ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

শিশু হাসে কিসে

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
শিশু হাসে কিসে

কী শিশুদের হাসায়? গবেষকদের গবেষণার জন্য এটি সবচেয়ে মজার একটি প্রশ্ন। কিন্তু এর পেছেনে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন ক্যাসপার অ্যাডিম্যান।

 

তবে তিনিই প্রথম এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি। ডারউইন তার শিশুপুত্রের হাসি নিয়ে চর্চা করেছেন। ফ্রয়েড একটি তত্ত্ব তৈরি করে দেখিয়েছেন যে, শ্রেষ্ঠত্বের প্রবণতা থেকে আমাদের হাসির উৎপত্তি। তাই আমরা একে অন্যের দুর্ভোগ দেখে আনন্দ পাই। কারো দুর্ঘটনায় প্রহসন করি, কারণ, এটি আমাদের হয়নি।

টম স্ট্যাফোর্ড বলছেন, শিশুরা সম্ভবত কৌতুক বোঝে না। এটাই কি তাদের হাসির কারণ? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের হৃদয় ও মনের নির্মাণ সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রকাশ করতে পারে।  
 
মানব উন্নয়ন বিষয়ক মহান মনোবিজ্ঞানী জিন পিয়াজেট শিশুদের হৃদয় ও মন দেখতে তাদের হাসিকে ব্যবহারের চিন্তা করেছেন।  
 
তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, আপনি যদি হাসেন, তাহলে আপনি কিছু মাত্রায় কৌতুক উপভোগ করতে পারবেন। একটি ভালো কৌতুক অপ্রত্যাশিত, বিভ্রান্তিকর এবং বিরক্তিকর পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে। শিশু যখন হাসে, তখন তাকে নিয়ে গবেষণা করলে বোঝা যায়, সে তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কীভাবে তার চারপাশের পৃথিবীকে দেখছে।  
 
তিনি ১৯৪০ সালেই এ ধারণা নিয়ে সঠিকভাবে পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কয়েকজন বিখ্যাত গবেষক এ নিয়ে গবেষণা করলেও এটি আধুনিক মনোবিজ্ঞানে উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডিম্যান ব্রিকবেক এ ধারণার পরিবর্তন করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, আমরা হাসিকে ব্যবহার করে বুঝতে পারি, ঠিক কীভাবে শিশুরা পৃথিবীকে বুঝতে পারছে। শিশুদের হাসি নিয়ে তিনি বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ জরিপ করেছেন। গত বছরের বার্লিন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ জরিপের প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপনও করেছেন তিনি।
 
ব্রিকবেক তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের এক হাজারের বেশি বাবা-মায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কখন, কোথায় এবং কেন তাদের শিশুরা হাসে?

এ গবেষণার ফলাফল হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে। একটি শিশুর প্রথম হাসি পায় প্রায় ছয় সপ্তাহ বয়সে, প্রায় সাড়ে তিন মাসে সে প্রথম হাসে। কিছু শিশু পুরোপুরি হাসতে তিনবারও সময় নেয়। কিন্তু তার প্রথম ‘প্যাঁক্ প্যাঁক্’ শব্দ কর্কশ হলেও সেটি দুশ্চিন্তার বিষয় নয়। কারণ, এটি তার হাসির পূর্বপ্রস্তুতি।  

জরিপে দেখা যায়, প্রথম মৃদুহাস্য থেকেই শিশুরা বড়দের সঙ্গে হাসে। কিছু নিছক শারীরিক সংবেদনশীলতা বা সুড়সুড়িই এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, আরও কিছু অদৃশ্য বা হঠাৎ সৃষ্ট কারণও এর নিয়ামক। বড়রা যখন মজার কাণ্ড করে, শিশুর সামনে হেঁটে দেখায় অথবা মজাদার আলাপ করে তখনও তারা হাসে।  
 
আপনি একটি শিশুকে সুড়সুড়ি দিলে শুধুমাত্র এ কারণে তারা হাসতেই পারে। কিন্তু এটিই হাসির কারণ নয় যে, তারা সুড়সুড়ি পাচ্ছে, বলেন ব্রিকবেক।  

উপরন্তু মানুষের পড়ে যাওয়া দেখে হাসার স্বভাব শিশুদের মধ্যে নেই। বরং তারা যখন তারা পড়ে যায়, অন্য কেউ তা দেখে অনেক বেশি হাসলে তারা সুখী হয়। কিন্তু অন্য কেউ পড়ে গেলে তারা দুঃখিত বা নিরানন্দভাবে বিস্মিত হয়।
 
এ ফলাফল ফ্রয়েডের তত্ত্বকে (যা কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃত শিশুদেরকে আনুষ্ঠানিক অধ্যয়ন করে নয়, বড়দের সঙ্গে ক্লিনিক্যাল সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি) ভুল প্রমাণ করেছে।

যদিও বাবা-মায়েরা জানিয়েছেন, তাদের ছেলে শিশুরা মেয়ে শিশুদের তুলনায় সামান্য বেশি হাসে। উভয়লিঙ্গের শিশুরাই তাদের মা ও বাবাকে সমানভাবে মজার বলে উপস্থাপন করেছে।

অ্যাডিম্যান তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আশাবাদী, চূড়ান্ত বিশ্লেষণে তিনি বুঝতে সক্ষম হবেন যে, শিশুর হাসি তাদের বিশ্বকে বোঝার ক্ষমতার উন্নতির জন্য কিভাবে সহায়ক। পূর্বজ্ঞান তাদেরকে কীভাবে বিস্মিত করে। যেমন- তাদের মনে রাখার ক্ষমতা কীভাবে তাদের মধ্যে তৈরি হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
এএসআর/এসএনএস


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।