‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা’ বাংলা প্রবাদটির কথা কে না জানে? গল্পের ঘোঘের ভয় দেখিয়ে এককালে শিশুদের ঘুমও পাড়াতেন মায়েরা।
গল্প মনে হলেও প্রাচীন পৃথিবীতে ঘোগ নামের প্রাণীরা সত্যি সত্যিই ছিলো।
আবার গল্পে যেভাবে ‘হিংস্র প্রাণী’ বলা হয়, সেটিও কিন্তু নয় থাইলাসিন। বরং খুবই নিরীহ প্রাণী ছিলো এরা।
বুনো কুকুর জাতীয় ‘বাঘের শত্রু’ বলে চিহ্নিত এই প্রাণীটি ‘তাসমানিয়ান বাঘ’ নামেও পরিচিত ছিলো। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া দ্বীপে বসবাস করতো ঘোগেরা।
দশ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ঘোগ। তবে নেকড়ে শাবকের মতো দেখতে ঘোগ সদৃশ আধুনিক থাইলাসিন বিংশ শতাব্দীতেও বেঁচে ছিলো তাসমানিয়া দ্বীপে। চিড়িয়াখানায় বন্দি এ প্রজাতির সর্বশেষ প্রাণীটির ভিডিও ফুটেজ ধারণ করা হয় ১৯৩৩ সালে।
প্রাণীজগতে শক্তিশালী প্রাণী বলেও পরিচিত ছিলো না থাইলাসিন। সর্বোচ্চ ক্যাঙ্গারু ও ক্যাঙ্গারু সদৃশ আরও ছোট প্রাণী ওয়ালাবাইস শিকার করতে সক্ষম ছিলো তারা। আর এ শিকারির বদনামই তাদের চূড়ান্ত পতন ডেকে আনে। তাসমানিয়ার ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসকরা তাদের শিকারি চেহারা থেকে অনুমাণ করে বসেন যে, এরা তাদের ভেড়ার ওপর আক্রমণের জন্য দায়ী ছিলো।
এ ধারণায় স্থানীয় সরকারও ঘোগের মাথাপ্রতি এক অস্ট্রেলিয়ান ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। পাশাপাশি ঔপনিবেশিক মানুষদের আবাসস্থল বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয় এ জাতীয় কুকুরদের সঙ্গে। মানুষের বাসস্থান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে থাইলাসিনদের। নির্বিচার হত্যার শিকার হতে থাকে প্রাণীগুলো। পরিণতিতে ১৯৩৬ সালের দিকে বিলুপ্ত হয়ে যায় এ ঘোগেরা।
যদিও অসমর্থিত সাইটে এখনও এটিকে দেখা যায় বলে দাবি করা হয়েছে। তবে তাসমানিয়ার এখনকার ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং তাত্ত্বিকভাবেও দ্বীপটি এমন প্রাণীদের বসবাসের উপযুক্ত নয়। এটিকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রশ্ন এসে যায়, থাইলাসিনরা কি ছাই থেকে উঠবে?
ঘোগকে মানবতা ধ্বংস করার ক্ষমতা সম্পন্ন প্রজাতি বলেও সন্দেহ করা হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। স্বজাতির ঘরে ঢুকে কেউ তার ক্ষতি সাধন করতে চাইলে তাকেই বাঘের ঘরে বাসা বাধা ঘোগ বলে সম্বোধন করা হতো। এ থেকেই তৈরি হওয়া প্রবাদবাক্য বা কাহিনীগুলো তাই কারও জন্য একটি সতর্কতা হিসেবেও কাজ করে।
তবে এ বাংলায় না পাওয়া যাওয়া এবং সুদূর অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া দ্বীপে বসবাস করা প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটি কীভাবে বাংলায় ঢুকে পড়লো- সে রহস্য রয়ে গেছে আজও।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
এএসআর/এসএনএস