জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন থেকে: ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে এবং সে লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে বলে বিশ্বনেতাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান সরকার জাতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এবং রূপকল্প-২০২১-এ এমডিজি’কে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই রূপকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম-আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত করা যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রে জনগণের অংশগ্রহণ আরও সুসংহত হবে।
তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এমডিজি-১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬ অর্জন করেছে অথবা অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক পথেই এগুচ্ছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ১৯৯১ সালের ৫৭ শতাংশ থেকে বর্তমানে ২৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে জিডিপি’র গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ। রপ্তানি আয় ২০০৬ সালের ১০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে গত অর্থবছরে ৩০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে- যা ৩ গুণ বেশি। প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণের পরিমাণ ২০০৬ সালের ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে - যা সাড়ে ছয় গুণ বেশি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের জন্য আমরা বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে দেশের দীর্ঘতম ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ে এবং রিভার টানেলসহ সড়ক-মহাসড়ক এবং রেলওয়ে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও এগিয়ে চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ভারত, চীন ও জাপানের মত বন্ধুরাষ্ট্রের সাথে এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অব্যাহত গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সারাদেশে ১৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, তরুণ-নির্ভর বাংলাদেশের জনসংখ্যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ২০৩১ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম থাকবে। আমাদের এই তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা অপরিহার্য। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সমসাময়িক তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর রাষ্ট্রের এবং জনগণের সক্ষমতা তৈরি করছি। বর্তমানে সাড়ে চার হাজারেরও উপর ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে জনগণ দু’শ’রও বেশি বিভিন্ন ধরণের সেবা গ্রহণ করছেন। ১৫ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন।
এসব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় সরকারি সেবা অত্যন্ত স্বল্পখরচে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ কোটি ৭০ লাখ মোবাইল সিম এবং ৪ কোটি ৮৪ লাখ ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ৭৮ শতাংশ মানুষের হাতে টেলিফোন সুবিধা পৌঁছেছে বলেও বিশ্ব নেতাদের জানান শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪