ঢাকা: দুর্গম মানব বসতিহীন ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ সেন্ট কিলদা বিশ্বের ভূতুড়ে দ্বীপ শহরগুলোর একটি। উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বৃহত্তম সামুদ্রিক পাখি গ্যানেটস্, পাফিনস্ ও ফালমারসের আবাসস্থল এটি।
আটলান্টিক মহাসাগরের ভেতরকার দ্বীপপুঞ্জ সেন্ট কিলদা এতো দূরে যে, এটিকে প্রায়ই ব্রিটেন, ইউরোপ বা বিশ্বের মানচিত্রে দেখানো হয় না।
এটি একটি প্রেতপুরী। সেন্ট কিলদার প্রধান দ্বীপ হিথরা মাত্র চারটি দ্বীপের একটি, যেখানে মানুষের বসতি ছিল। ১৯৩০ সালে এর শেষ বাসিন্দারা চলে যাওয়ার পর এটি এখন পরিত্যক্ত দ্বীপশহর। সেন্ট কিলদার সাবেক শেষ বাসিন্দা স্ট। তিনি গত এপ্রিল মাসে মারা গেলে একটি যুগেরও অবসান ঘটে।
ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে এখন সেন্ট কিলদা সংরক্ষণ করছে স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল ট্রাস্ট।
এখানে মানুষের বসবাস শুরু হয় ৭ হাজার বছর আগে। খনন করে এখানে পাওয়া গেছে নিওলিথিক মানুষের ব্যবহৃত পাথরের হাতিয়ার। এছাড়া ব্রোঞ্জ যুগের একটি সম্ভাব্য সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছে। ৯ম ও ১০ম শতাব্দীর বাসিন্দাদের ব্যবহৃত তলোয়ার পাওয়া গেছে এখানে। সপ্তদশ শতাব্দীতে হিথরায় ১৮০টি সম্প্রদায় ছিল।
গবেষকরা মনে করেন, সেন্ট কিলদা নামকরণ করেছিলেন খ্রিস্টীয় সন্ন্যাসীরা।
তবে এখানকার সামুদ্রিক পাখিরা বিপদের মধ্যে আছে। খাদ্যাভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাদের সংখ্যা গত ১৫ বছরের মধ্যে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
হিথরা দ্বীপে এখনও টিকে আছে ৪০টি আশ্চর্যজনক বড় পাথরের বাড়ি। বাড়িগুলোর অধিকাংশই শহরটির প্রধান রাস্তাকে চিহ্নিত করে। কিছু স্লেট প্ল্যাকার্ড কিছু বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে, যেগুলো শেষ বাসিন্দাদের স্মরণ করছে।
সেন্ট কিলদার আদিম পোষা প্রাণী ছিল সয় ভেড়া। ৪ হাজার বছর আগে মানুষ ভেড়াদের খাওয়াতে ঘাস উৎপাদন করতো বলেও গবেষণায় জানা গেছে।
উনবিংশ শতাব্দীতে শীতকালের তীব্র ঠাণ্ডা ও ঝড়ের কশাঘাত, এমনকি সামুদ্রিক পাখি শিকারও সেন্ট কিলদার বাসিন্দাদের জীবনের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ ছিল।
এরপর তারা বেঁচে থাকার জন্য নানা উপায় উদ্ভাবন করে, যার মধ্যে পাথর বাড়ি একটি। স্কটিশ পার্বত্য অঞ্চলের অন্য কোথাও নির্মিত কাঠামো অনুসারে ‘ব্ল্যাক হাউস’ নামে পরিচিত এ বাড়িগুলো তারা নির্মাণ করেন ১৮৩০ সালে। এর খড়ের ছাদ আলকাতরা ও ঘাসের ছাপড়ার সঙ্গে পানিরোধী (ওয়াটার প্রুফ) করে তৈরি করা হয়েছিল।
সেন্ট কিলদার বাসিন্দারা সে সময় স্বনির্ভর ছিলো, আবার আধুনিক জীবনের আওতার বাইরেও ছিলো না।
স্কটল্যান্ডের অন্যান্য অংশের মতো তারা একটি দূরবর্তী জমিদার, যারা মূল ভূখণ্ডে বসবাস করতেন; তাদের শাসনাধীন ছিলো। সামুদ্রিক পাখি শিকার করে কর হিসেবে জমিদারদের পাঠানো হতো ওই সময়।
কিন্তু ১৮৭০ সালের দিকে তারা মূল ভূখণ্ডের মতো নতুন আধুনিক ঘর-বাড়ি নির্মাণ করতে শুরু করে। পরে ঝড় ও ঠাণ্ডার প্রকোপে সেন্ট কিলদা বসবাসের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত হতে থাকে।
১৯৩০ সালে শেষ ৩৬ জন অধিবাসীকে পুনর্বাসন করে ব্রিটিশ সরকার। ফলে পরিত্যক্ত হয় সেন্ট কিলদা।
দ্বীপপুঞ্জটি এখন শুধু যেন বিশ্বের মানচিত্রের বাইরেই নয়, মানুষের অগোচরে হাজারো বছরের সাক্ষী হয়েও রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
এএসআর/এসআই