ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

পাল্টে যাচ্ছে খেমাররুজের কম্বোডিয়া

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
পাল্টে যাচ্ছে খেমাররুজের কম্বোডিয়া

খেমাররুজ শাসনামলের বেদনাদায়ক ইতিহাসকে দূরে ঠেলে ইমেজ পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছে কম্বোডিয়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই ছোট্ট দেশটি পর্যটক ও বিনিয়োগকারীদের গন্তব্যস্থল হিসেবে নিজেকে সাজানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।


 
রাজধানী নমপেন শহরের একটি অন্ধকার ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল নমপেন দখল করে খেমাররুজ। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তাদের শাসনামলে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বা ২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ শাসকদের গণহত্যা, নির্বিচারে ফাঁসি ও ভুল নীতিতে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ কবলিত হয়ে মারা যান। শহরের বাসিন্দাদের অধিকাংশ শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে বাস করতে বাধ্য হন।
 
আর নমপেনে এখন উন্নয়নের পাশাপাশি আকাশচুম্বী অসংখ্য ভবন হয়েছে। আগামী বছরই হচ্ছে অনেক মলও। অনেকেই কর্মজীবনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। জুরিখ, লন্ডন বা সিঙ্গাপুরের মতো শহরগুলোতে থাকা নমপেন প্রবাসীরা কাজ করছেন দেশের উন্নয়নে। দেশটিতে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদেরও।
 
সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত শহরের সামাজিক দৃশ্য মূলত কম্বোডিয়ার বিয়ার বাগান, গুমোট হোটেল বা ব্যস্ত রাস্তায় বারে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে সবকিছু।
 
গত তিন বছরে তৈরি হয়েছে শহরের কেন্দ্রে স্টারবাকস ও কিরিসপি কেরেমের মতো। নতুন নতুন অসংখ্য বার ও রেস্টুরেন্ট তৈরি হয়েছে প্রবাসীদের বিনিয়োগে। আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি শহরের মতো ভোগবাদী শহর হিসেবে গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে চাইছেন কম্বোডিয়ানরা।
 
দেশটি সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত একটি নিম্ন আয়ের অঞ্চল হিসেবে বিশ্বব্যাংকের তালিকাভুক্ত ছিল। অপ্রত্যাশিত বলে মনে হতে পারে, কিন্তু নমপেনের হাজার হাজার মানুষসহ প্রবাসীরাও বিশেষত উন্নয়ন এবং এনজিও খাতে আকর্ষণীয় ও অপ্রত্যাশিত কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।
 
গৃহযুদ্ধোত্তর দেশটিতে এখন জাতিসংঘ ও সংস্থার একটি প্রভাবশালী উপস্থিতিও আছে।
 
উৎপাদন ও কৃষি শিল্পে বিনিয়োগকারীরাও কম খরচে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করার জন্য একটি বিকল্প হিসেবে কম্বোডিয়াকে দেখছেন। শহরের বাসিন্দারাও বিদেশিদের গ্রহণ করছেন সাদরে। আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর দীর্ঘ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও বোঝা যাচ্ছে রাজধানীর মধ্যে বাণিজ্যিক শাখা স্থাপন করায়।
 
যেহেতু কম্বোডিয়ার অনেক শিল্প এখনও অপেক্ষাকৃত অনুন্নত, এটাকে বড় করতে চেষ্টা করছেন অনেকে।
 
ইতালির চলচ্চিত্র নির্মাতা ড্যানিয়েল জিমি হেন্ডারসন তার চলচ্চিত্রের শ্যুটিং লন্ডন থেকে নমপেনে সরিয়ে এনেছেন।
‘আমি লন্ডনে এটির কাজ করতে পারতাম। কিন্তু এখানে করায় আমাকে নিয়ে যাবে আরো অনেক বছর। এখানকার সবকিছু নতুন আছে এবং আপনার ব্যবসা বাড়াতে পারেন’- বলেন হেন্ডারসন।
 
ভারতের প্রবাসী ইরিনা চক্রবর্তী গত পাঁচ বছর ধরে নমপেনে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘শহরের এক নতুন শক্তি, নতুন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। এমনকি নৈমিত্তিক ধারণার মধ্যেও নতুন উদ্যোগ চালু করতে পারেন’।
 
ইরিনা এবং তার বন্ধুরা একটি বাজারের আয়োজন করেছেন ব্যবহৃত আইটেম বিক্রি করতে। এখন তাদের অদল-বদল বিক্রিও বিক্রেতাদের আকর্ষণ করেছে।
 
দক্ষিণ আফ্রিকার বাবুর্চি টিমোথি ব্রুইনস্ নমপেনের রন্ধনশৈলী ও এ ব্যবসাকে সহজ ও সস্তার বলে বর্ণণা করেন। আধুনিক স্বাদের সঙ্গে খেমের উপাদানগুলোর মিশ্রণে তিনি বিশেষ পারদর্শিতা দেখাতে পেরেছেন।
 
‘শহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে, এর জীবনযাত্রা নিউইয়র্ক ও সিডনির মতো জায়গার তুলনায় খুব সস্তা’- বলেন লাক্লান লি। তিনি আইপিএস কম্বোডিয়া নামের একটি হাউজিং কোম্পানির পরিচালক, যারা আমেরিকান ও অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে প্রধানত কাজ করে।
 
তবে নমপেনের সবচেয়ে বড় ইস্যু দুর্নীতি, যার স্পর্শ কার্যত জীবনের প্রতিটি সেক্টরে রয়ে গেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ১৬৮টি দেশের মধ্যে কম্বোডিয়া ১৫০তম সর্বনিম্ন আয়ের দেশ।
 
‘তারপরও নমপেনের জীবনযাপনের স্বাধীনতা আমাকে ভবিষ্যতের সেতু নির্মাণ করেছে। এটা স্পষ্টভাবে একটি জীবন পরিবর্তনকারী অভিজ্ঞতা’- বলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা জিমি হেন্ডারসন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।