ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

পাথরের ভাঁজে ভাঁজে বিবর্তনের সূত্র!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
পাথরের ভাঁজে ভাঁজে বিবর্তনের সূত্র!

জীবাশ্মের পাশাপাশি পাথরের পরীক্ষাও বিবর্তনের নানা রহস্য উদ্‌ঘাটন করে। প্রাগৈতিহাসিক শিলা পাথর থেকে আধুনিক পর্বতমালার ভাঁজে ভাঁজে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূগর্ভের স্তরে স্তরে এ পরীক্ষা চালিয়ে থাকেন ভূতত্ত্ববিদেরা।

জীবাশ্মের পাশাপাশি পাথরের পরীক্ষাও বিবর্তনের নানা রহস্য উদ্‌ঘাটন করে। প্রাগৈতিহাসিক শিলা পাথর থেকে আধুনিক পর্বতমালার ভাঁজে ভাঁজে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূগর্ভের স্তরে স্তরে এ পরীক্ষা চালিয়ে থাকেন ভূতত্ত্ববিদেরা।

তবে সেই অঞ্চলের পাথর থেকেই জীবন ও বিশ্বের এ বিবর্তনের ধারা জানা সম্ভব যে অঞ্চলের বয়স পৃথিবীর সমান।   
উত্তর-পশ্চিমে স্কটল্যান্ডের প্রত্যন্ত লোচ অ্যাসিন্ট সে ধরনেরই একটি অঞ্চল। স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে অত্যাশ্চর্য এলাকাটির বয়স কমপক্ষে তিন বিলিয়ন বছর, যেখান থেকে পৃথিবী ও জীববৈচিত্র্যের সূচনা বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। জটিল প্রাণীজগতের উত্থানের আগে-পরের পৃথিবীর বিবর্তনের রহস্য উদ্‌ঘাটনে শতাব্দীজুড়ে সেখানে চলছে গবেষণাযজ্ঞ।

লোচ অ্যাসিন্টের এ৮৩৭ পাড়গুলো বরাবর রাস্তার মহাজাগতিক শিলাতে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে গোপন রহস্যগুলো লুকিয়ে আছে। পৃথিবীর সমান বয়সী এসব শিলা বলছে, বিলিয়ন বিলিয়ন বছরের এই ধীর ভূ-তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া আজকের পৃথিবীর সুন্দর দৃশ্যাবলী তৈরি করেছে।
এর লোচিনভার এলাকার শেষে পশ্চিমে রাস্তার পাশে উন্মুক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে প্রাগৈতিহাসিক শিলা ‘লেওসিয়ান নিসিক’, যা ৩ বিলিয়ন বছর বয়সী। এ শিলা গঠনের সময়কালে পৃথিবীতে একটিমাত্র জীবন এককোষী অণুজীবের অস্তিত্ব ছিল।

এ শিলা এলাকার গুল্ম আবৃত নিচু বন্ধুর জমিগুলো স্কটল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম উপকূল বরাবর ও বাইরের গেব্রি্স এলাকার মধ্যে চলমান। পৃথিবীর দীর্ঘ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিবর্তিত হয়ে এর আজকের চেহারা পেয়েছে। ভূমি কখনো উত্তপ্ত, কখনো গলিত ও কখনো চারপাশে বিকৃত হয়ে কোনো অংশকে কালো এবং কোনো অংশকে সাদা চেহারা প্রদান করেছে।

লোচ অ্যাসিন্টের প্রাচীনতম পাথরের নিচু জমি অ্যাসমেলভিসের সুন্দর সৈকতে আমাদের বিশ্বের পরিবর্তনের আরও অনেক প্রমাণ রয়েছে। উপকূল বরাবর শিলা এখানে দুমড়ে-মুচড়ে ও সঙ্কুচিত হয়েছে। তারা তলে চাপা পড়েছে, চূর্ণ ও উত্তপ্ত হয়ে সরে সরেও গেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে এইসব পুরনো পাথর শিলা ওপরের দিকে উঠেছে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।

প্রায় ১ বিলিয়ন বছর আগে এখানকার উপরিভাগে ‘টোরিডোনিয়ান বেলেপাথর’ জমা হতে হতে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। আর তখন থেকেই বহুকোষী জীবনের শুরু হয়।

প্রাচীন ‘লেওসিয়ান নিসিক’ ও নতুন ‘টোরিডোনিয়ান বেলেপাথর’ যুগের ব্যবধান ২ বিলিয়ন বছর। পৃথিবীর ইতিহাস তৈরির এই মধ্যবর্তী সময়কার রহস্যও তাই  লোচ অ্যাসিন্টে পাওয়া সম্ভব। এর পরের ধাপে ৫৪০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু গোলাপী-সাদা কোয়ার্টজাইট পাথরের ক্যামব্রিয়ান যুগ। লোচ অ্যাসিন্টের এ৮৯৪ পাড় ধরে পূর্বদিকে আর্ডভ্রেক দুর্গ বরাবর চলে গেছে কোয়ার্টজাইট পাথরের রাস্তাটি। এই পাথরের ওপরের দিকে বেজোড় পাইপের মতো কাঠামো দেখা যায় বলে সেটি ‘পাইপ শিলা’ নামে পরিচিত।

ক্যামব্রিয়ান শিলায় গঠিত লোচ অ্যাসিন্টের মধ্যেকার আর্ডভ্রেক দুর্গ, কাছাকাছি পর্বতমালা এবং পাইপ শিলার রাস্তাটি বেলেপাথর যুগের সঙ্গে ক্যামব্রিয়ান যুগকে শুধু সম্মিলনই করেনি, এককোষী থেকে বহুকোষী জীবের রুপান্তরের ইতিহাসও বর্ণনা করছে। কারণ, এর অভ্যন্তরের জীবাশ্ম সমাধি কীট-পতঙ্গ জাতীয় প্রাণীর জীবাশ্মে গঠিত।
ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগে ভূতত্ত্ববিদ বেঞ্জামিন পিচ ও জন হরনে গবেষণা করে জানান, পাইপ শিলা ক্যামব্রিয়ান যুগে জমা পাললিক শিলার ক্রমবিবর্তিত রুপ। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ের রেকর্ড এখানে সংরক্ষিত, যখন বহুকোষী জীববৈচিত্র্যের প্রথম চেহারা তৈরি হতে শুরু করে। এটি বিখ্যাত ট্রাইলোবাইটস্‌ প্রজাতিরও উৎপত্তিস্থল।

তারা জানান, এই শিলা উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলের পাথরের অনুরুপ। যা প্রথমে সমুদ্রে জমা হয়েছে, পরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আর্ডভ্রেক দুর্গের মতো অনেকগুলো পর্বতমালা গঠন করেছে। পাহাড় গঠনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর ক্যামব্রিয়ান পাললিক শিলা জমা হয়েছে আর ক্রমান্বয়ে রুপ নিয়েছে পাইপ শিলায়। ‘ক্যালেডোনিয়ান পর্বত’ অঞ্চলে এ ঘটনা ৪৩০ থেকে ৪৭০ মিলিয়ন বছর আগে ঘটেছিল।

এই বিখ্যাত স্কটিশ পর্বতমালা নিয়ে পিচ ও হরনের প্রথম ওই গবেষণা থেকেই পর্বত গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি।

এ অঞ্চলের আরেকটি বিখ্যাত ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্র মইনি থার্স্ট, যেখানে পুরনো ‘লেওসিয়ান নিসিক’ যুগ থেকে নতুন ‘ক্যামব্রিয়ান কোয়ার্টজাইট’ যুগের সূচনালগ্নের ইতিহাস নিহিত।

দুই বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদদের এসব আবিষ্কার আজও আমাদের মাঝে সূক্ষ ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান তৈরি করছে। পাথর বেঁকে, ভেঙে খান খান হয়ে বা জমে জমে আজকের আধুনিক পর্বতমালা ও সক্রিয় ফল্ট জোন গঠন প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর ইতিহাস জানতে সহায়তা করছে। জানাচ্ছে বিবর্তনের সকল ইতিহাসও।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।