ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

শিকারের পর চিতা কেন গাছে উঠিয়ে খায়?  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৭
শিকারের পর চিতা কেন গাছে উঠিয়ে খায়?   শিকারের পর চিতা গাছে উঠিয়ে খায়

একটি পুরুষ চিতা একটি জিরাফ শিকার করলো। এরপর একটি গাছের ১০ মিটার ওপরে (৩২.৮ ফুট) উঠিয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো মৃত জিরাফটিকে। অথচ, ৩০০ কেজির জিরাফটির ওজন চিতাটির কমপক্ষে পাঁচগুণ বেশি।

যেখানে শিকারের পর পরই মাটিতেই খেয়ে ফেলতে পারতো, সেখানে এতো কষ্ট করে গাছের ওপরে ওঠানো কেন?

প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্যান্য শিকারি প্রাণী শিকারের পরেই খাওয়া শুরু করলেও চিতাবাঘ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। অত্যন্ত পরিশ্রম করে শিকারের পর তার চেয়ে কয়েকগুণ ওজনের মৃত শিকার নিয়ে গাছে উঠে তারপর খাওয়া শুরু করে বিড়াল গোত্রের নিশাচর প্রাণীটি।

দেখতে সুন্দর ও ভয়ঙ্কর ক্ষিপ্রগতির চিতাদের এ বৃক্ষচর স্বভাব ও অদ্ভুত আচরণ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ভেবেছেন গবেষকরা। অবশেষে প্রাণী গবেষণা সংগঠন ‘প্যান্থারিয়া’ এর কারণ উদ্‌ঘাটন করেছে। দীর্ঘ দু’বছর অনুসন্ধানের পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় তাদের গবেষণার ফলাফল।

উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার সমভূমি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার স্যাবি স্যান্ড গেম রিজার্ভ সাফারি পার্কের চিতাবাঘদের ওপর ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ওই অনুসন্ধান পরিচালিত হয়।  

অনুসন্ধানে প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, লেপার্ড বা চিতাবাঘ ধারালো নখের আঘাতে এক নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে তার চেয়ে কয়েকগুণ পর্যন্ত বেশি আকারের শিকারকে। কিন্তু শিকারের পর যদি তা টেনে গাছের ওপরে না ওঠায়, তাহলে তাদের খাবার কেড়ে নেয় সিংহ ও হায়েনারা ভাগ বসায়।  

কারণ, চিতা ক্ষিপ্রগতির জন্য বিখ্যাত হলেও অন্য শিকারি প্রাণীর সঙ্গে লড়াইয়ে ততোটা নয়। বরং, লড়াইয়ের পরিবর্তে পালিয়ে যায় এরা। ফলে তারা সিংহ ও হায়েনার হাত থেকে নিজের শিকার বাঁচাতে মৃত শিকার নিয়ে গাছে ওঠে।

নিষ্ঠুর হায়েনারা শিকার কেড়ে নিতে এমনকি চিতাবাঘদের হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। তবে বিনা পরিশ্রমে অন্যের খাবার দখলে পটু হলেও ওরা গাছে উঠতে পারে না- এটি চিতাদের জন্য সৌভাগ্যের।

অনুসন্ধানটি এটাও বলছে যে, চিতাবাঘের শিকারে ভাগ বসায় অন্য চিতারাও। এক্ষেত্রে অন্য একটি চিতার শিকার ছিনিয়ে নিতে পুরুষ চিতা খুবই পারদর্শী।  

অনুসন্ধানী দলের প্রধান গুই বাম বলেন, ‘স্যাবি স্যান্ড গেম রিজার্ভ সাফারি পার্কের ১০৪টি বাঘের ওপর দুই বছরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চিতারা এ সময়ের মধ্যে প্রায় চল্লিশ ধরনের ২ হাজার ২১৫টি প্রাণী শিকার করেছে। এর অর্ধেক তারা টেনে গাছের ওপরে তুলেছে, যার মধ্যে ৬৭ শতাংশই তারা খেতে পেরেছে। আর বাকি যে অর্ধেক তারা শিকারের পর টেনে গাছের ওপরে তুলতে পারেনি, তার পুরোটাই সিংহ ও হায়েনাদের কাছে হারিয়েছে। এমনকি ৩৯টি এমন ধরনের শিকারও হায়েনার খাদ্য হতে দেখা গেছে, যেগুলো গাছে ওঠাতে গিয়ে চিতার ভুল পদক্ষেপে মাটিতে ছিটকে পড়েছে’।  

‘একটি চিতাবাঘ তাই শুধুমাত্র তার কষ্টের শিকারকে বাঁচাতেই অধিকাংশ সময়ই তার ওজনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ওজনের শিকার গাছে টেনে তোলে। আর হায়না বা সিংহকে খুব কাছাছাছি দেখা যায়, জরুরি সে পরিস্থিতিতে চিতাবাঘ দ্রুতই শিকারকে টেনে দূরে নিয়ে যায় এবং প্রথম পাওয়া গাছটিকে চিড়ে ফেলে তার মধ্যে খাদ্য নিরাপদে লুকিয়ে রাখে’- গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল জানিয়ে বলেন গুই বাম।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।