বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির মুখে পড়া আর্কটিক সংক্রান্ত গবেষণা শেষে গবেষকরা জানাচ্ছেন, মানুষের সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন আর্কটিককে উষ্ণতর ও আরো গতিশীল স্থান হিসেবে তৈরি করছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গত এক দশকের তুলনায় দ্রুততর গরম হয়ে ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে অঞ্চলটি।
২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, শীতকালীন সর্বাধিক সামুদ্রিক বরফ এলাকার পরিমাপ সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতি বছর পাতলা হয়ে চার বছরের বেশি পুরনো সাগর বরফও অদৃশ্য হয়ে গেছে। গ্রামগুলো বরফগলা পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার আর্কটিকে প্রথমবারের মতো কিছু জলবায়ু উদ্বাস্তু তৈরি হয়েছে।
বাতাসের গড় তাপমাত্রা ১.৬ সেন্টিমিটারের ওপরে চলে গেছে, যা ২০১৬ সালের পর পৃথিবীর গড় বার্ষিক তাপমাত্রার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদন বলছে, এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির গতিও বাড়ছে। গত আগস্টে ব্যারেন্টস্ ও চুকচি সাগরপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওপরে ছিল। ১৯৮২ সাল থেকে চুকচি সাগরের ভূ-উপরিতলের জলের গভীরতা অর্ধেকেরও বেশি নেমে গেছে এবং উষ্ণতর হচ্ছে।
বসন্তকালের গলে যাওয়া ও পশ্চাদপসারণকারী সমুদ্রের বরফ থেকে সূর্যালোক মহাসাগরের ওপরের স্তরের দিকে পৌঁছাচ্ছে। যার অর্থ, এই ক্ষুদ্র পরিসরের সামুদ্রিক উদ্ভিদের আরও আলোক সংশ্লেষণ ঘটছে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আর্কটিকজুড়ে সর্বাধিক গাছপালা, বড়-পাতলা ঝোপঝাড়সহ তৃণভূমি বা টান্ড্রা বেড়েছে, যা উপগ্রহের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়েছে।
মার্কিন জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসনের ১২তম প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উত্তর আমেরিকার আর্কটিকের ইউরেশীয় অংশটি চলতি বছরে গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তুষারপাতের পরিমাণ দেখিয়েছে। ২০০৫ সালের পর থেকেই আগের ১১ বছর ধরে আর্কটিকের তুষারপাত পূর্ববর্তী গড়ের নিচে ছিল।
গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক ড. জেরেমি ম্যাথিস বলেন, অঞ্চলটি ফ্রিজ হিসেবে কাজ করে পৃথিবীর চমৎকার সেবা করেছে। আর এখনকার অবস্থা এমন যে, ফ্রিজটির দরজা খোলা বাকি আছে’।
নিউ অর্লিন্সে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের বার্ষিক সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে ড. ম্যাথিস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে ঝরনাও ধূপধ্বনিহীন ভূমিকম্পের মুখে রয়েছে। এটি আর্কটিক অঞ্চলের উষ্ণতার সাম্প্রতিক ধরন। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, উত্তর মেরু আর আগের মতো নির্ভরযোগ্যভাবে হিমায়িত অবস্থায় থাকবে না’।
‘সবচেয়ে আতঙ্কের এই যে, দেড় হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে ফিরে যাচ্ছে আর্কটিক, মানুষের জন্য যা মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন ছিল’।
ড. ম্যাথিস বলেন, ‘যখন আমরা আর্কটিকের গাঢ় অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখনও বরফের পৃষ্ঠতলগুলো গলছে। সূর্যের শক্তি আরও বেশি শোষণ করে প্রতিফলিত সেই গলনপৃষ্ঠকে প্রকাশ করছে। সামান্য পরিমাণে বরফ গলে যাওয়ায় সামান্য পরিমাণে উষ্ণতা বাড়ে, যা আরও বরফ গলে যাওয়া ও আরও উষ্ণতা তৈরি করে’।
‘এবং এখন আমরা একটি ত্বরণ দেখতে পাচ্ছি, যার অবরুদ্ধ প্রভাবে আর্কটিককে ধরে রাখার বিরুদ্ধে বিপর্যয়কর প্রভাবক হতে পারে’।
মহাকাশচারী ও অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন নৌ-সেনা রিয়ার অ্যাডমিরাল টিমোথি গালোদেটের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয় হোয়াইট হাউজেও। তার উদ্ধৃতি দিয়ে ড. ম্যাথিস বলেন, এ প্রতিবেদনের তথ্যগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন নিন্দা ছাড়াই গ্রহণ করেছে।
‘তথ্যগুলো সত্য। হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক পরিমাপের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে এবং কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করেছেন। নীতি প্রস্তুতকারকরা ঘটনাগুলোকে যথাযথভাবে খতিয়ে দেখতে দেখতে পারেন’- যোগ করেন ড. ম্যাথিস।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭
এএসআর/