মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সি জয়ে একটা টাকার খেলা চলে। যার গাঁটের জোর যত বেশি তার জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তবে ১ মিলিয়ন কিংবা তারও বেশি যাদের সম্পদের পরিমাণ এমন দু’জন হচ্ছেন ২৯তম প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি হার্ডিং ও ২৫তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলে। এরা দু’জনই ছিলেন রিপাবলিকান দলের। হার্ডিং হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলে তার প্রেসিডেন্সির অন্ত হয় প্রেসিডেন্সির তৃতীয় বছরেই। একটি সংবাদপত্রের মালিকানাই ছিলো তার আয়ের প্রধান উৎস। আর ম্যাককিনলের চলতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে বেতন পেতেন তাই দিয়ে। তবে মেয়াদের পুরো পাঁচ বছর পার হওয়ার আগেই সাড়ে চার বছরের মাথায় ম্যাককিনলেকে হত্যা করা হয়।
দুই মিলিয়ন ডলার প্লাস সম্পদের অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টর তালিকায় রয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের ফ্র্যাঙ্কলিন পিয়ার্স। তিনি ছিলেন ১৪তম প্রেসিডেন্ট। তিনি বেশ সফল অ্যাটর্নি ছিলেন, নিউ হ্যাম্পশায়ারে কিছু জমি-জমাও ছিলো।
তিন মিলিয়ন ডলার প্লাস সম্পদের অধিকারীদের তালিকায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট ও রাদারফোর্ড বি হেইস। দু’জনই রিপাবলিকান। ২৭তম প্রেসিডেন্ট হাওয়ার্ড তার দীর্ঘ আইন ব্যবসা থেকে আয় করেছিলেন। রাদারফোর্ড হেইস ছিলেন ১৯তম প্রেসিডেন্ট। ওহাইওতে তার সহায় সম্পত্তি ছিলো আর অন্য অনেক প্রেসিডেন্টের মতো তিনিও ছিলেন এক সফল অ্যাটর্নি।
চার মিলিয়ন ডলারের ভাগ্য গড়ে গিয়েছিলেন মিলার্ড ফিলমোর। যুক্তরাষ্ট্রের ১৩তম এই প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে নিজ সম্পত্তি ছিলো। তিনি ছিলেন উইং পার্টির প্রেসিডেন্ট।
পাঁচ মিলিয়ন ডলার প্লাস সম্পত্তি ছিলো এমন দুই জন প্রেসিডেন্ট ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। এরা হচ্ছেন- ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেনজামিন হ্যারিসন ও নবম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন। রিপাবলিকান বেনজামিন হ্যারিসন ভাগ্য গড়েছিলেন আইন ব্যবসা থেকে। আর ইন্ডিয়ানায় তার মূল্যবান সম্পত্তিও ছিলো যা পিতামহের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছিলেন। উইংপার্টির উইলিয়াম হ্যারিসন যে ৫ মিলিয়ন ডলারের সম্পদের অধিকারী ছিলেন তাও ছিলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। মাত্র ২৩ দিনের প্রেসিডেন্সি ছিলো তার। একবার হিম শীতল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বক্তৃতা করে নিউমোনিয়ায় পড়েন আর মৃত্যু তাকে কোলে তুলে নেয়। তার সম্পত্তির অনেকটা স্ত্রীর পরিবার থেকেও আসে।
জ্যাকারি টেইলর ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বাদশ প্রেসিডেন্ট। উইং পার্টির এই নেতা প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বছরে গ্যাস্ট্রিকজনিত রোগেই ১৮৫০ সালে হঠাৎ মারা যান । তবে এর আগেই তিনি গড়ে রেখে যান ৬ মিলিয়ন ডলারের ভাগ্য।
জিমি কার্টার পড়েন ৭ মিলিয়ন ডলারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের দলে। দেশটির ৩৯তম এই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরও রয়েছেন ৩৮ তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রেসিডেন্সির আগে ডেমোক্র্যাট কার্টার ছিলেন বাদাম চাষী। তবে তার মূল অর্থের যোগান আসে প্রেসিডেন্সির পরে বই লিখে। জেরাল্ড ফোর্ডও তার ৭ মিলিয়ন ডলারের ভাগ্য গড়েন বই বিক্রির অর্থে। প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করার পর দায়িত্ব পান ৩৮তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ফোর্ড। মজার ব্যাপার হলো এই তালিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও কিন্তু তার বেস্ট সেলার বইগুলোর বিক্রি থেকে এসেছে। মুক্তবিশ্বের এই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট একাধারে একজন উচ্চ পর্যায়ের ব্যাংকারও। যা থেকে বর্তমানে বছরে ৪ লাখ ডলার আয় করছেন। তবে তার ৭ মিলিয়ন ডলারের ভাগ্য গড়ে উঠেছে বই বিক্রির অর্থে।
ডিউইট আইজেনহাওয়ার রিপাবলিকান দলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪তম প্রেসিডেন্ট হন ১৯৫৩ সালে। তিনি ছিলেন একজন নামকরা মিলিটারি কমান্ডার ও কলাম্পিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট। তবে তার মূল আয় আসে পেনসিলভানিয়ায় তার বিপুল সহায় সম্পতি থেকে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ৮ মিলিয়ন ডলার ক্লাবের বাসিন্দা।
১০ মিলিয়ন ডলার ক্লাবের সদস্য হয়ে আছেন ১১তম প্রেসিডেন্ট জেমস কে পোল্ক। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অবদান প্রায়শই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়না। তবে তার সময়ই দেশ মেক্সিকোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করে, দেশের খাঞ্জাঞ্চিখানা পুনস্থাপিত হয়, শুল্ক হার হ্রাস পায়। বেশ জমি জমার মালিক ছিলেন এই ডেমোক্র্যাট। ফলে ১০ মিলিয়ন ডলারের ভাগ্য তিনি গড়ে রেখে যান।
পরের পর্বে পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের ধনী প্রেসিডেন্টরা: ১১ থেকে ৯৮ মিলিয়ন সম্পত্তি যাদের
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৬
এমএমকে/