ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কোকেশি পুতুল এখন ধন-সম্পদেরও প্রতীক!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কোকেশি পুতুল এখন ধন-সম্পদেরও প্রতীক! জাপানি কোকেশি পুতুল

শত শত বছর আগে জাপানের তোহোকুতে জন্ম নেওয়া মূর্তি পুতুল কোকেশি সম্প্রতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ছোটদের কাছে আদরের এ কাঠের পুতুলটি ব্যাপকভাবে সংগ্রহ করছেন বড়রা।

এক অর্থে কোকেশি পুতুল তুষারের কাছে তাদের অস্তিত্বের জন্য ঋণী। তাদের মৃদু, অচপল অভিব্যক্তি শিলাবৃষ্টির সঙ্গেই তুলনীয়।

জাপানের পর্বতময় উত্তরাঞ্চলের তোহোকু এলাকার তুষারপাতের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এর সৃষ্টি।    

প্রায় ২০০ বছর আগে কোকেশি পুতুলের প্রথম রূপায়ন করেন কয়েকজন কাঠুরে। তারা দেশের দক্ষিণ থেকে কাজের খোঁজে এসেছিলেন  ঘন বনভূমির তোহোকু অঞ্চলে, যার ডাক নাম মিকিনোকু বা পেছনের সড়ক। প্রত্যন্ত এ অঞ্চলটি এতো দূরবর্তী ছিল যে, বছরের বেশিরভাগ সময় তাদের কাজ থাকতো না। তারা সংগৃহীত কাঠ দিয়ে খাবারের থালা-বাসন তৈরির পর অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করে তাদের শিশুদের জন্য খেলনা তৈরি শুরু করেন। কোমা, কেনডামা, ফ্যাশয়নিং নামের পুতুলের পাশাপাশি তৈরি করে ফেলেন মূর্তি পুতুল কোকেশিও।
তুষার আবৃত রাস্তার পাশে কোকেশি পুতুলতবে, একবার শীতকালে খুব ঠাণ্ডা পড়ায় তোহোকু ছেড়ে কাঠুরেরা আশ্রয় নেন  পাশের প্রাকৃতিক উষ্ণ ঝরনা সংলগ্ন ওনসিয়েন এলাকায়। শীতকাল জুড়ে পাহাড়ের মধ্যে কাজ করা সম্ভব ছিল না, ওনসিয়েনের গ্রীষ্মসদৃশ আবহাওয়‍াকে থেকে ক্লান্তি দূরের কাজে লাগান তারা।

ওই মুহূর্তে কিছু উপার্জনের প্রয়োজনে তারা পর্যটকদের কাছে কোকেশিসহ পুতুলগুলো বিক্রি করতে থাকেন।  

খুব শিগগিরই পুতুলটি পুরো ওনসিয়েন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তোহোকুসহ সংলগ্ন ১১টি এলাকায় এখন প্রথাগত কোকেশি তৈরি করা হয়। প্রতিটি এলাকার পুতুল অনন্য এবং মোটিফ হিসেবে স্থানীয় মানুষ, ইতিহাস, গাছপালা ও লোকাচারবিদ্যার বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত।

যেমন- আওমোরির সুগারু এলাকায় তৈরি পুতুলকে জাপানের আদিবাসী আইনু সম্প্রদায়ের নিদর্শনে সজ্জিত করা হয়। আবার নারুকো ওনসিয়েনের মিয়াগির পুতুল মাথা ঘুরিয়ে চিঁ-চিঁ, করে কান্না করে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাদুনে শিশু’।

পুতুল তৈরির উপকরণও ভিন্ন ভিন্ন। যেখানে তৈরি করা হয় সেখানকার উপকরণই ব্যবহার করেন কারিগররা। যেমন, দেশটির সামুদ্রিক অঞ্চলে কঠিন ও সাদা রঙের ডগউড কাঠ সহজলভ্য থাকায় সেটি দিয়ে তৈরি কোকেশিতে জাপানের সমুদ্র আঁকা থাকে। যার রং হলুদের কাছাকাছি।
নিজের তৈরি কোকেশি পুতুলের সঙ্গে কারিগর মাসাফুমি আবো
‘এভাবেই আজ তোহোকুসহ ওইসব অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে কোকেশি পুতুল’- ব্যাখ্যা দেন আওমোরির মাসাফুমি আবো, যিনি সুগারুর পঞ্চম প্রজন্মের কোকেশি কারিগর।

মাসাফুমি আবো জানান, প্রথমে পুতুলগুলো শুধুমাত্র শিশুদের খেলনা হিসেবে বিক্রি করা হয়। কিন্তু একটা সময় পরে প্রাপ্তবয়স্ক সংগ্রাহকদের কাছে সংগ্রহের আইটেম হিসাবে সমাদৃত হতে থাকে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যেই শিল্পী ও ঔপন্যাসিক তাইশোয়ের মতোই সমান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কোকেশি পুতুল। ১৯৬০-৭০ দশক থেকে এ পুতুল কেনা বয়স্ক ক্রেতাদের কাছে তাদের ধনী অবস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

ফলে ব্যাপক মাত্রায় এখন কোকেশি পুতুল সংগ্রহের দিকেই ঝুঁকেছেন জাপানিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।