শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানাতে প্রায় ১৪ হাজার মাইল দূর বাংলাদেশ থেকে আটলান্টিক মহাসাগড় পাড়িয়ে দিয়ে কুইন্সের ফ্লাশিংয়ে এসেছেন জেনে কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং অভিভূত হলেন এবং মুগ্ধ চিত্তে নিজ অফিসে স্বাগত জানালেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’র সম্পাদক নঈম নিজামকে।
অফিসের রিসেপশন থেকে নঈম নিজামকে সাথে নিয়ে নিজ চেম্বারে বসালেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং।
‘কংগ্রেসওম্যানের সাথে এই প্রথম একজন বাংলাদেশী সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হলেন যিনি কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে আসেননি কিংবা বিশেষ কোন কাজের তদ্বির করতেও বলেননি। এটিই ছিলো কংগ্রেসওম্যানের অভিভূত হওয়ার মূল কারণ’ বলছিলেন এসময় উপস্থিত অনেকেই।
রানা প্লাজা ধসের পর আমেরিকান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে হাত গুটিয়ে নিতে চেয়েছিল, সে সময় এই কংগ্রেসওম্যান ওয়ালমার্ট, গ্যাপসহ আমেরিকান এপারেল ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনসহ প্রধান প্রধান অমদানীকারক প্রতিষ্ঠানকে গত বছরের মে দিবসে চিঠি দিয়েছিলেন অবিলম্বে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে। যাদের রক্ত-ঘামে তৈরী করা পোশাক এনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করা হয়েছে, সেই সব শ্রমিকদের নিদারুন দু:সময়ে পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান গ্রেস মেং।
গ্রেস মেং ২১ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সরকারীভাবে উদযাপনের স্বার্থে কংগ্রেসে একটি বিল উঠিয়েছেন। বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের টেলিফোনে নানা ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং বকেয়া ট্যাক্সের কারণে তাদেরকে এক্ষুণি গ্রেফতার করা হবে বলে হুমকি দিয়ে বহু অর্থ গ্রাস করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এহেন প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে এমন একটি বিল উত্থাপন করেছিলেন এই কংগ্রেসওম্যান। তা যথারীতি পাশও হয়েছে।
নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন সিটিতে বাংলাদেশিসহ মুসলিম-আমেরিকানরা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের হামলায় লিপ্তদের পাকড়াও এবং মুসলিম-আমেরিকানসহ এশিয়ান ইমিগ্র্যান্টদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্যে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন নিউইয়র্ক থেকে ডেমক্র্যাটিক পার্টির নমিনেশনে জয়ী হওয়া এই কংগ্রেসওম্যান। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের সদস্যা গ্রেস মেং প্রবাসী বাংলাদেশীদের যে কোন প্রয়োজনে সাড়া দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের যে কোন সংকটের উত্তরণে মার্কিন প্রশাসনের সাথে দেন-দরবার করেন। এসব তথ্য উপস্থাপন করে নঈম নিজাম গভীর কৃতজ্ঞতা জানান কংগ্রেসওম্যানের প্রতি।
একইসাথে তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশের জন্যে নিরন্তরভাবে কাজের জন্য গোটা বাংলাদেশ তার প্রতি কৃতজ্ঞ বলেও উল্লেখ করেন নঈম নিজাম।
বহু দূরদেশের এই সম্পাদকের মুখে নিজের কাজের প্রশংসা শুনে যারপরনাই খুশী হন গ্রেস মেং। এ সময় গ্রেস মেং উল্লেখ করেন, ‘আমি বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের কর্মপরিবেশ নিরাপদ দেখতে চাই। কংগ্রেসে সহকর্মীদের সাথে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে যতটা সম্ভব কাজ করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, নিউইয়র্কে আমার নির্বাচনী এলাকার বাংলাদেশি-আমেরিকানরা সবসময় আমার পাশে রয়েছেন। এজন্যে আমি বাংলাদেশের জন্যে কাজে উৎসাহবোধ করি। ’
গ্রেস মেং বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা রয়েছে। সময় ও সুযোগ হলেই ঢাকা দেখতে যাবো। ’
এ সময় নঈম নিজাম তাকে বাংলাদেশের নকশী কাঁথা উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই কাঁথার মূল্য ২৫ ডলারের অধিক হওয়ায় কংগ্রেসওম্যান তা গ্রহণ করেননি।
একইদিন অপরাহ্নে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ার কংগ্রেসম্যান যোসেফ ক্রাউলির সাথে সাক্ষাত করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন নঈম নিজাম। বাংলাদেশের জন্যে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেসম্যান এবং প্রতিনিধি পরিষদের হুইপ যোসেফ ক্রাউলি। কংগ্রেসম্যান ক্রাউলিকেও ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্র“পের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নঈম নিজাম।
** ‘সাংবাদিকদের একাংশ দলকানা’
বাংলাদেশ সময় ১৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৪