আট পা, আট চোখ এবং একজোড়া বিদ্বেষপূর্ণ বিষদাঁত নিয়ে মাকড়সারা আমাদের কাছে আতঙ্কজনক এক ক্ষুদে প্রাণী। ঘরের কোণায় কোণায় নির্জনে একা একা লুকিয়ে থাকে মাকড়সা- এটি দেখেও অভ্যস্ত আমরা।
কিন্তু সামাজিক মাকড়সারা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বনে-জঙ্গলে। এরা পিঁপড়া বা মৌমাছির মতো একটি সমাজ হিসেবে বসবাস করে, একসঙ্গে কাজ করে, জাল গড়ে এবং পরিষ্কার করে রাখে তাদের ঘর। তারা শিকার ধরে রাখার ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করে এবং তাদের ফাঁদে বড় ধরনের খাবার ধরা পড়লে একসঙ্গে খায়।
জীববিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবীতে থাকা মাকড়সার প্রায় ৪৫ হাজার প্রজাতির মধ্যে প্রায় ২৫টিই সামাজিক প্রজাতির। এর অন্তত সাতটি প্রজাতির মাকড়সা পরিবারবদ্ধ থাকে এবং অন্তত এক ডজনবার পৃথক সমাজ তৈরি করে থাকে।
শতাধিক বছর আগে পেরুর আমাজন জঙ্গলের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি মাকড়সার রাজ্য আবিষ্কার করে এদের সামাজিক মাকড়সা বলে আখ্যায়িত করেন ফরাসি জীববিজ্ঞানী ইউজিন শিমোন। পরবর্তীতে কীটবিদ্যা বিশারদ লিটিসিয়াকে অ্যাভিলেসও ইকুয়েডরে দেখেছেন সামাজিক মাকড়সাদের।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার জীববিজ্ঞানী জনাথন প্রুতি ও তার সহকর্মীরা ২০১৩ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের নেটিভ নামক সামাজিক মাকড়সা প্রজাতির ওপর গবেষণা করেন।
ইউজিন শিমোন তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন এভাবে- ‘কয়েক হাজার মাকড়সা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে ফানেল আকৃতির ওয়েব গাছে জাল বুনে বসবাস করছিল। সামাজিক মাকড়সা ৭.৬ মিটার লম্বা ও ১.৫ মিটার প্রশস্ত আকার পর্যন্ত জাল বুনতে পারে, যেখানে ৫০ হাজার মাকড়সা থাকতে পারে। ’
সাধারণ মাকড়সার চেয়ে এদের পা, চোখ ও বিষদাঁত বেশি হয় বলেও জানান শিমোন।
লিটিসিয়াকে অ্যাভিলেস জানান, সামাজিক মাকড়সার প্রজাতিগুলো একটি থেকে অন্যটি আলাদা। কিন্তু তাদের বৈশিষ্ট্যের অনেক মিল রয়েছে।
একটি মাকড়সার রাজ্যে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীর সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্করাও থাকে। কিন্তু মাকড়সার জালে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় নারীরা।
১৯৮০ সালের একটি গবেষণায় একটি জালে মোট মাকড়সার মাত্র ৫ শতাংশ পুরুষ পাওয়া যায়।
জনাথন প্রুতি বলেন, সামাজিক মাকড়সাদের প্রত্যেকের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব আছে। সে অনুসারে তাদের কাজ নির্ধারিত হয়। আবার বয়স ও লিঙ্গ ভিত্তিতেও ভূমিকা সাজানো হয়। যেমন- সাহসীরা শিকারের ওপর আক্রমণের দায়িত্বে থাকে। অন্যরা জাল তৈরি ও মেরামত করে। অপ্রাপ্তবয়স্করা তা পরিষ্কার রাখে। নারীরা অন্য কাজের পাশাপাশি মা পাখির মতো তাদের সন্তান-সন্ততিদের খাইয়ে দেয় ও যত্ন নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
এএসআর/এমজেএফ/