ঢাকা: বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বললেন বাংলাদেশের দু’টি প্রধান সংবাদপত্র দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন ও নঈম নিজাম। দেশের খ্যাতনামা এই দুই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এ কথা বলেছেন সুদুর নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের একটি কর্মসূচিতে।
সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য থাকলে তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর, এমন মত দিয়ে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘দেশে আজ মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, লেখক-সাহিত্যকেরা ভাগ হয়ে যাচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আর কখনোই তা কাম্য নয়। তিনি বলেন, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক দু’জনেই বিবেক নিয়ে কাজ করেন। তারা সমাজ তথা রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করেন। তাই তাদের একসঙ্গে থাকতে হবে’।
নঈম নিজাম অবশ্য অনৈক্যের জন্য বাংলাদেশে সাংবাদিক নেতাদেরকে কিছুটা দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যারা ইউনিয়ন সাংবাদিকতা তথা নেতৃত্ব দেন তাদের অনেকে কখনোই সাংবাদিকতা করেন নাই। কেউ কেউ অখ্যাত পত্রিকার সাংবাদিক। আর তাদের জন্য আমাদের ঐক্য হচ্ছে না। তারা ইউনিয়নের নেতা হয়ে বিরোধ জিইয়ে রাখেন’।
নিউইয়র্কে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংবাদপত্র’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন নিউইয়র্ক সফররত নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন ও দেশের সবচেয়ে বেশি কাটতির দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক ও টেলিভিশন টক শো’র পরিচিত মুখ নঈম নিজাম।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল আহসান। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক দর্পণ কবীর ও যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন লেখক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ, সাংবাদিক আনোয়ার হোসাইন মঞ্জু, মঈনুদ্দিন নাসের, লাবলু আনসার, কাজী শামসুল হক, আহমেদ মূসা, শরীফ শাহাবুদ্দিন, মুজাহিদ আনসারী, মীর শিবলী, তাওহীদুল ইসলাম, সঞ্জীবন কুমার, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাঈদ রহমান মান্নান ও তারেক হাসান। সেমিনারে ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার মনজুর কাদের।
সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে পড়ছেন বলে বাংলা সাহিত্যও আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র সম্পর্কে বক্তারা বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো আইনের খড়গ ‘মুক্ত সাংবাদিকতা’কে বাধাগ্রস্থ করে এমন মন্তব্য করে তারা আরও বলেন, দেশের সাংবাদিক সমাজকেও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে।
সাংবাদিকরাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে দেশ তথা সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেন, বলেও মত দেন তারা।
সেমিনারে ইমদাদুল হক মিলন আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা সমাজের বিবেক। তবে এখন তা অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। যখন মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাহিত্যক-সাংবাদিকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ছায়া তলে বিভক্ত হয়ে যেতে দেখি তখন আমি বুঝি আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। আজকের দিনে সেই সাহসী সাংবাদিকতা আর পাই না’।
তিনি বলেন, ‘একটি বিচিত্র সমাজে আমরা সববাস করছি। বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার জন্য আমাদের কিছু সৃজনশীল কিছু সাহসী মানুষ দরকার। সেই কাজটি করতে পারেন আমাদের সাংবাদিকরা’।
নঈম নিজাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সাহিত্য এবং সাংবাদিকতা দু’টি বিষয় গভীরভাবে জড়িত। নানা মত এবং পথ থাকবে। কিন্তু দেশের সংবিধান এবং চেতনার সঙ্গে কোনো বিরোধ থাকবে না। আমেরিকা যখন ইরাক বা আফগানিস্তানে যুদ্ধে যায়, তখন এখানকার মূল পত্রিকাগুলো সেসব দেশের নিরীহ মানুষের কথা বিস্তরভাবে লিখতে পারে না’।
‘লতিফ সিদ্দিকীর মতো মানুষ ও তাদের বক্তব্যের বিরোধিতা করা এবং আমাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সকল সাংবাদিককে এক হতে হবে। সব সাংবাদিককে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বেও থাকতে হবে’- বলেন নঈম নিজাম।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রথিতযশা ফটোসাংবাদিক আজিজুর রহিম পিউয়ের অকাল মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৪