নেপালের সেনাবাহিনী মাউন্ট এভারেস্টের ইমজা নামের একটি বিপজ্জনক হিমবাহ হ্রদ পরিষ্কার করে এটিকে নিরাপদ স্তরে নিয়ে এসেছে। একই প্রক্রিয়ায় অন্য হিমবাহ হ্রদগুলোকেও বন্যার ঝুঁকি থেকে হিমালয় ও এর আশপাশের অঞ্চলের মানুষের জন্য বিপদমুক্ত করা হবে।
হিমালয়ের হাজার হাজার হিমবাহ হ্রদের একটি ইমজা সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৫ হাজার মিটার (১৬ হাজার ৪০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। এভারেস্টের এ হ্রদের স্রোত জনবসতিতে বন্যার ঝুঁকি তৈরি করেছিল। গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ ও এভারেস্টের সেতু ট্রেকিংও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হ্রদটি ১৪৯ মিটার গভীর ছিল। ছয়মাসের কষ্টকর, কঠিন ও বিপদসঙ্কুল কাজ শেষে এর পানির স্তর ৩.৪ মিটারে নামিয়ে এনেছেন তারা।
সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, এটিকে নিরাপদ করতে ছয়মাসের এ নিষ্কাশন প্রকল্পে একটি নালা তৈরি করে ধীরে ধীরে পানিমুক্ত করা হয়। সমুদ্রতলের প্রায় ৫ হাজার মিটার উপরে হেলিকপ্টারে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়া হয়।
সেনাদের কয়েকটি দল হৃদ পরিষ্কারের কাজ করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন শেরপারাও। উচ্চ উচ্চতা ও ভারী তুষারপাতের বিপদ ও ঝুঁকি ছাড়াও এ কাজ অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল।
কর্মকর্তারা জানান, দলগুলো প্রত্যেকদিন মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য নিরাপদে কাজ করতে পারেন।
সেনা দলের নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভরত শ্রেষ্ঠা এভারেস্ট অঞ্চল থেকে বলেন, উচ্চ উচ্চতা ও কিছু স্তরের চরম অবস্থার চাপ ছাড়াও আমাদের জন্য ক্লান্তিকর কাজ ছিল এটা। উচ্চ উচ্চতায় প্রথমে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লেও ধীরে ধীরে আমরা নিজেদের এ স্থানে মানিয়ে নেই।
হ্রদ পরিষ্কারের এ কাজ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নেওয়া জাতিসংঘের প্রকল্পের একটি অংশ। জাতিসংঘ হ্রদের পানির স্তর কমাতে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে চুক্তি করেছে নেপালের সঙ্গে। হিমবাহ স্রোত বরাবর অঞ্চলগুলোর বাসিন্দাদের জন্য আগাম সতর্কবার্তা জারির পদ্ধতিও চালু করা হচ্ছে এ প্রকল্পের আওতায়।
স্থানীয় শেরপারা ইমজার পাশাপাশি অন্য হিমবাহ হ্রদগুলো পরিষ্কারেরও অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, চরম ঝুঁকি রয়েছে সেগুলোতেও।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত থ্যামো গ্রামের নেতা নিমজি শেরপা বলেন, হিমবাহ হ্রদ সৃষ্ট বন্যা ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, আমরা ভয় পাচ্ছি।
তিনি জানান, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার কারণে হ্রদের হিমবাহ দ্রুত গলে প্রায়ই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে হিমবাহ হ্রদ বিশবারেরও বেশি আঘাত হেনে তাদের গ্রামের ব্যাংকটিকে ভেঙে দিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুর্ঘটনাই ঘটেছে এভারেস্ট অঞ্চলের কাছাকাছি।
নেপালের গত বছরের ভূমিকম্প ইমজার পাশাপাশি আরও অনেক হ্রদকেও অস্থিতিশীল করেছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হাইড্রোলজি ও আবহবিদ্যা বিভাগের প্রকল্প পরিচালক শীর্ষ খাতরি বলেন, এটি একটি পাইলট প্রকল্প, যেটি আমরা কোনো দুঃখজনক ঘটনা ছাড়াই সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখন এ প্রক্রিয়া অন্যান্য হিমবাহ হ্রদের ঝুঁকি কমাতে প্রয়োগ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৬
এএসআর/এমজেএফ