছেন এশীয় বংশোদ্ভূত নারীরা। ২০১৩ সালে ফুলটাইম বেতনভুক্ত সাপ্তাহিক মধ্যম আয়ের হিসেবে সকল বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীর নারীদের মধ্যে এশীয় নারীরা সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছেন । এমনকি তারা আফ্রিকান আমেরিকান ও ল্যাটিনো আমেরিকান পুরুষদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ সময়:২০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৪