তবে আধা জলজ, আধা বন্য এ প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে দু’টি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি সফল হয়েছে।
তার উষ্ণ ও বিলাসবহুল চামড়ার লোভে নির্বিচার শিকারে পরিণত হচ্ছে সাধারণ বা ইউরেশীয়সহ অনেক প্রজাতির সামুদ্রিক ভোঁদড়।
সংকুচিত আবাসস্থল, খাদ্যের ঘাটতি, সমুদ্রে ছিটকে পড়া দূষণকারী রাসায়নিক ও তেল, মাছ ধরার জাল, পরজীবী এবং সংক্রামক রোগও তাদের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।
এতোসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভোঁদড়ের জলে-স্থলে অভিযোজিত হওয়ার দক্ষতা এবং টিকে থাকার দারুণ সংগ্রামী আচরণকে কাজে লাগিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি তাদেরকে সংরক্ষণ করে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রযুক্তির ব্যবহারে তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। অভিযোজন ক্ষমতাসহ নানা দক্ষতায় সৌভাগ্যবশত সামুদ্রিক ভোঁদড়েরা এখন সুরক্ষিত এবং প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজারটি উদ্ধার হয়েছে, যদিও তারা একটি বিপন্ন প্রজাতি।
এতোসব তৎপরতায় ওশেনিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া প্রতিটি মহাদেশে পাওয়া ১৩টি প্রজাতির ভোঁদড়ও রক্ষা পেয়েছে বিলুপ্তির হাত থেকে।
১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি-বে অ্যাকোয়ারিয়াম ভোঁদড় রক্ষায় সমুদ্রের মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কাজ করছে। এখন সাগর অনুসন্ধান ও অবমুক্তকরণে সফল কর্মসূচি পরিচালনা এবং অত্যাবশ্যকীয় সুবিধাদি ও ট্র্যাকিং ইমপ্লান্ট ব্যবহারে ভোঁদড়দের টিকে থাকতে সহায়তা করছে মন্টেরি-বে।
ফাঁকা সমুদ্রে ভোঁদড়দের সাহায্যে তাদের একটি বড় কেয়ার ইউনিট এবং একাধিক অভয়াশ্রম আছে। শোধিত পানিতে সাগর ভরাট করে ১০টি করে ভোঁদড়কে একসঙ্গে রাখার সক্ষমতা রয়েছে সেগুলোর। তাদের অগ্রগতি নিরীক্ষণে রেডিও ট্রান্সমিটারও ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভোঁদড়দের খাবার বড় জাতের সামুদ্রিক শ্যাওলা কেলপ বন, মোহনা এবং উপকূলীয় ও সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ করেও স্বাস্থ্যবান প্রাণীগোষ্ঠী গড়ে তুলছে প্রতিষ্ঠানটি।
মন্টেরি-বে অ্যাকোয়ারিয়ামের কনজারভেশন রিসার্চ অপারেশনস্ ম্যানেজার অ্যান্ড্রু জনসন বলেন, ‘পশম বাণিজ্যের কারণে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর তুলনায় ২০০০ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সামুদ্রিক ভোঁদরের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ কমে যায়। এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল বরাবর বসবাসকারী চতুর সামুদ্রিক ভোঁদড়েরা সবচেয়ে বেশি খারাপভাবে অত্যাচারিত হয়ে আসছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এ প্রজাতির সংখ্যা ১৫ হাজার থেকে প্রায় ৫০টিতে নেমে এসে বিলুপ্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিল’।
‘শরীরের প্রতি বর্গইঞ্চিতে থাকা প্রতি মিলিয়ন চুলের সঙ্গে ভোঁদড় বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পশমের পশু হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা তাদের অপরিষ্কৃত এ পশমের জন্যই অবিচ্ছিন্নভাবে শিকারিদের হাতে মারা পড়ছিল’।
তার মতে, ‘ভোঁদড়দের জন্য যখন সামুদ্রিক পরিবেশ প্রতিকূল থাকে, তখনও বাস্তুতন্ত্র প্রায়ই ভারসাম্যহীন এবং কম বৈচিত্র্যময় ও স্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
সংরক্ষণ ও প্রজনন বাড়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে অ্যান্ড্রু জনসন বলেন, ‘আমরা ট্রান্সমিটারগুলোকে পুঁতে রাখি। ফলে আমরা প্রতিটি ভোঁদড়ের ঊর্ধ্বগামী পথ অনুসরণ এবং অবমুক্তির পরে তার আচরণ দেখতে পারি’। ‘কারণ, ব্যাটারিটি অন্তত দুই বছর চলে। অল্পবয়স্ক প্রাণীগুলোকে প্রাপ্তবয়স্কতা এবং পুনরূদ্ধারের প্রক্রিয়ায় পৌঁছে দেওয়া যায়। যার ফলে পুরো দলটিই একটি এলাকার মধ্যে সামুদ্রিক জলে মুক্তভাবে বেড়ে ওঠে, যা বাস্তুতন্ত্রকেও সংরক্ষিত রাখে।
তিনি বলেন, ‘মূলত আইন এবং নিবেদিতপ্রাণ প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করছে ভোঁদড়গুলোকে। যেমন দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্টেরি-বে অ্যাকোয়ারিয়ামের সংরক্ষণ কাজ ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণ সমুদ্রের ভোঁদড়দের জন্য ভালো খবর নিয়ে এসেছে। প্রায় ৫০টিতে নেমে আসা প্রাণীটির সংখ্যা এখন ৩ হাজার পর্যন্ত উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি আমরা’।
‘এই কৈশিক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতিগুলো এ সুরক্ষা ছাড়া বেঁচে থাকতে পারতো না। আমরা তাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে যেন তারা কেলপ বন ও মোহনার বাসস্থানের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বজায় রাখতে পারে, সে ব্যবস্থা নিয়েছি। পরিবেশগত বিভিন্নতা সত্ত্বেও তারা এলাকায় আরো স্বাস্থ্যকরভাবে বেঁচে থাকছে’- বলেন জনসন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
এএসআর