এদিকে অনেক দেশ তাকে নিজেদের বলে দাবি করলেও একটি দেশ শান্তা ক্লজের অফিসিয়াল হোম ঘোষণার এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে।
উদার মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান পাদ্রি সেন্ট নিকোলাসকেই আধুনিক যুগের শান্তা ক্লজের পেছনের অনুপ্রেরণা বলে মনে করা হয়।
তবে গত অক্টোবরে তুর্কি প্রত্নতাত্ত্বিকরা আনাতলিয়া প্রদেশের সেন্ট নিকোলাস চার্চের নিচে একটি প্রাচীনতম সমাধির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন। যা থেকে তারা বিশ্বাস করেন যে, সেন্ট নিকোলাস তাদেরই।
যদি তুরস্কই সেন্ট নিকোলাসের অন্তিম শয়ানের স্থান হওয়ার দাবিটি প্রমাণ করতে করতে সক্ষম হয়, তবে শান্তাপ্রেমীদের বিশ্বব্যাপী তীর্থযাত্রার একটি সম্পূর্ণ নতুন গন্তব্যও থাকবে সেখানে।
কিন্তু ফিনল্যান্ডও এ দাবি ছাড়তে নারাজ। কেননা, ফিনরা মনে করেন, শান্তা ক্লজ তাদের ল্যাপল্যান্ডের কোরাওয়াতুন্টুরির বাসিন্দা ছিলেন।
কারণ, কোরাওয়াতুন্টুরি সেই জায়গা যেখানে জোলুপুপির উৎপত্তিস্থল, যা শান্তা ক্লজেরই পূর্ববর্তী রুপ। তাই ফিনল্যান্ডের শান্তা ক্লজের ঐতিহ্য অনেক পুরনো।
মধ্যযুগে খ্রিস্টধর্ম ফিনল্যান্ডে আসার আগে থেকেই দেশটির বাসিন্দারা একটি মধ্য শীতকালীন পৌত্তলিক উৎসব উদ্যাপন করতেন। নুটুতিপুক্কি নামের উৎসবটি সেন্ট নূউটের দিন ১৩ জানুয়ারি উদ্যাপিত হতো, যেদিন অনেক নর্ডিক দেশে ঋতুকালীন ছুটি শেষ হয়।
উৎসবের দিন জ্যাকেট, বার্চ গাছের ছাল, মুখোশ ও শিংয়ের পোশাক পরা পুরুষেরা বাড়তি খাবার ও উপহারের দাবিতে দর কষাকষি করতে দ্বারে দ্বারে যান। নুটুতিপুক্কিরা মন্দ আত্মার প্রতীক ছিলেন, যারা যা চান, তা না পেলে জোরে জোরে চেচিয়ে শিশুদের ভীত করে তুলতেন।
১৮০০ এর দশকে দাতা সেন্ট নিকোলাস যখন ফিনল্যান্ডে পরিচিত হয়ে ওঠেন, তখন মুখোশধারী নুটুতিপুক্কির প্রাক বিদ্যমান চরিত্রের সঙ্গে ঐতিহ্যের মিশ্রণে জোলুপুপিকে তৈরি করা হয়।
নুটুতিপুক্কির খাবার দাবির বিপরীতে জোলুপুপি উপহার হস্তান্তর শুরু করেন। শান্তা ক্লজের মতোই চিমনি দিয়ে ঢুকে লাল রঙের কাপড় পরিহিত জোলুপুপি দরজা খুলে দিতেন এবং জিজ্ঞাসা করতেন- ‘এখানে কি কোনো ভালো আচরণকারী ছেলে-মেয়ে আছে?’।
তার উপহার বিতরণের পর জোলুপুপি কোরাওয়াতুন্টুরিতে ফিরে আসতেন। ফিনিশরা বিশ্বাস করেন, কোরাওয়াতুন্টুরিতে জোলুপুপির সবকিছুই এখনো শোনা যাবে।
গত নভেম্বর মাসে ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জোলুপুপি বা ফিনল্যান্ডের শান্তা ক্লজের ঐতিহ্যকে অনুমোদন করে। দেশটির ‘ন্যাশনাল ইনভেন্টরি অব লিভিং হেরিটেজে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জোলুপুপিকে। এরপর বিশ্ব অবিচ্ছেদ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে তালিকাভুক্তির জন্য ও সুরক্ষা পেতে ইউনেস্কো’র কাছে আবেদন জানিয়েছে দেশটি।
ফিনল্যান্ডের শান্তা ক্লজ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি জারি আহজাহারা বলেন, ‘এটি ফিনিশ শান্তা ক্লজ ও আমাদের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। আমরা প্রত্যাশা করছি যে, শেষ পর্যন্ত ফিনিশ শান্তা ক্লজ ঐতিহ্যকে ইউনেস্কো’র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আন্তর্জাতিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে’।
আহজাহারা’র মতে, যদিও ইউনেস্কো তালিকাটি স্বতন্ত্র ফিনিশ ঐতিহ্য হিসাবে শান্তা ক্লজকে চিনতে পারবে না, তবে ফিনল্যান্ডের জন্য এটি একটি স্মরণীয় স্বীকৃতি হবে, যেখানে শান্তা ক্লজের অবস্থান ও জীবনযাপনের স্থান হিসাবে ফিনল্যান্ডের দাবিকেই শক্তিশালী করবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
এএসআর