স্মার্ট ফোন হাতে নিয়ে তরুণরা যখন গ্রুপ ছবি তোলে বা কোনো কিছু শেয়ার করে তখন এক মাথা থেকে আরেক মাথায় উকুন ছড়িয়ে পড়ে।
স্মার্ট ফোন বা ট্যাব রয়েছে এমন ২০০ এর অধিক তরুণ-তরুণীর মধ্যে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসমস্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারী আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি উকুন-আক্রান্ত হয়।
এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেক সংখ্যা যাদের মাথায় ৫ বছর আগে উকুন ছিল, তাদের মাথার উকুন ২ থেকে শতকরা আট ভাগ বেড়ে গেছে। এটা অতীত সময়ের চাইতে পরিমাণে ২২ গুণ বেশি।
কিছু দিন পূর্বের এক গবেষণায় বলা হয়েছিল যে, নিয়মিত সেলফি তোলার কারণে উকুন ছড়ায়। কিন্তু এটিই আসলে উকুন ছড়ানোর বড় কারণ নয়।
২০১৫ সালে প্রথম উইসকনসিন জিপি শেরন রিঙ্ক জানান দেন যে, গ্রুপ সেলফি তোলার সময় সঙ্গীরা যখন পরস্পরের মাথা পাশাপাশি নিয়ে আসে তখন অলক্ষেই এক মাথার উকুন অন্য মাথায় চলে আসে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটালস এএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টেও ডা. টেস ম্যাকফারসন বলেন, উকুন বাড়ার সঙ্গে আমাদের পূর্বের হিসেব মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে এর ব্যাপকতা বেশি। গত পাঁচ বছর আগের শিশুদের নিয়ে করা জরিপের প্রায় অর্ধেকের মাথায়ই উকুন ছিলো। বিষয়টি হয়তো অভিভাবকদের অবাক নাও করতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা এটাও বলেছি যে, যে সমস্ত শিশু স্মার্ট ফোন বা ট্যাব ব্যবহার করে তাদের মধ্যে উকুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিষয়টা মনোযোগ দেবার মতো হলেও আমরা যা ধারণা করে বলতে পারি তা হলো, তরুণরা পরস্পরের কাছাকাছি আসার কারণে উকুন ছড়াতে পারে। তবে উকুন ছড়ানোর অন্য আরও কারণও থাকতে পারে।
সেলফি বিষয়ে ডা. টেস ম্যাকপেরসন আরো বলেন, সেলফি বিষয়ে আমাদের অতীতের যে নেতিবাচক মূল্যায়ন উঠে এসেছে এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। বর্তমান এ সময়ে এসে উকুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য শুধু সেলফি কান্ডকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।
যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডার্মাটোলজিস্টস এর বার্ষিক এক সম্মেলনে এ গবেষণা প্রকাশ করা হয়। সম্মেলনে বলা হয় যে, মাথায় উকুন ছড়িয়ে পড়ার কারণটা হতে পারে ঐতিহ্যগত।
ছয় থেকে নয় বছরের ছেলে-মেয়েরা উকুন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে বেশি।
ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডার্মাটোলজিস্টস এর প্রতিনিধি ম্যাথিউ গাস বলেন, মাথার উকুন শিশু ও মাতা-পিতা সবার জন্য যন্ত্রণাদায়ক।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি উকুনকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ও অনেক ক্ষেত্রে সময়সাপেক্ষ। এ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার প্রচেষ্টাটাই যুক্তিসংগত। ঠিক কত সময় এরা অবস্থান করে এটা জানা এতটা জরুরি নয়। তার চাইতে এ পোকাটি কিভাবে ছড়ায় সেটা জানা হবে উপকারি।
তিনি বলেন, আরোগ্যের চাইতে প্রতিরোধটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি চাইলে আক্রান্ত মাথায় ভালো চিরুনি চালাতে পারেন কিংবা উকুন প্রতিরোধে ঔষুধও ব্যবহার করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা কেবল এটাই বলছি না যে স্মার্ট ফোনই শুধু শিশুদের মাথায় উকুন বাড়ায়। তবে উকুন ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়ায় এর একটা যোগসূত্র রয়েছে। যদি বাড়িতে বা স্কুলে এর মাত্রা বাড়ে তাহলে ভেবে দেখুন ইলেকট্রনিক ডিভাইস কিভাবে শিশুদের এক করছে আর মাথার উকুন বাড়াচ্ছে।
উকুন উড়তে বা লাফাতে পারে না। এটি চিরুনি, মাথার টুপি কিংবা বালিশের মাধ্যমেও আরেক মাথায় ছড়াতে পারে। একটা কুসংস্কার প্রচলিত আছে যে, উকুন পরিষ্কার বা ময়লা চুল, লম্বা না খাটো চুল তা বাছাই করে আসে না। মাথা থেকে আলাদা হবার ১২-১৪ ঘণ্টা পরই এগুলো মারা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০২১১ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৭
জিওয়াই/জেএম