হোমো নালেদিরা ‘হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স’ নামক আমাদের আধুনিক ও বর্তমান প্রজাতির মতোই ‘হোমো’ গণধারী হলেও তারা অন্য গোত্রের। তবে তাদের সঙ্গে অদ্ভুত মিল রয়েছে আমাদের।
এমনকি ৩ লাখ বছর আগে হোমো নালেদি আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকান পূর্বপুরুষ অন্য মানব প্রজাতিগুলোর সঙ্গে বসবাস করেছে বলেও প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৩৫ বিজ্ঞানীর গবেষণায়।
অথচ ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাইজিং স্টার গুহা শ্রেণীতে আবিষ্কৃত হোমো নালেদিদের জীবাশ্ম পর্যালোচনা শেষে ২০১৫ সালে নৃ-বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, প্রায় ২৮ লাখ থেকে ২৫ লাখ বছর আগের পৃথিবীতে এই প্রজাতির অবস্থানকাল ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খুবই দুর্গম ওই গুহাশ্রেণীর ভেতরের এক জায়গায় একইসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার হাড়-গোড় ছিল। সেগুলো থেকে একজনের পূর্ণাঙ্গ কঙ্কালের জীবাশ্মও পাওয়া গেছে প্রায় অক্ষত অবস্থায়।
ভেতরে এতোগুলো কঙ্কাল দেখে ২০১৫ সালেই বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, গুহাটি নালেদিদের কবরস্থান বা সৎকারের জায়গা। গোত্রের সদস্যরা মারা গেলে তাদেরকে এখানে কবর দেওয়া হতো। আবার এমন অন্ধকার ও দুর্গম গুহায় আলো নিয়ে ঢুকেছিল হোমো নালেদিরা। তাইতো মনে করা হচ্ছিল, আগুন আবিষ্কার ও নিয়ন্ত্রণেও আনতে পেরেছিল তারা।
সে সময় আরও ঘোষণা করা হয়েছিল যে, এই নতুন প্রজাতির জীবাশ্ম মানুষের মতোই দুই পায়ে হাঁটতো এবং তাদের খুব ছোট মস্তিষ্ক ছিল। এদের হাত ও পায়ের গড়নের সঙ্গেও আধুনিক মানুষ বা আদি-আধুনিক মানুষের অনেক মিল পাওয়া গেছে। উচ্চতাও ছিল প্রায় পাঁচ ফুট, যা আমাদের গড় উচ্চতার কাছাকাছি। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছে যে, এরা প্রজাতি হিসেবে আমাদের কাছাকাছি ছিল। তাদের ছোট ধড় ও কাঁধের গড়নও নির্দেশ করে যে, তারা কোনো গাছ, পাহাড় বা উঁচু স্থানে উঠতে পারদর্শী ছিল।
অথচ এতো প্রাচীনত্বের সে দাবির সঙ্গে এসব বৈশিষ্ট্য মিলছিল না। এখন বয়স নির্ধারিত হয়ে যাওয়ায় সব সূত্র মিলতে শুরু করেছে।
বর্তমান গবেষক দলের নেতা জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল ডার্কস্ বলেন, ‘এটা খুবই সম্ভব যে, হোমো নালেদি আমাদের পূর্বপুরুষ আদি হোমো স্যাপিয়েন্স (মানুষের) মুখোমুখি হয়েছে’।
বাইরের জীবাশ্ম নৃ-বিজ্ঞানীরা সেই সময়কার গবেষক দলের নেতা অধ্যাপক লি বার্গারের গুরুতর সমালোচনা করেন যে, তিনি জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণ করেননি।
‘এটি বিস্ময়কর ব্যাপার যে, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, এটির বয়স লাখ বছর বয়স হবে। প্রজাতিটি লাখ লাখ বছর বয়সী হতে পারে, কিন্তু নালেদিদের বয়স অল্প’- এখন স্বীকার করে নিয়েছেন বার্গার।
জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল ডার্কস্ বলেন, ‘নালেদির ডেটিং অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল। অবশেষে ছয়টি স্বাধীন ডেটিং পদ্ধতি আমাদেরকে হোমো নালেদিদের বয়সের সীমা জানায়’।
গুহাগুলো খুব ছোট ছিল। বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রন স্পিন ডেটিং ও ইউরেনিয়াম সিরিজ ব্যবহারে দাঁত পরীক্ষা করে জানান, ‘আফ্রিকায় আমাদের পূর্বপুরুষ মানুষের সঙ্গে জীবিত অন্য প্রাণী ছিল, আগে কখনোই জানা যায়নি’।
‘এটি খুবই বড়। আবিষ্কারটি বোঝায় যে, নালেদিদের আচরণ মানবিক বলে বিবেচিত হবে। যেমন- কবর ও আলো জ্বালানো’- বলেন বর্তমান গবেষক দলের সদস্য ডিন তাওয়ানা কুপেইভ ।
গুহায় ঢোকার মুখ বা দরজা ছিল মাত্র একটিই, তাও আবার মাত্র ১২ মিটার চওড়া। এটি ছিল এ পদ্ধতির দ্বিতীয় গুহা আবিষ্কার, যেখানে প্রথম নালেদিদের হাড়গোড় এবং একটি সম্পূর্ণ কঙ্কাল উদ্ধার হয়।
ভাইস চ্যান্সেলর আব্দুল হাবিব বলেন, ‘২০১৫ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, নালেদিদের মৃত্যুর পর এখানে কবর দেওয়া হয়। এবারের গবেষণার তাৎপর্য এমন যে, এটি একটি মৌলিক বিষয় ও
একটি সাধারণ মানবতার অন্তর্গত। বিভাজনের সে জগতে মানুষ নিজেদের জাতির অনুরূপ প্রাণীকে দেখে লড়াইয়ে নেমে টিকে থাকে। আমরা একে অন্যের প্রতি এতোটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছি কেন, তার কারণও এতে নিহিত’।
‘এই গবেষণাটি দেখায় যে, আমাদের একটি সাধারণ শিকড় আছে। আমরা একটি সাধারণ মানবতার প্রতিনিধিত্ব করছি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
এএসআর