যে কোনও উৎসবে মানুষ অনেক কিছুর মতো খাওয়া-খাদ্যর দিকে বিশেষ ঝোঁক দেখায়। বিয়ে-শাদি, ধর্মীয়-সামাজিক অনুষ্ঠানে অঢেল খাবারের ঢল নামে।
আদিম মানুষ রন্ধন প্রক্রিয়ায় অজ্ঞ ছিল। আকস্মিক দাবানলে ঝলসানো পশুপাখি ও ফলমূলের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয়। তারপর আগুন জ্বালাতে শিখে মানুষ রন্ধন প্রক্রিয়ার একটি বড় ধাপ পার হয়। এরই মাঝে মানুষ মশলার মধ্যে সর্বাগ্রে নুনের পরিচয় ও ব্যবহার জানতে পারে। বিশেষ করে সমুদ্র তীরবর্তী মানুষের ভাগ্যে এই সুখের স্বাদ সহজে আয়ত্ত হয়েছিল। তারপর থেকে লক্ষ লক্ষ বছর ধরেই রন্ধন ধারার বিবর্তন রথটি এগিয়ে চলতে লাগল। দেশে দেশে দেখা গেল এর ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও চারিত্র্য।
সম্ভবত মধ্যযুগ থেকে মানুষ ভোজের রূপের দিকে নজর দিতে শুরু করে। ভোজের রূপ, রস, গন্ধও তাকে খাবারের মতই আনন্দ দিতে থাকে। অনুভব করতে শুরু করে স্বাদ। একমাত্র কান ছাড়া আর চারটি ইন্দ্রিয় দিয়ে মানুষ পৌঁছে যায় ভোজের আনন্দ-জগতে। এরই ধারাবাহিকতায় চলে আসে খাদ্য তালিকা বা মেনু। ভোজ কেবল খাদ্য গ্রহণ মাত্র নয়, হয়ে উঠে খাদ্য-বিষয়ক এক আনন্দযজ্ঞ। ভোজের তারতম্যের মাধ্যমে ফুটে উঠে খাদ্যাভাসের পার্থক্য। খাওয়া আর খাবারের তালিকার উপর নির্ভর করে তৈরি হয় খাদ্য-সংস্কৃতি। চীনের কথা মনে হলেই চীনাদের বিশিষ্ট খাদ্য তালিকা ও ভোজন বিশেষত্ব চোখের সামনে চলে আসে।
এমন কথা বলা যায়, পৃথিবীর সকল দেশ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রেও। কেবল ভাষা বা পোশাক বা আচরণ নয়, খাদ্য ও খাদ্য তালিকার পার্থ্যককে সামনে রেখে গবেষকরা নানা দেশ ও নানা মানুষকে বিশেষায়িত করার কাজটিও করতে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, বায়কুল্লা সুফলের রন্ধনবিধির কথা। বায়কুল্লা মধ্য মুম্বাই-এর একটি অঞ্চলের নাম। একদা এখানে মুম্বই-এর গভর্নরের বাসভবন ছিল। আর ছিল অভিজাত বায়কুল্লা ক্লাব। সেখানে একটি বিশেষ খাদ্য-পদের প্রচলন ছিল। খাবারটি এতই রহস্যময় যে, প্রধান পাচক বায়কুল্লা সুফলের পাকপ্রকরণ কাউকে বলতে চাইত না। একদল বাবুর্চি কেবল বংশ পরম্পরায় এই বিশেষ খাদ্যটির রন্ধনশৈলী সম্পর্কে জ্ঞাত থাকার সৌভাগ্য পায় এই শর্তে যে, বাইরের কাউকে খাদ্যটি রান্না করার গুপ্ত-মন্ত্র জানাবে না।
বিশেষ সুপারিশে অনেক সময় সুফলে রান্না করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তখন নানা জায়গা থেকে ধরে ধরে আনা হয় এই খাদ্যটির মুষ্টিমেয় রন্ধন-শিল্পীকে। ইন্দিরা গান্ধী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, তখন তিনি সুফলে খেতে চাইলেন। দিল্লিতে মধ্য মুম্বাই অঞ্চলের অতি বিরল খাবার পাওয়া যাবে কিভাবে! আর প্রধানমন্ত্রী তো শুধু খাদ্য গ্রহণের জন্য রাজধানীর সকল রাষ্ট্রীয় কাজ ফেলে পেটুকের মত ছুটে যেতে পারেন না মুম্বাই! অতএব ধর ব্যাটাদের, যারা জানে এই লুক্কায়িত রন্ধন-প্রণালী। মুম্বাই-এর প্রায় সকল সুফলে রান্না-বিশেষজ্ঞকে তুলে আনা হলো দিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রীর হেঁসেলে শুরু হয় যজ্ঞের উৎসব। সবাই মিলে দেবভোগ্য সুফলে প্রস্তুত করে ফেললেন রন্ধন-কারিকরগণ। সুফলে খুবই তাপ সংবেদনশীল। অর্থাৎ, তাপের কম-বেশি হয়ে গেলে সুফলেটি তার স্বাদের মর্যাদা হারায়, রূপও ভ্রষ্ট হয়। বিশেষ প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকায় সুফলে শিল্পীরা উপযুক্ত সময়ে চূড়ান্ত দশায় সেটি পরিবেশন করেন প্রধানমন্ত্রী ও তার পারিষদকে। খেয়ে সকলেই ধন্য ধন্য করতে লাগলেন। তারপর থেকে এই বিশেষ পদটির নাম হয়ে যায় ‘ইন্দিরা সুফলে’।
ইংরেজদের কথাই ধরা যাক। বিখ্যাত ইংলিশ ব্রেকফাস্ট মানেই বেকন অ্যান্ড এগ। খাবারটা নেহাতই আটপৌরে। কিন্তু যত্ন নিলে খুবই সুস্বাদু হয়ে টেবিলে আসে এই ইংলিশ খাবার। সদ্য ভাজা বেকনের সুবাসে মুগ্ধ হয়-না, এমন মানুষ বিরল। বহু ইংরেজ-বিদ্বেষীও সকালের নাস্তায় ইংলিশ ব্রেকফাস্টকেই প্রথম ও প্রধান পছন্দের জায়গাটি ছেড়ে দেয়।
রন্ধনশৈলী ও রান্নার বাহাদুরির জন্য অনেক সময় বহু সাধারণ ও অতিপরিচিতি খাবারও অনন্য হয়ে যায়। রান্না আর পরিবেশনের গুণে বহু অতি সাধারণ খাদ্য বিশেষ মর্যাদাও লাভ করে। যেমন পিসপ্যাস। প্রায় ফেনভাতের মত এই পদে সামান্য মশলার স্পর্শ থাকে। ভাল চাল, অতি অল্প পরিমাণে ডাল, দু’এক খণ্ড আলু, কয়েক টুকরা বাঁধাকপির পাতা সহযোগে এই পদটি নিরাপদ-আহারপ্রিয়দের অতি প্রিয়। অসুস্থ না-হয়েও অনেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই খাবারটির উপর নিত্য ভরসা করেন। যারা স্বাস্থ্যের চেয়ে মুখরোচক দিকটি দিয়ে খাদ্য বিচার করেন, তারা পিসপ্যাসে সামান্য গব্যঘৃত সংযুক্ত করলে অলৌকিক অমৃতের স্বাদ পেতে পারেন।
আধুনিক পরিস্থিতির ব্যস্ততায় মানুষের পক্ষে সর্বদা মুখরোচক খাবার আস্বাদন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে কুইক লাঞ্চ বা ফার্স্ট ফুডের রমরমা ব্যবসা শুরু হয়। কাজের ফাঁকে বা কাজ করতে করতে খাওয়া যায়, এমন খাদ্য সামগ্রীই মানুষকে আকর্ষণ করতে থাকে। বিশ্বব্যাপী কুইক লাঞ্চ বা ফার্স্ট ফুডের আধিক্য বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনের কারণও এই ব্যস্ততা। চিকিৎসক বা পুষ্টি বিজ্ঞানীদের নানা সর্তকতা ও সাবধান বাণীর পরেও কুইক লাঞ্চ বা ফার্স্ট ফুডের প্রচলন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। আজকে শুধু উন্নত বিশ্ব নয়, অনুন্নত দেশ, এমন কি, গ্রামাঞ্চলেও কুইক লাঞ্চ বা ফার্স্ট ফুডের প্রসার ঘটেছে। মজাদার ও উপভোগ্য খাদ্য গ্রহণের জন্য যে সময় ও পরিবেশ দরকার সেটা না-পেয়েই কুইক লাঞ্চ বা ফার্স্ট ফুডের দিকে চলে আসছে মানুষ। ম্যাগডোনাল্ড তো কুইক লাঞ্চ বা ফার্স্ট ফুডের জগতে একচ্ছত্র রাজা। বিশ্বব্যাপী তাদের জয়জয়াকার অবস্থা। তবে উৎসবে, ছুটির দিনে বা বিশেষ আয়োজনে কিংবা আউটিং-এর সময় মন-পছন্দ খাবার নিয়ে মানুষজন দীর্ঘ সময়ের উপভোগ্য খাদ্য আস্বাদন পর্বেও অংশ নিচ্ছেন।
বিশেষ খাদ্যের মধ্যে ভারতীয় ডিস, যেমন মোগলাই বা সাউথ ইন্ডিয়ান ফুডের কদর রয়েছে। স্পেনিয় বা ইতালিয় খাবারও অনেকের পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে। প্রচণ্ড ঝালের জন্য মেক্সিকান ফুডের সুনাম বা দুর্নাম রয়েছে। কমন খাদ্য হিসাবে চাইনিজ, থাই ফুডের সমাদর বিশ্বব্যাপী অক্ষুন্ন। হাঙ্গেরিয়ান গোলাস বা নেপালি মেমো, ব্রিটিশ স্টু বিশেষ মর্যাদায় খাদ্য তালিকায় চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বিলাতে সাধারণও ইন্ডিয়ান ফুড নামে যা বিক্রি হয়, তা আসলে বাংলাদেশি খাবার। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের মানুষজন একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করেছেন হোটেল-রেঁস্তোরা ব্যবসায়।
খাবারের কথা এলেই চলে আসে রন্ধন-লল্পী বা পাচকের নাম। ইংরেজিকে যাদেরকে বলা হয় শেফ। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ হোটেলগুলোর শেফ বলতে গেলে সকলেই পুরুষ। আমাদের দেশেও কোন নারী বাবুর্চির নাম শোনা যায় নি। অথচ রান্না ঘর বা হেঁসেলের উপর কর্তৃত্ব কিন্তু পুরুষের নয়, মেয়েদের। বাংলাদেশেও কেউ কেউ রান্নার কাজে নারীদের হার মানান। প্রখ্যাত পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসানের ছিল রান্নার নিপুণ হাত। চমৎকার চমৎকার ডিস রান্না করে তিনি তাক লাগিয়ে দিতে পারতেন। বিশ্বের নানা দেশের রান্না ও খাদ্য সম্পর্কেও ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান। আমার পছন্দের দেশ-বিদেশের রান্না নামে তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহ্য থেকে। জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকও রান্নার ব্যাপারে বিশেষ পারদর্শি ছিলেন। অকৃতদার এই পণ্ডিতের খাদ্যজ্ঞান বলতে গেলে ছিল তীক্ষ এবং অনন্য সাধারণ।
রান্না ও খাদ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞানে পালাবদলও একটি অসাধারণ ঘটনা। তেল, মশলা, নুনের ব্যবহার সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়। বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিসাবে সুনাম রয়েছে জাপানিজ ফুডের, যা বলতে গেলে সেদ্ধ বা আধা-সেদ্ধ খাবার। এক সময় স্বাস্থ্য ও আভিজাত্য রক্ষার্থে বিরিয়ানি বা মোসল্লাম খাওয়ার প্রবণতা থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে মাছ এবং সবজিই স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। সুপাচ্য খাবার বলতে সহজ ও কম তেল-মশলার খাবারকেই বোঝানো হচ্ছে। অনেকে তো এমনও রয়েছেন যে, সেদ্ধ শাক-পাতা-সবজি খেয়ে দিব্যি আছেন। অবশ্য পৃথিবীতে আমিষভোজী আর নিরামিষভোজী বলে দুটি পরিষ্কার বিভাজন চলে আসছে অনাদিকাল থেকেই। ধর্মগত কারণ ছাড়াও অনেকেই স্বাস্থ্যগত কারণেও নিরামিষের দিকে ঝুঁকে আছেন। হিন্দু ব্রাহ্মণ এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বলীরা প্রধানত নিরামিষভোজী হলেও এখন অনেকেই আমিষের স্বাদ চেখে দেখছেন। ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলে নিরামিষভোজের বাহার অসাধারণ। নিরামিষের বিভিন্ন পদ রসনা তৃপ্ত করার জন্য যথেষ্ট। সেখানে আমিষের অভাব পূরণ করার জন্য প্রচুর পণির ও দুগ্ধজাত উপাদান ব্যবহার করা হয় খাদ্য সামগ্রীতে। দক্ষিণ ভারতের মতোই শ্রীলঙ্কাতেও বিভিন্ন খাদ্যের সঙ্গে নারিকেল বা নারিকেলের তেলের ব্যবহার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সমুদ্র উপকূলে প্রচুর নারিকেল গাছ হওয়ায় খাদ্যে তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার কোথাও কোথাও নারিকেলের তৈরি বিচিত্র খাবার রয়েছে। রান্নাতেও ব্যবহার করা হচ্ছে নারিকেলের তেল ও উপাদান।
আশ্চর্য হওয়ার মতো ব্যাপার হলো, এই বিংশ শতাব্দীতেও পৃথিবীর কোনও কোনও স্থানে আগুনে পুড়ে প্রায়-কাঁচা খাবার গ্রহণের রেওয়াজ রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে। মানুষের মাংস খেয়ে ফেলার মতো মানুষ-খেকো এখন রয়েছে কি-না, সেটা জানা না-গেলেও এটা জানা যায় যে, আফ্রিকার কোনও কোনও নিভৃত অংশে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিশেষ কিছু প্রত্যন্ত দ্বীপে এখনও প্রায়-কাঁচা খাবার গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে কোনও কোনও আদিবাসী জনগোষ্ঠী। ভারতের মধ্য প্রদেশের গভীর জঙ্গলে বসতি স্থাপনকারীরা আদিম খাবার ভক্ষণ করে বলে পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছিল।
খাদ্য হিসাবে সবচেয়ে দামি বস্তুটির নাম জানতে চাওয়া হলে সহজে উত্তর পাওয়া যাবে না। দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর দামি খাবারের তালিকায় রয়েছে সাপ। জ্যান্ত সাপ কিংবা মৃত সাপের কিমা উপাদেয় পদ্ধতিতে রান্না করা হলে সেটা দামে ও স্বাদে সেদেশের মানুষের কাছে মহার্ঘ্য খাদ্য হিসাবে গণ্য হয়। সঙ্গে কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাসের ছানা প্রভৃতি সি-ফুডও মূল্যবান খাদ্যদ্রব্যরূপে গৃহীত। দূরপ্রাচ্যে বা সমুদ্রবর্তী স্থানে যেমন সি ফুডের কদর বেশি, তেমনি মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য বা পশ্চিম এশিয়ায় বিভিন্ন পশুর মাংসের কদর অত্যাধিক। এসব দেশে ঝোলের বদলে কাবাব ও রোস্টের প্রচলন অধিক। পশ্চিম ভারত থেকে শুরু করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্কে যে কত বিচিত্র ধরনের কাবাব পাওয়া যায়, তা কেবল প্রকৃত ভোজন রসিকই জানেন। কাবাব ও বার-বি-কিউ ধরনের আগুনে পোড়ানো নানা মশলার সংমিশ্রণে প্রস্তুত জিভে-জল আনা স্বাদযুক্ত খাবারে কথা ভাবলেই মধ্যএশিয়ার সমরখন্দ, বোখারার নাম চলে আসে। এ সকল অঞ্চলের খাবারে প্রচলিত মসলার সঙ্গে কিসমিস, আলু-বোখারা, বিভিন্ন জাতের বাদাম প্রভৃতি শুষ্ক ফলও ব্যবহৃত হয়। প্রকৃষ্ট ও নির্ভেজাল ঘি যুক্ত খাবারগুলো গুরুপাচ্য, উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন হবে, সেটা বলাই বাহুল্য।
খাদ্য নিয়ে বহু কথা বলা যায়। আদিম ও প্রাচীন মানুষ মধ্যযুগের রাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পেয়েছিল বহুবিচিত্র উপাদেয় খাদ্য। মুঘল দরবার ভারত এবং বিশ্বের খাদ্য-চর্চ্চার ইতিহাসে বোগদাদ ও দামেস্কের মতোই প্রসিদ্ধ। মুঘলদের অনেক কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে রেজালা আর বিরিয়ানির নাম। কাচ্চি বিরিয়ানির প্রবর্তনকারী সম্রাজ্ঞী নূরজাহান। সম্রাট জাহাঙ্গীর ও সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের বিবাহ বার্ষিকীতে অভ্যাগত অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য মৃগনাভি সুরভিত জাফরানি কাচ্চি বিরিয়ানি পরিবেশনের ব্যবস্থা করেন এই মহিয়ান মুঘল রমণী।
কিন্তু আধুনিক কালের বিশ্বায়ন-তাড়িত দ্রুতলয় বিশ্ব-ব্যবস্থাধীন পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ খাদ্যকে জাঙ্ক ফুড বা ফার্স্ট ফুডের স্থরে নামিয়ে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকেই উপহার দিয়েছে দারিদ্র্য নামের খেতে না-পারার দুঃখ। নিজে খাওয়ার আনন্দের সঙ্গে নিরন্ন ও অভুক্তকে আহার করানো মাধ্যমে বিমলানন্দ উপভোগ করাতেই রয়েছে প্রকৃত তৃপ্তি। খাওয়া বা ভোজের সময় এই চিরায়ত সত্যটি আমরা যেন বিস্মৃত না হই।
ড. মাহফুজ পারভেজ, কবি ও লেখক, অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, mahfuzparvez@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৭
জেডএম/