যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ৬৫ হাজার এইচওয়ানবি ভিসা ইস্যু করে, যা বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাজ করতে অনুমতি দেয়। কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন বক্তৃতায় অভিবাসন আইনে আরও সীমাবদ্ধতা আনার লক্ষণ দেখা যাওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা শংকার মুখে।
ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি ও অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের কাছে অনেকটা ত্রাতার ভূমিকা নিয়েছে পিপলএনটেক। প্রায় বার বছর ধরে চলে আসা প্রতিষ্ঠানটি আইটি ট্রেইনিং ও জব প্লেসমেন্ট দিয়ে আসছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। মার্কেট ট্রেন্ডের সঙ্গে মোস্ট আপ টু ডেট ট্রেনিং এবং প্রজেক্টের সঙ্গে কাজ করাই এই সাফল্যের মূল মন্ত্র। বিগত এক যুগে এ কোম্পানির সাফল্য পাঁচ হাজার জব প্লেসমেন্ট বলে দাবি তাদের।
আইটি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা এ প্রতিষ্ঠান গত ১২ বছর ধরে মার্কিন মুলকে বাঙালিকে ‘অড জব’ থেকে বের করে এনে মেইনস্ট্রিমে ভূমিকা রাখতে সাহায্য করছে। দেশের শান্তির জীবন থেকে উঠে এসে যখন ইমিগ্রেন্টদের যুক্তরাষ্ট্রের যান্ত্রিক জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় কিংবা দেশের ডিগ্রি বা উচ্চপদস্থ চাকরির অভিজ্ঞতা বৃথা যায়, তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় পিপলএনটেক।
‘নো মোর অড জব’ এই স্লোগানে বিগত ১২ বছরে এই পর্যন্ত পাঁচ হাজার মানুষকে চাকরির সহায়তা দিয়েছে বলে জানান পিপলএনটেকের সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ।
১২ বছর আগে নিজের জীবন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে আর একজন বাঙালিরও যেনো অড জব করতে না হয়, এই প্রত্যয় নিয়ে নিজের বাসার বেজমেন্টে গুটিকয় শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করেন পিপলএনটেকের পথচলা। আজকের পিপলএনটেক দেশে-বিদেশে সাতটি ক্যাম্পাসে বছরে প্রায় এক হাজার জনকে হাতে-কলমে আইটি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
ইঞ্জিনিয়ার হানিপ বলছেন, পিপলএনটেক এক অসম্ভবকে সম্ভব করার নাম, বাঙালির জয়ের নাম।
হানিপ বলেন, পিপলএনটেকের সাফল্যের মূল মন্ত্র হচ্ছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের অত্যাধুনিক টেকনোলোজির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন কোর্স এবং প্রজেক্ট অরিয়েন্টেড উপায়ে প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের করে তোলে পারদর্শী।
লাভজনক ব্যবসা কীভাবে উন্নয়নমূলক কাজে লাগানো যায় তা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়র হানিপ। তাই বেসিক লেভেলের কম্পিউটার কোর্স সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য।
তিনি জানান, দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে আর কেউ অডজব করবে না। যুক্তরাষ্ট্র কেন ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার জব মার্কেটের জন্যও নিজেদের যোগ্য করে নিয়ে তবেই অভিবাসী হতে পারবেন বাংলাদেশিরা। আর সেসব কাজ কোনো ফ্রেশার লেভেলেরও হবে না। সরাসরি মিড লেভেল কিংবা হাই লেভেল জব পাবেন তারা। আমেরিকান বা ইউরোপীয় ড্রিম তাদের কাছে সত্যি হয়ে ধরা দেবে। সরাসরি সিক্স ডিজিট আর্নার হয়ে উঠবেন বাংলাদেশিরা। কাজ করবেন এসব দেশের মূলধারায়।
আবুবকর হানিপ বলেন, এটা কোনো স্বপ্ন ছড়ানো নয়, এটাই বাস্তবতা। আর পিপলএনটেক এখন সে কাজটিই করছে। আইটি রিলেটেড চাকরিতে ফ্রেশার শব্দটিকেই তুলে দিতে চায় পিপলএনটেক।
পিপলএনটেক’র গ্রাজুয়েটরা মূলত কাজের পরিবেশের মধ্যে শেখেন। এখানে ক্লাসরুমটিকেই সাজানো হয় কোনো আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগের আদলে। ফলে কেউ যখন এখানে প্রশিক্ষণ নেন তখন তারা মূলত প্রশিক্ষকের কাছে নয়, শেখেন সহকর্মীর কাছ থেকে। ফলে তারা প্রশিক্ষণ শেষ করেই দক্ষকর্মী হয়ে ওঠেন।
সেখানে গ্রাজুয়েটরা প্রশিক্ষণ শেষ করেই সিক্স ডিজিটের কাজ পেয়ে যাচ্ছেন।
বছরে এক লাখ ডলারের কাজ যেকোনো আমেরিকানের জন্য ‘ড্রিম জব’। পিপলএনটেকের গ্রাজুয়েটরা সেই কাজই পাচ্ছেন। যা এখন বছরে দুই লাখ ডলারও ছাড়িয়েছে, জানান আবুবকর হানিফ।
পিপলএনটেক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে ভার্জিনিয়া ও নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত দু’টি সেন্টার থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ৩৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ৩৩ জন, এপ্রিলে ৩৪ জন, মে মাসে ৩৮ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪২ জন, আগস্টে ৩৬ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৩ জন, অক্টোবরে ৩৮ জন ও নভেম্বরে ৪১ জনের জব প্লেসমেন্ট হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারগুলোতে এখন বাংলাদেশি ছাড়াও অন্য দেশের অভিবাসীরা কিংবা খোদ আমেরিকানরাও এ প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের স্বপ্নের চাকরি খুঁজে নিচ্ছেন। তবে ঢাকার সেন্টার থেকে শতভাগ বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টদের সুবিধা দেওয়া সম্ভব।
যারা ইমিগ্র্যান্টদের স্পাউস, কিংবা ভাইবোন, এমনকি মা-বাবা হিসেবেও যারা যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন তাদের এই সুযোগটি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাতে তারা যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে আর কোনো অড জব খুঁজতে যাবেন না। তারা সরাসরি আইটি এক্সপার্ট হয়ে সেখানে যাবেন। আর ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষণ নিয়েই ঢুকে পড়তে পারবেন কাজের জগতে।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করার জন্য যাচ্ছেন এমন শিক্ষার্থী, কিংবা উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যাচ্ছেন এমন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও এ প্রশিক্ষণটি নিয়ে গেলে সেখানে সহজেই বড় অংকের বেতনে কাজ করার সুযোগ পাবেন। যা তাদের শিক্ষাজীবনকেই আরও সহজ করে তুলবে।
পিপলএকটেক বরাবরের মতো মার্কেট ট্রেন্ডের সঙ্গে এগিয়ে যেতে সর্বশেষ আয়োজন করে সাইবার সিকিউরিটি সেমিনারের। পিপলএন্ডটেকের নিউইয়র্ক ও ভার্জিনিয়া ক্যাম্পাসে গত ১৪ এবং ১৫ জানুয়ারি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উভয় ক্যাম্পাসে প্রায় শতাধিক টেকপ্রেমী ছাড়া অনলাইনে অংশ নেন ইউএসএ, কানাডা, ইন্ডিয়া, মিডল ইস্ট, বাংলাদেশের আইটি স্টুডেন্ট ও প্রফেশনালস।
উভয় ক্যাম্পাসে কিনোট স্পিকার ছিলেন ডিএনএস নেটওয়ার্ক সার্ভিসের ডিরেক্টর এবং পিপলএনটেক ডিবিএ কোর্স’র ইনস্ট্রাক্টর নিজাম মাহমুদ। তিনি সাইবার সিকিউরিটিতে আইটি জবের ফিউচার সম্ভাবনায় আলোকপাত করেন। তাছাড়াও যেকোনো আইটি জবে সাইবার এথিকস ও ডাটাবেজ সিকিউরিটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন। ২০ বছরের আইটি কেরিয়ারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন তিনি।
নিউইয়র্ক ক্যাম্পাসে চিফ গেস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কনসল জেনারেল শামীম আহসান। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন পিপলএনটেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপ ও ডিরেক্টর সৈয়দ হোসেন।
সেমিনার শেষে বক্তব্য রাখেন পিপলএনটেকের ফাউন্ডার ও সিইও আবুবকর হানিপ। তিনি তার বক্তব্যে বিশেষভাবে পিপলএনটেকের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের রোডম্যাপ এবং লেটেস্ট মার্কেট ট্রেন্ডের সঙ্গে স্টুডেন্টদের এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেমিনার শেষ হয় বক্তাদের ফুল ও উপহার দেওয়ার মাধ্যমে।
সেমিনারে অংশ নেওয়াদের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো, আইটি প্রফেশনালদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ। ন্যান্সি কুরেল অংশ নেওয়াদের পক্ষ থেকে বলেন, পিপলএনটেকের এ ধরনের ফ্রি সেমিনার সবাইকে আইটি ফিল্ডে আসতে উৎসাহ দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
এসএনএস