নিউইয়র্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেন্ট্রাল পার্কের বক্তৃতায় বাংলাদেশের অর্জন সমূহ তুলে ধরে গণমূখী, বিশ্ববান্ধব গঠনমুলক টেকসই উন্নয়নের অন্তরায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বের কাছে সাহায্যের আহবান জানাবেন।
৬০ হাজার লোকের এই সমাবেশে শেখ হাসিনা তার ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্রমুক্তির স্বপ্ন ছড়িয়ে বাংলাদেশের সফলতার গল্প তুলে ধরার মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে এক ইতিবাচক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরবেন ।
২০ মিলিয়ন লোক সরাসরি সে অনুষ্ঠান দেখবে। আর ৪০০ মিলিয়ন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারে তা শেয়ার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, সেই বক্তব্যই ফুটে উঠবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণে।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক পৌঁছার প্রাক্কালে এসব কথা জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত ড.এ.কে আব্দুল মোমেন।
বাংলানিউজের সাথে আলাপচারিতা ড. মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২৭ সেপ্টেম্বর দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন। ওই দিন স্থানীয় সময় মধ্যাহ্নের দিকে বৈঠকটি হবে এমনটাই নিশ্চিত করেন তিনি।
ড. মোমেন বলেন বৈঠকটি আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় এবং এ বৈঠকের চুড়ান্ত প্রস্তুতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফর করছেন।
নিউইয়র্কেও দুই দেশের মিশনের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচী নিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় । রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্লোবাল সিটিজেন ফর প্রোভার্টি রিডাকশন এর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এই ‘বিরল সম্মান’র বিরোধীতা করে একটি গোষ্ঠী ইমেইল ক্যাম্পেইন করছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ‘মানবিক উন্নয়নের মডেল’ হিসেবে বাংলাদেশ যে অভুতপূর্ব সফলতা অর্জন করেছে , তার জন্যই গ্লোবাল সিটিজেন ফর প্রোভার্টি রিডাকশন এর আয়োজকরা প্রধানমন্ত্রীকে উন্মুক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এমডিজি’র সাফল্যের পর ২০১৫ উত্তর উন্নয়ন এজেন্ডা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রতিপাদ্যে জাতিসংঘের এবারের অধিবেশন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য বিশেষ দিক নির্দেশনা হিসাবে গুরুত্ব পাবে বলে জানান ড. মোমেন।
২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মত এবারও বাংলায় বক্তৃতা দেবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গৃহীত কার্যক্রমসমূহ, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতি এবং অধিবেশনের প্রতিপাদ্য বিষয় ২০১৫-পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান ও অবদানের কথা তুলে ধরবেন।
এছাড়া নিউইয়র্কে তিনি ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিবেন।
এবছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মিশন। এতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ছাড়াও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে জাতিসংঘ সূত্র জানিয়েছে, শেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত এবারের অধিবেশনে ৯৫ জন প্রেসিডেন্ট, ৪৫ জন প্রধানমন্ত্রী, ২ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১ জন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং ৫০ জন মন্ত্রী অংশ নিচ্ছেন।
একই সঙ্গে ১শ‘ ৯৩টি সদস্য দেশের উ”চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিস্তারিত কর্মসূচি হচ্ছে-
২৩ সেপ্টেম্বর সকালে জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক সেমিনার, বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি এসএএম খামবা ফুটেসার সঙ্গে বৈঠক, ও সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামার নৈশভোজে অংশগ্রহণ।
২৪ সেপ্টেম্বর সকালে জাতিসংঘ মহাসচিবের অভ্যর্থনায় যোগদান ও সাধারন অধিবেশনের উ”চ পর্যায়ের আলোচনা পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। এরপর বেলারুসের প্রধানমন্ত্রী মিখাইল ভি মায়াসিনকোভিচের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠক, দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ, বিকেলে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন এর সঞ্চালনায় ‘এডুকেশন ফার্স্ট ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক হাই লেভেল বৈঠকে যোগদান ।
২৫ সেপ্টেম্বর মধ্যাহ্নে আমেরিকান চেম্বার ও আমেরিকান বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক বিকালে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্ভাব্য বৈঠক, সন্ধ্যায় নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার ও ড. ফ্রেড আর ভলকমারের সঙ্গে পৃথক পৃথক সম্ভাব্য বৈঠক।
২৬ সেপ্টেম্বর সকালে পিস কিপিং সামিটে কো-চেয়ার হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ছাড়াও জাপান ও রুয়ান্ডার প্রধানমন্ত্রী, এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কো-চেয়ার থাকার রয়েছে। বিকালে বাংলাদেশের জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের অনুষ্ঠানে যোগদান ও প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উম্মোচন । এতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ছাড়াও যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। এদিনই বিকাল ৫ টায় জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে সংবাদ সম্মেলন করবেণ প্রধানমন্ত্রী।
২৭ সেপ্টেম্বরসকালে জাতিসংঘ সাধারন অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ। এদিন মধ্যাহ্নে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কে গ্লোবাল পোভার্টি প্রোজেক্ট আয়োজিত গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভালে অংশ নেনবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে দক্ষিণ এশিয়ার স্বাস্থ্য, নিরাপদ জীবন-যাপন এবং নারীর ক্ষমতায়নের উপর বক্তব্য দিবেন। রাতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের উদ্যোগে সর্বজনীন নাগরিক সম্বর্ধনায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থায়ী প্রতিনিধি মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান, ইকোনমিক এ্যাডভাইজার বরুন দেব মিত্র ও ডিফেন্স এ্যাডভাইজার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম আখতারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন মিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মামুন-অর-রশিদ।
বাংলাদেশ সময় ১৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৪