ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিউইয়র্ক

বিশ্ব শান্তিরক্ষীদের স্যালুট জানালেন প্রধানমন্ত্রী

মাহমুদ মেনন ও শিহাবুদ্দীন কিসলু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪
বিশ্ব শান্তিরক্ষীদের স্যালুট জানালেন প্রধানমন্ত্রী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাতিসংঘ সদরদফতর থেকে: জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণ এখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল স্তম্ভ হয়ে উঠেছে।   তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার ডাকে বাংলাদেশ সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে, এমনটি কখনো ঘটেনি।



সদর দফতরের কনফারেন্স হলে এই সম্মেলনে কো-চেয়ার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, শান্তিরক্ষায় বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশ তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তিনি বলেন, তবে শান্তিরক্ষা দিনে দিনে আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় যারা জড়িত, তাদের জন্য বিষয়টি দিন দিন আরো জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তবে এর চাহিদাও ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী জাতিগত নিধন ও বৈষম্য, সহিংসতা রোধে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও সহিংসতা থেকে শান্তিতে উত্তরণ এবং দেশগঠনে কাজ করে যাচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যে সব সৈন্য ও পুলিশ দল জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের নির্বাহ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও উন্নততর প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হয়। তারা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে শান্তিরক্ষায় কাজ করেন।

যেহেতু, বাংলাদেশ অনেকদিন ধরেই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে আসছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতি নিয়ত শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী সৈন্য ও পুলিশদের প্রস্তুত রাখা হয়, আন্তর্জাতিক এই ফোরামে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের ডাক পাওয়া মাত্রই আমরা আমাদের দলকে ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল এই অভিযানে পাঠিয়ে দেই।  

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গত বছরের ডিসেম্বরের কথা স্মরণ করে বলেন, সেবার জাতিসংঘের মহাসচিব জরুরিভাবে শান্তিরক্ষী চাইলে  সাড়া দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা আমাদের দলকে দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাই।

শেখ হাসিনা জানান, দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ার টিমকে দক্ষিণ সুদানে নিয়োগ করে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আমরা স্বল্প সময়ের নোটিশে আমাদের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ও পুলিশ দলকে কঙ্গো থেকে দক্ষিণ সুদানে মোতায়েন করি।

মালি, পূর্ব কঙ্গো ও সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকে বাংলাদেশ দলকে নীল হেলমেটসহ মোতায়েন করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন বিদ্রোহী অধ্যুষিত সিয়েরা লিয়ন ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক কঙ্গোতে কোনো দেশই শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাতে রাজি হয়নি, তখন শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষকরা গেছেন। সেখানে তারা সফলভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনতেও সক্ষম হয়েছেন।

শান্তির সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, জাতিসংঘের ডাকে যে কোনো মুহূর্তে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে এবং শুধু তাই-ই নয়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একইভাবে সাড়াও দেবে।

এখন সময় দ্রুত মোতায়েন ও অভিযানে অংশ নেওয়ার; এখন সময় নাগরিকদের আরো বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করা; এখন সময় ঘাটতি পূরণ করে নিজেদের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করা। এ সবই হতে হবে একক বা যৌথভাবে ও সেই সঙ্গে নতুন অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।  

তিনি বলেন, পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ যে কোনো দেশ, সামরিক বাহিনী, ব্যক্তিকে সঙ্গে শান্তিমিশনে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে।

এ জন্য ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ অংশীদারদের সহযোগিতায় যে কোনো জরুরি মিশনে অংশ নিতে রাজি আছি।

বাংলাদেশ যে প্রশিক্ষিত এবং স্বাবলম্বী নারী পুলিশ দলও জরুরি মহূর্তে মোতায়েন করতে সক্ষম সে কথাও বিশ্ব ফোরামে জানিয়ে রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
 
তিনি বলেন, আমরা জরুরি দরকারে সামরিক প্লেন, হেলিকপ্টার স্বল্প সময়ের নোটিসে মোতায়েন করতে সক্ষম। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর পিস সাপোর্ট অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং (বিআইপিএসওটি) প্রতিষ্ঠা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি রক্ষায় যারা অংশ নিতে চান, তাদের এখানে প্রশিক্ষিত করার সুযোগ রয়েছে।

ইনস্টিটিউটটিকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন েএর ফলে বিশ্বের যারা অন্যদেশের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে আগ্রহী, তারা প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।

শান্তি রক্ষায় অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া ও প্রয়োজনে কৌশলগত সহায়তা বিনিময়ে বাংলদেশ সম্মত রয়েছে বলেও বিশ্ব নেতাদের জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য নাগরিক সুরক্ষা, নারীর অধিকার ও মানবাধিকার অধিকার সুরক্ষা। এগুলোকে শান্তিরক্ষা মিশনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বলে মনে করি। আমরা আমাদের শান্তিরক্ষা দলকে অন্যান্য ভাষাতেও দক্ষ করে তুলতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ব্র্যান্ড নেম। আমরা আমাদের পেশাগত দক্ষতা পুরোটুকুই শান্তিরক্ষায় উৎসর্গ করতে চাই। আমরা সব জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম-বর্ণ এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে শ্রদ্ধার চোখে দেখি।

বাংলাদেশের একশ ১৯ জন সন্তান বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, এ কথা গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও ঘোষণা করেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের শান্তিরক্ষা মিশনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সর্মথন রয়েছে। আমরা অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার হাতকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের যে বন্ধন রয়েছে, সেটিসহ অন্যান্য অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
 
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যারা শান্তিরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি আমার স্যালুট, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময় ২২১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪

** শান্তি সম্মেলনে কো-চেয়ার হাসিনা-বাইডেন-আবে-মুরেকেজি
** যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের মাঝে ভিশন ২০২১’র স্বপ্ন ছড়ালেন প্রধানমন্ত্রী
** দিনভর ব্যস্ততা হাসিনার, ফোকাস কমনওয়েলথে
** চ্যাম্পিয়ন শেখ হাসিনার ডাক, ‘অস্ত্র নয় শিক্ষায় অর্থ দিন’
** গার্মেন্টস শিল্পে ১৫ মিলিয়ন ডলার দেবে বেলারুস
** চরমপন্থার ক্যান্সার প্রতিরোধে এক হতে হবে
** সিট ছাড়বেন না, মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী
** পরস্পরের বক্তব্যের প্রশংসায় হাসিনা-ওবামা
** বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তিতে জোর দিলেন বারাক ওবামা
** বিরূপ জলবায়ু মোকাবেলায় লড়ছি, জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী
** ২০১৫ সালে অর্থবহ জলবায়ু চুক্তির আহ্বান জাতিসংঘে
** জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা শুরু মঙ্গলবার
** বিএনপির বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে আ’লীগের সমাবেশ
** নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
** জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ