সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ২০০ থেকে ১ হাজার মিটার গভীর এলাকাকে গোধূলী জোন বলা হয়। আলো-বাতাসহীন এ জোনে উদ্ভিদ না জন্মালেও এখানে কমপক্ষে এক মিলিয়ন অভিযোজিত প্রাণীর আবাসস্থল।
সাম্প্রতিক গবেষণা আরও বলছে, গোধূলি জোনের ব্রিস্টলমাউথ মাছের সংখ্যা, এতো বেশি যে, এটি বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষের মৎস্যখাদ্যের চাহিদা পূরণ ছাড়াও কৃষি সমৃদ্ধকরণে সহায়তা এবং শুকর ও মুরগিসহ পশুদের প্রোটিন যোগাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দীর্ঘ আফ্রিকান মহীসোপানের গোধূলি জোনে বাস করে সুবিশাল সংখ্যক ল্যান্টারফিস। আর সেখানকার উপকূলে ল্যান্টারফিস জৈববস্তুপুঞ্জের পরিমাণও ১৮ মিলিয়ন টন।
মাছ ধরা বিশ্বব্যাপী একটি বিশাল শিল্পে পরিণত হলেও এসব মৎস্য সম্পদের অধিকাংশই এখনো মানুষের কাছে অধরাই রয়ে গেছে। তবে ভারত, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও জাপানের উপকূল এবং আরব সাগরের গোধূলি জোন থেকে সীমিত পরিসরে মৎস্যখাদ্য আহরণের কার্যক্রম চলছে।
যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো স্ট্রাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মাইক হিথ বলেন, ‘প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত এটি একটি প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপে পরিণত হতে পারেনি। তবে শিপিং খরচ পুষিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ মাছ ধরা পড়ায় প্রমাণিত হয়েছে যে, গোধূলি জোনে পাওয়া যেতে পারে পুষ্টি সমৃদ্ধ বিশাল মৎস্য সম্পদ’।
গোধূলি জোন নিয়ে গবেষণা শেষে ডেনমার্কের কারলোটেনলান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানী মাইকেল সেন্ট জন বলেন, গোধূলি জোন সমুদ্রের অন্যান্য স্তরের তুলনায় জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ। এ জোনের মাছ সুস্থ হয়। উচ্চ বৃদ্ধির হার, ডিম ছাড়ার হার ও বেঁচে থাকার হারের কারণেও এ এলাকার মৎস্য মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য বেশি উপযুক্ত’।
উত্তর আটলান্টিক সাগরের গোধূলি জোনে অপেক্ষাকৃত অগভীর পানির প্রজাতি উচ্চ সংখ্যায় পাওয়া যায়। মহীসোপানের বরাবর সমষ্টিগত এ এলাকায় নীল-সাদা টুনা, ডলফিন, হাঙ্গর ও তিমি থেকে শুরু করে পাখিসহ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের প্রাণিজ খাদ্যের প্রধান উৎস।
অন্যদিকে আপওয়েলিংস নামে পরিচিত মহাসাগর অঞ্চলের একটি ঘনীভূত এলাকাও ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনসহ পুষ্টি সমৃদ্ধ সামুদ্রিক খাদ্যের একটি বড় উৎস। অত্যাধুনিক ইমেজিং প্রযুক্তি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোনা জল, ম্যাগমা বা অন্যান্য তরলের ক্রমবর্ধমান এ ‘হট স্পট’ এ তাদেরকে আগের চেয়ে আরও সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে সহায়তা করছে।
পেরু থেকে নামিবিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে আপওয়েলিংস এলাকা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ হট স্পট ওমান সাগরে আনুমানিক ২০ মিলিয়ন গোধূলি জোনের মাছও অভিযোজিত হয়েছে।
সেন্ট জন বলেন, ‘গভীর জলের বা গোধূলি জোনের মাছের খাদ্য জারিত হয়, পরিণামে নিষ্কাশিত হয়ে আপওয়েলিংস এলাকায় ফিরে আসে। আবার কার্বন পৃষ্ঠস্তর গভীরতা থেকেও স্থানান্তরিত হয় গোধূলি জোনে। এসব অঞ্চলের মাছ চাষ ও আহরণও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
এএসআর