দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও তার বর্তমান সচিবালয় সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলে ৩.৫ বিলিয়ন রুপি বা ৫২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নতুন একটি সচিবালয় ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। কারণ, তার বিশ্বাস, রাজধানী হায়দ্রাবাদের ‘সাইফাবাদ প্রাসাদ’ নামে পরিচিত বর্তমান সচিবালয় ভবনটি রাজ্যের জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’।
সাইফাবাদ প্রাসাদের ‘অভিশাপ’-এর এ গল্প ১৮৮৮ সাল থেকে প্রচলিত। হায়দ্রাবাদের ষষ্ঠ নিজাম (রাজা) মাহবুব আলী পাশা তার নতুন রাজপ্রাসাদ পরিদর্শনে যাচ্ছিলেন। তার দু’জন পারিষদ, যারা চাননি, নিজাম প্রাসাদটি দখল করুন, তারা নিশ্চিত করেন যে, একটি টিকটিকি তার পথ অতিক্রম করেছে। এটা খারাপ লক্ষণ। নিজাম অবিলম্বে প্রাসাদটি তালাবদ্ধ করার আদেশ দেন।
১৯৪০ সালে একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা সাম্রাজ্যের সচিবালয়ে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত বন্ধই ছিল সাইফাবাদ প্রাসাদ।
সাইফাবাদ প্রাসাদ এখন একটি ঐতিহ্যবাহী কাঠামো। জটিল এ সচিবালয়টি পাশাপাশি দুই রাজ্য তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশের সরকারি প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু পরে এটি শুধু তেলেঙ্গানার অন্তর্গত হবে।
হায়দ্রাবাদ বর্তমানে উভয় রাজ্যের রাজধানী এবং গভর্নরও একজনই। আগামী দশ বছর এভাবেই চলবে রাজ্য দু’টি। এরপর নতুন রাজধানী হিসেবে অন্য কোনো জায়গা বেছে নিতে হবে অন্ধ্র প্রদেশকে।
ষষ্ঠ নিজামের মতোই তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও বিশ্বাস করেন যে, সচিবালয় কমপ্লেক্সটিতে ‘অভিশাপ’ রয়েছে। তাই তিনি চলতি বছরের শেষ নাগাদ সেটিকে সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ করে নতুন প্রশাসনিক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন।
প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বাস্তু নির্মাণ বিজ্ঞানে বিশ্বাসী চন্দ্রশেখর বলছেন, নিশ্চিতভাবে এ সচিবালয়ে ‘খারাপ বাস্তু’ নির্মিত হয়েছে, যা তেলেঙ্গানার জন্য ভালো নয়। সচিবালয়ের এ ‘দুর্ভাগ্য’ পুরো তেলেঙ্গানা রাজ্যকে প্রভাবিত করবে।
‘ইতিহাস প্রমাণ করে, কেউ কেউ এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন’ দাবি করে এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলছেন, এই ভবনে ২০০৫ সালে বাস্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সংস্কার করেন সাবেক অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডি। চার বছর পরে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান তিনি।
তার উত্তরসূরী কে রোশাই বাস্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ভবনটির কিছু পরিবর্তন করলেও এক বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল।
এরপরের মুখ্যমন্ত্রী কিরণ কুমার রেড্ডি বাস্তু বিদ্যায় বিশ্বাস করেন না এবং অফিস বা বাসভবনের কোনো পরিবর্তন করেননি। তার কিছুই হয়নি।
মাসে মাত্র এক বা দু’বার মন্ত্রিসভার বৈঠকের জন্য সাইফাবাদ প্রাসাদ ভবনে আসেন চন্দ্রশেখর রাও। তিনি তার শহরের সরকারি বাসভবন বা হায়দ্রাবাদ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের বাড়ি থেকে প্রশাসনিক কাজ করতেই বেশি পছন্দ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
এএসআর/এমজেএফ