নাচে গভীর বিবর্তনীয় শিকড় আছে বলে উল্লেখ করে গবেষকরা জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের বিবর্তনেই এ দক্ষতা অর্জন করেছে মানুষ। আর শিল্পী পাখিরা কণ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে যেমন মানুষের বক্তৃতা ও গান অনুকরণ করতে পারে, একইভাবে অনুকরণের মাধ্যমেই নাচ শিখে নেয়।
যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যশিল্পী ও পাখি বিশেষজ্ঞ নিকি ক্লেটন যুক্তি দেন যে, ‘কিছু পশু-পাখির অনুকরণের দক্ষতা শক্তিশালী হওয়ায় ব্যালে ও সমসাময়িক নাচের মুদ্রাগুলো মানুষের কাছ থেকে শেখে। আবার গান বা বক্তৃতার অনুকরণ শিখতে কণ্ঠ শিক্ষার ক্ষমতাও প্রয়োজন। কণ্ঠ শিক্ষার্থী পাখিদের দু’টি ক্ষমতাই থাকায় একটি বাদ্যযন্ত্রের বিটের সঙ্গে নাচতে পারে তারা’।
তবে সবকিছুর মূলে রয়েছে মস্তিষ্কের বিবর্তন। মানুষের মস্তিষ্ক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ভালো নৃত্যশিল্পী হতেই প্রথম থেকেই সহায়ক। কণ্ঠ শিক্ষার্থী পাখিদের মস্তিষ্ক নিয়ে ২০০৮ সালের একটি গবেষণায় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে যে, এ বিবর্তন কেন তাদের সঙ্গেও সম্পর্কিত। গবেষকরা জানান, ওই পাখিদের মস্তিষ্কের যে অংশ কণ্ঠশিক্ষার সঙ্গে জড়িত, এর পরেরটি শারীরিক নড়াচড়ার জন্য নির্ধারিত। সমগ্র অংশটির বর্তমান বিদ্যমান পথটি আদিকাল থেকে বিশেষায়িত হিসাবে বিবর্তিত হয়েছে।
‘কণ্ঠশিক্ষা হাইপোথিসিস’ নামের এ তত্ত্ব অনুসারে, তোতাসহ অধিকাংশ শিল্পী পাখি, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের মধ্যে তিমি, ডলফিন ও শুশুক এবং পিননিপেডস্ বা সমুদ্র সিংহরা কণ্ঠ শিক্ষার্থী হওয়ায় বিটের সঙ্গে নাচের এ দক্ষতা অর্জন করেছে।
এমনকি আমাদের আরও দূরবর্তী কিছু প্রাণীরও সহজাত নাচুনে ক্ষমতা রয়েছে। যেমন পেচানো গোল পায়ের বেহালাবাদক কাঁকড়া তাদের থাবা দিয়ে নাচের মতো তরঙ্গ প্রদর্শন এবং পা-ঝিমুনি ব্যাঙ তাদের পায়ের অঙ্গভঙ্গি দিয়ে ছন্দ সৃষ্টিতে সক্ষম। জেব্রা ফিঞ্চ ও এক ধরনের রাজহাঁসকেও নাচের ছন্দের সংবেদনশীল সম্পন্ন বলে শনাক্ত করা গেছে, যারাও বহিস্থিত তালের সঙ্গে অন্যান্য আচরণের সমন্বয় সাধন করতে পারে।
ফ্লোরিডার সারাসোতা নিউ কলেজের পিটার কুক বলেন, ‘মস্তিষ্কের বিবর্তন মানুষের নৃত্য দক্ষতার মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। একটি সামাজিক প্রেক্ষাপটে ছন্দ ও তালের দক্ষতা ইন্দ্রিয়ে সন্নিবেশিত হয়েছে এবং এটি সামাজিকভাবে ব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে জীবজগতে বিতরণ করা হয়েছে’।
আমাদের নিকটতম আত্মীয়দের মধ্যে প্রাইমেট প্রজাতির কয়েকটির নাচের দক্ষতা থাকলেও বানর কেবলমাত্র ড্রাম বাজাতে ও পেঁচার ডাক অনুকরণে সক্ষম। শিম্পাঞ্জিরা আমাদের আরও ঘনিষ্ঠ হলেও তাদের আঙুল কেবলমাত্র লঘু তাল অনুসরণ করতে পারে।
নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হেনকজান হনিং মনে করেন, মানুষের বানরের চেয়ে বড় ঘিলু আছে। তাদের শ্রবণ প্রক্রিয়া টেক্সটভিত্তিক ও আমাদের চেয়ে দুর্বল।
নাচকে কেবলমাত্র অনুকরণের একটি উপজাত বলে উল্লেখ করেন ক্লেটন ও তার সহকর্মীরা। তাদের মতে, নৃত্য দক্ষতার আরও প্রভাবক আছে। এক্ষেত্রে গান, নাটক বা বিট বোঝার দক্ষতা এবং অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত শরীরের নড়াচড়া প্রয়োজন। এগুলো না থাকায় আমাদের নিকট আত্মীয় হয়েও দক্ষ নাচিয়ে হতে পারেনি বানর-শিম্পাঞ্জিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
এএসআর