নিউইয়র্ক: দৈনন্দিন ব্যস্ততা থেকে ছুটি নিয়ে একান্ত পারিবারিক সন্ধ্যায় টার্কি ভোজন ও বিধাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে মার্কিন মুলুকে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) উদযাপিত হয়েছে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’।
দিবসটি উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করেছেন প্রবাসী বাঙালিরাও।
আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে রোস্ট টার্কির সঙ্গে ক্যারেনবেরি সস, আলু (পটেটো স্টাফ), কর্ন (ভুট্টা), রুটি (ব্রেড) আর সিদ্ধ সবজিতে (ভেজিটেবল) ভুরিভোজ হয়েছে সবার।
আর সবাই পরস্পরকে মন থেকে বলেছে ‘হ্যাপি থ্যাংকস গিভিং’। কেউ সেলফোনে টেক্সটে প্রিয়জনদের ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছেন, ‘বন্ধুত্বের জন্য ধন্যবাদ’, ‘হ্যাপি থ্যাংকস গিভিং’। কেউ আবার সরাসরি সাক্ষাৎ করেই সারপ্রাইজ দিয়ে বলেছেন, ‘হ্যাপি থ্যাংকস গিভিং’।
উৎসব উদযাপনে এদিন আমেরিকানরা খাবার আগে টেবিলে প্রথমেই পরিবার পরিজনদের নিয়ে প্রার্থনায় বিধাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। এরপর পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ করে ভোজনে ব্যস্ত হন।
এদিন এখানকার সবচেয়ে বড় বিপণী বিতান মেসি’স তাদের ব্যবসা প্রসারে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থ্যাংকস গিভিং ডে প্যারেডের আয়োজন করে।
এছাড়া, শিশুদের জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রগুলোর ঢাউস বেলুন উড়িয়ে প্যারেড উদযাপন করা হয়। সারাবিশ্ব থেকে হাজারো মানুষ এ প্যারেড দেখতে নিউইয়র্কে আসেন। এবারের প্যারেডে স্নুপি, ড্রুপি, টেক ইঞ্জিন ইত্যাদি চরিত্রগুলো ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
এদিকে, বরাবরের মতো এবারও থ্যাংকস গিভিং ডে আমেরিকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কারণ, উৎসবের দিন ও উৎসবের পরদিন ব্ল্যাক ফ্রাইডে অর্থাৎ কালো শুক্রবার’র বিশেষ মূল্যছাড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বেচাকেনায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনি ও রোববারের আগের দিন শুক্রবার হওয়ায় সরকারি ছুটির দিন থ্যাংকস গিভিং ডে’র সঙ্গে মিলিয়ে শুক্রবারের ছুটিও নিয়ে নিয়েছেন অনেকে। এই লম্বা ছুটি নিয়ে নাগরিকদের একাংশ শহর ছেড়ে গাঁয়ের বাড়ি চলে যাওয়ায় কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম আবার স্থবির হয়ে পড়ে। এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে দু’দিনের বিশেষ মূল্যছাড় দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রেতা সমাগমের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
মজার বিষয় হলো, সারা যুক্তরাষ্ট্রে এখন এই থ্যাংকস গিভিং ডে এবং ব্ল্যাক ফ্রাইডে তে-ই বছরের সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়, যা ক্রিসমাসের মতো বড় ধর্মীয় উৎসবেও হয় না।
এই দু’দিনে বেচাকেনায় এমনও দৃশ্য চোখে পড়ে যে, গভীর রাতেও দোকানপাট খোলা রয়েছে। শতো শতো ক্রেতা পছন্দের জিনিসটি মূল্যছাড়ে কিনতে দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই। এমনকি প্রচণ্ড শীতেও কম্বল কাঁথা বালিশ নিয়ে অপেক্ষা করেছেন দোকান খোলার জন্য।
এ চিত্রের দৃশ্যপটে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চেহারাও বাদ যায়নি। তারাও রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে পছন্দের জিনিস নিয়ে ঘরে ফিরেছেন।
এয়ারলাইন ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ও থ্যাংকস গিভিং ডে ও ব্ল্যাক ফ্রাইডের প্রভাব লক্ষণীয়। থ্যাংকস গিভিং ডে’র আগের দিন বুধবার সারা বছরের সবচেয়ে ব্যস্ততম যানবাহন চলাচলের দিন হিসেবে চিহ্নিত।
থ্যাংকস গিভিং ডে’র ইতিহাসে বেশ কিছু বিতর্ক থাকলেও ইতিহাসটি এমন, আমেরিকার গোড়াপত্তনের শুরুতে ‘সিভিল ওয়ার’ পরবর্তী কঠিনতম বৈরি আবহাওয়া মোকাবেলা করে জীবিত থাকা খুবই অল্পসংখ্যক আমেরিকান নতুন করে জীবন শুরু করে এবং প্রথম চাষাবাদ শুরু করে। শস্য ফসলের উৎপাদনে জীবন-জীবিকার উপায় খুঁজে পায় সেই অল্পসংখ্যক মানুষ। তাই তারা প্রথম ফসল উত্তোলনকালে মিলিত হয়ে বিধাতাকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানায়। শস্য ফসল আর মাঠে চরা তিতপাখির মাংসে একত্রে রাতের আহার সারে সেই ছোট্ট আমেরিকান কমিউনিটি। সেদিন থেকেই থ্যাংকস গিভিং ডের প্রচলন।
তবে, থ্যাংকস গিভিং ডে’র সে দিন তারিখটি তথ্যভাণ্ডারে নির্দিষ্টভাবে খুঁজে না পাওয়ায় নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের বৃহস্পতিবারটিকেই এ দিবস উদযাপনের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ আদি-আমেরিকানদের উৎসব থেকে আধুনিক আমেরিকানদের শত বছরের ইতিহাস আর সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৪