ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

৫২ বছর পর হারানো ছেলেকে ফিরে পেলেন মা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
৫২ বছর পর হারানো ছেলেকে ফিরে পেলেন মা

নীলফামারী: ক্ষুধার জ্বালায় ১০ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন শমসের আলী। এরপর ঘুরেছেন বিভিন্ন এলাকায়।

কাজ করেছেন হোটেলে। চালিয়েছেন রিকশাও। এভাবে কেটে গেছে ৫২টি বছর। অবশেষে ছোট ভাইয়ের হাত ধরে বাড়িতে ফিরেছেন তিনি।  

এতো বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাতের মুহূর্ত যেমন এলাকার মানুষকে আনন্দ দিয়েছে, তেমনি কাঁদিয়েছেও।  

শমসেরের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর-কদমতলীর বাড়াইশালপাড়া গ্রামে। তার বাবা বজর মামুদ ২০ বছর আগে মারা গেছেন। তার মায়ের নাম সবেজান বেগম।
 
পরিবারের লোকজন জানান, শমসের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন। বাবা ছিলেন দিনমজুর। আট ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শমসের বড়। অর্থের অভাবে এক বেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। অভাবের তাড়নায় খাবার না পেয়ে ৫২ বছর আগে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হন ১০ বছরের শমসের। এরপর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে একটি হোটেলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন দুই বছর। সেখান থেকে চলে যান পুরান ঢাকার কলতাবাজার এলাকায়। সেখানে গিয়ে কয়েক বছর হোটেলে কাজ করেছেন তিনি। পরে রিকশা চালান। থাকতেন রিকশার গ্যারেজে।  

দুই বছর আগে শমসেরের ছোট ভাই আব্দুল মোতালেব হোসেন ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাতে শুরু করেন। সম্প্রতি আব্দুল মোতালেবের সঙ্গে পুরান ঢাকায় দেখা হয় শমসেরের। প্রথমে চিনতে না পারলেও কথাবার্তার একপর্যায়ে একে-অপরের মধ্যে পরিচয় দেন। এসময় নিশ্চিত হন যে তারা আপন ভাই। পরে আব্দুল মোতালেব বাড়িতে ভাই শমসেরকে ফিরিয়ে আনেন বলে জানান পরিবারের লোকজন।
 
শমসেরের মা সবেজান বেগম বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছেলের সন্ধান না পেয়ে দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে চোখের পানি ফেলেছি। কিন্তু এতোদিন পর হলেও সৃষ্টিকর্তা ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমার যে কতো আনন্দ হচ্ছে, তা বোঝাতে পারব না।  

বাঙালিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজাদা সরকার বলেন, সবেজান বেগমকে অনেক দিন ধরেই চিনি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রায়ই পরিষদে এসে জানতে চাইতেন, কেউ তার ছেলের কোনো খোঁজ দিয়েছেন কি না। এতোদিন পর হলেও মা তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। এতে আমরাও আনন্দিত।  

চেয়ারম্যান শাহাজাদা আরও বলেন, সবেজান বেগমের পরিবার এতোটাই দরিদ্র যে পরিবারের আট সদস্যের থাকার জন্য নিজস্ব কোনো বাড়িঘর ছিল না। পরে তাদের বাড়াইশালপাড়ার আবাসনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

শমসের বলেন, আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ভেবেছিলাম, মা-বাবা কেউই বেঁচে নেই। এতোদিন পর মায়ের সঙ্গে দেখা। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি। তবে কষ্ট হচ্ছে বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।