বিশ্লেষকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে যদি বিজ্ঞাপনদাতারা নিজেদের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারেন, তবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন তারাই।
নিউ ইয়র্ক টাইমস, হাফিংটন পোস্ট, গালফ নিউজ, দ্যা স্ট্রেইট টাইমস, দ্যা স্টারের মতো বড় সংবাদ মাধ্যমগুলো এখন পার্টনার কনটেন্টের সুযোগ করে দিচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতাদের।
এই অনলাইনের যুগে এসে রীতিমতো ধুঁকছে কাগজের পত্রিকা। সনাতন পদ্ধতির বিজ্ঞাপন আর আকর্ষণ করছে না পাঠকদের। যেমন গত ১০ বছরে সিঙ্গাপুরে বিজ্ঞাপন বাজারের দৃশ্যপটে পরিবর্তন এসেছে অনেক। এখন বিজ্ঞাপনদাতারা বাজেটের ৮৬ শতাংশ খরচ করে ডিজিটাল মিডিয়ায়।
সিঙ্গাপুর প্রেস হোল্ডিংসের হেড অব মিডিয়া সলিউশনস যুগনাটিউয়াস লো বলেন, এখন আর বিজ্ঞাপনদাতারা দৈনিক পত্রিকায় আগ্রহী নন। কারণ সেটা একদিনের জন্য। এবং পত্রিকায় ওই পাতা হয়তো গ্রাহক একবারের বেশি উল্টেও দেখেন না। তবে অনলাইনে যেহেতু বিজ্ঞাপন থেকে যায় এবং সেটা কয়েকদিন বা মাস পর্যন্ত, তাই ডিজিটাল মিডিয়াকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লো বলেন, এখন কনটেন্ট মার্কেটিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কীভাবে কনটেন্ট গ্রাহক এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের আকর্ষণ করবে, সেটা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন কনটেন্ট মার্কেটিং আবশ্যক হয়ে উঠছে। বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের খরচ এই খাতে বাড়াচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যমগুলোও তাদের নতুন টিম তৈরি করছে কনটেন্ট মার্কেটিং টিমের জন্য। অনলাইনে নতুন নতুন ফরম্যাট দিচ্ছে এসব কনটেন্ট পাবলিশ করতে। কনটেন্ট কীভাবে আরো বেশি প্রচার করা যায়, কীভাবে লিখলে পাঠকের আরো কাছে যেতে পারবে, সেটা নিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত গবেষণা।
পার্টনার কনটেন্ট কী? বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম পরিপ্রেক্ষিতে এখনো অনেকেই প্রশ্নটি করতে পারেন। সহজ কথায় এটি অর্থের বিনিময়ে সংবাদ মাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশ করা। তবে এই কনটেন্ট নিয়ে অনেক গবেষণা করতে হয়। সময়োপযোগী এবং গল্পের আকারে কনটেন্ট তৈরি করতে হয়। সেখানে বলা হয় পণ্যের উপকারিতা ও প্রচারণার কথা।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পার্টনার কনটেন্ট কেমন হবে? এ বিষয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন বলেন, এখন আর সনাতন প্রক্রিয়ার বিজ্ঞাপনে মানুষ চোখ ফেরায় না। কাগজের পত্রিকাতো খুলেও দেখছেন না। সেখানে পণ্যের প্রচারণায় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে সংবাদ মাধ্যম এবং বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
‘দুনিয়াজুড়ে এখন করপোরেট কনটেন্ট বা স্পন্সরড কনটেন্ট নিয়ে গবেষণা চলছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের বিশেষ বিভাগ চালু করছে পার্টনার কনটেন্টের ওপর গবেষণার জন্য। যেখানে একটি টিম এটি নিয়ে প্ল্যান করে। ’
বাংলাদেশে অনলাইনের জনক আলমগীর হোসেন বলেন, পণ্যের ব্যবহার, উপযোগিতা বিবেচনা করে সমাজ, পরিবেশের বা কোনো বিশেষ দিনের সঙ্গে কীভাবে সংযোগ করানো হয় সেটি নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রতিবেদককে বিশেষভাবে গল্পের আকারে বা নিজের অভিজ্ঞতার আদলে লিখতে হবে। সেই গল্প থেকেই পণ্যের আবশ্যকতা তৈরি করে পাঠকের মনে।
এখনো পার্টনার কনটেন্টের সেরা উদাহরণ হিসেবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের 'ওম্যান ইনমেটস' শীর্ষক প্রদিবেদনের কথা বলা হয়। প্রতিবেদনটির শিরোনামের নিচেই 'পেইড পোস্ট' কথাটি উল্লেখ করা হয়।
লিংক: https://paidpost.nytimes.com/netflix/women-inmates-separate-but-not-equal.html
চার্টবিটের জরিপে দেখা যায়, নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইন ভার্সনে ২০১৪ সালের সর্বাধিক পঠিত রিপোর্টগুলির একটি 'ওম্যান ইনমেটস' প্রতিবেদন। দিগিদে গেভ এই প্রতিবেদনের ভিডিওকে বেস্ট ব্র্যান্ডেড ভিডিও হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও মিডিয়া পোস্ট এই রিপোর্টটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে বেস্ট নেটিভ অ্যাডভারটাইজিং হিসেবে।
এখন পর্যন্ত এই প্রতিবেদনটি ৪০ লাখ বার পড়া এবং দেখা হয়েছে। ডেনমার্কের রস্কাইল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের একটি দল এই পার্টনার কনটেন্টের ওপর পুরো একটি থিসিস পেপার তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে পার্টনার কনটেন্ট, পেইড কনটেন্ট, স্পন্সরড কনটেন্ট, করপোরেট কনটেন্ট নাম দিয়ে পণ্যকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। আর এই কনটেন্টের সঙ্গে যদি বিজ্ঞাপনদাতারা নিজেদের পরিচিত করে তুলতে না পারে, তবে ক্ষতির শিকার হবে তারাই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমএন/এএ