নীল তিমির পরেই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আলাস্কার কালো বোহেড তিমি। কিন্তু মানুষের হাতে নির্বিচারে নিধন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলে যাওয়া এবং প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে দ্রুত বিলুপ্তির দিকে শঙ্কায় সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীটি।
প্রায় ৬০ ফুট লম্বা, ১২ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার এবং কমপক্ষে ৭০ টন ওজনের এ প্রজাতির তিমির ধনুকের মতো লম্বা মাথার খুলি ও বৃহত্তম মুখ থাকায় এদের বোহেড তিমি বলা হয়৷
আলাস্কার আর্কটিক সাগরে বাস করে বলে বোহেড তিমিকে আর্কটিক তিমিও বলা হয়।
মেরু অঞ্চলের মানুষ আদিকাল থেকেই জীবন ধারণের জন্য শিকারের ওপর নির্ভরশীল। মাছ, হাঙর, তিমি ইত্যাদি শিকার করে তারা খাদ্যের প্রয়োজন মেটায়। আলাস্কার উপকূলীয় গ্রামগুলোর এস্কিমোদের জীবিকা ও অর্থনীতিতে এই বৃহৎ তিমি শিকার এখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নির্বিচার শিকারের ফলে এখন বোহেড তিমিদের অস্তিত্বই বিপন্নপ্রায়। আনুমানিক মাত্র ৮ হাজার তিমি এখন টিকে আছে এর মূল আবাসস্থল আলাস্কার পূর্ব আর্কটিকে। যেখানে ২০০১ সালের গণনায় পাওয়া গিয়েছিল ১৪ হাজার ৪০০টি আর ২০০৮ সালে ছিল ১০ হাজার ৫০০টি।
গ্রিনল্যান্ড উপকূলেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দশের কোটায় নেমে গেছে, যেখানে ২০০৬ সালেও ছিল ১ হাজার ২০০টি।
একসময় মানুষ এসব প্রাণীর হাড়গোড় দিয়ে অস্ত্র নির্মাণ ও এ অস্ত্র নিক্ষেপ করে শিকার ধরতো। প্রায় ২০০ বছর আগে এমনই অস্ত্র ছুড়ে মারা শিকারির হাত থেকে বেঁচে যাওয়া একটি বোহেড তিমিকে ২০০৭ সালে আলাস্কা উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিমিটি ছুড়ে মারা সাড়ে তিন ইঞ্চির তীর জাতীয় ওই অস্ত্র শরীরে নিয়ে এখনও বেঁচে আছে। ম্যাসাচুসেটসের নিউ বেডফোর্ডের প্রধান তিমি কেন্দ্রে ১৮৯০ সালে উৎপাদন করা একটি বো-হেডও এখনও বেঁচে আছে। ফলে গড়ে ১৫০-২০০ বছর বেঁচে থাকা বোহেড তিমি পৃথিবীর দীর্ঘজীবী প্রাণীদের একটি বলেও প্রমাণিত হয়েছে।
কিন্তু দীর্ঘ এ জীবন যাপন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষের শিকারে পরিণত হয়ে। আর আধুনিককালে এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণজনিত কারণও। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে আলাস্কার শহর ব্যারোর বরফ গলার উদাহরণ এক্ষেত্রে তুলে ধরা যায়। প্রকৃতি ও জীববিজ্ঞানীরা জানান, মহাসাগর ও তুন্দ্রা অঞ্চল দিয়ে আবদ্ধ শহরটির তাপমাত্রা কয়েক দশক ধরেই বাড়ছে। আর তাপমাত্রা যতোই বাড়ছে, বরফ আগের চেয়ে ততোই দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে বাসস্থান ধ্বংস হয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে বোহেড তিমিরা।
এদিকে পরিবেশ দূষণও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় পৌঁছেছে। রাসায়নিক দূষণকারী বড় বড় বস্তু বরফের মধ্যে আটকা পড়ে যায়। পুরনো নিষিদ্ধ দূষণকারী পণ্যের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হলেও বাড়ছে আধুনিক দূষণকারী পণ্যের সংখ্যা। বরফে আটকে থাকা রাসায়নিক পলিক্লোরিনডটেড বাইফিনাইলস্ (PCBs) বোহেড তিমি, মেরু ভালুক ও সিলের বিভিন্ন অঙ্গে সংক্রমিত হচ্ছে। ফলে প্রাণীগুলো মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি অনেক মানুষও পিসিবি মেশানো দূষিত মাংস খেয়ে অসুস্থতার ঝুঁকিতে পড়ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৬
এএসআর/এইচএ/