নীলফামারী: এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে ১১ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে, সেই টাকায় সরকারি চাকরি নেওয়ার পর অন্য মেয়েকে (প্রেমিকা) বিয়ে করে বিপাকে পড়েছেন নিতাই চন্দ্র রায় (২৩) নামে এক প্রতারক।
শুধু তা-ই নয়, ওই বিয়ের কথা গোপন রেখে স্বজনদের নিয়ে বাগদত্তা মেয়েটিকে বিয়ে করতে চলে আসেন তিনি।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কয়া মিস্ত্রিপাড়ায়।
সোমবার (২২ নভেম্বর) সকালে গিয়ে দেখা যায়, কয়া মিস্ত্রিপাড়ায় কনের বাড়ির পাশেই আত্মীয় কার্তিক চন্দ্র রায়ের বসতবাড়ির একটি ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। বার বার নক করার পর দরজা খুলতেই দেখা গেল মেঝেতে প্লাস্টিকের পাটিতে বসে আছেন নিতাই ও তার বাবা-মা। তাদের ঘিরে খাটে ও চেয়ারে বসা মেয়ে পক্ষের পাঁচজন।
মেয়ের বাবা তুলশী চন্দ্র রায় জানান, সৈয়দপুরের পাশের জেলা দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার চম্পাতলী মাস্টারপাড়ার অমূল্য চন্দ্র রায়ের ছেলে নিতাই চন্দ্র রায়ের (২৩) সঙ্গে তার মেয়ে জয়ত্রী রানী রায়ের আশীর্বাদ ও বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় প্রায় এক বছর আগে। সরকারি চাকরিতে টাকা লাগবে বলে বরের বাবা যৌতুক হিসেবে কনের বাবার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নেন। ছেলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে ফায়ার ফাইটার হিসেবে যোগদানও করেছেন। এ কারণে মেয়েকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে পণ্ডিত ডেকে বিদায়ের দিন-তারিখ ও লগ্ন ঠিক করা হয় রোববার (২১ নভেম্বর) রাতে। এজন্য আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে কনের বাড়িতে আসেন নিতাই। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় কনের বাবাকে একজন মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান যে ছেলে প্রতারক। তিনি এক সপ্তাহ আগে লালমনিরহাটে তার প্রেমিকাকে কোর্টে বিয়ে করেছেন। এ কথা শুনে মুহূর্তে বিয়ে বাড়ির পরিবেশ পাল্টে যায়। কনের বাবাসহ আত্মীয়স্বজন যান বরের বাড়িতে। সেখানে বিয়ের সত্যতা মেলে।
এ অবস্থায় বরকে ও তার মা-বাবাকে আটক করে কনে পক্ষ। তারা যৌতুকের টাকাসহ ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। কিন্তু দুইদিনেও টাকা যোগাড় করতে না পারায় তাদের বন্দি করে রেখেছেন তারা। বিষয়টি থানা পুলিশ করলে নিজেদের সম্মানহানির পাশাপাশি ছেলে ও ছেলের বাবার সরকারি চাকরির সমস্যা হবে, তাই আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কনের পরিবারের অভিযোগ, বরের পরিবারের সব শর্ত মেনে আমরা বিয়ে এবং বিদায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। খুব কষ্ট করে বরের বাবার হাতে ১১ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের মান-সম্মান এবং মেয়ে ভবিষ্যৎ সবই শেষ করে দিল এমন প্রতারণা করে। তবুও আমরা শুধু অর্থ ফেরত চাই। কিন্তু ছেলেটা যাকে বিয়ে করেছেন, তিনি আসবেন বলেও সময়ক্ষেপণ করছেন।
ছেলের বাবা অমূল্য চন্দ্র রায় বলেন, তিনি লালমনিরহাটে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন অধিভুক্ত মশলা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে কর্মরত। ছেলে ও স্ত্রী দীর্ঘদিন সেখানেই ছিল। এখন গ্রামের বাড়িতে থাকে। ছেলের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে জানতাম না। বিয়ের বিষয়েও জানি না।
নিতাই চন্দ্র রায় বলেন, ফায়ার ফাইটার পদে মুন্সিগঞ্জের কমলহাটে চাকরি করছি। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার হাজিগঞ্জের প্রমিতা রানীর সঙ্গে এমনি মোবাইল ফোনে কথা হতো। কিন্তু লালমনিরহাট থেকে আসার পর আর যোগাযোগ হয়নি। হঠাৎ কয়েকদিন ধরে ফোনে কথা হয়। আর গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার মিরপুর অফিসে অফিসিয়াল কাজে অবস্থানকালে সে সেখানে উপস্থিত হলে পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হই।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাবুল হোসেন বলেন, বিষয়টা তারা পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছেন, তাই আমরা হস্তক্ষেপ করিনি।
বিকেলে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) খায়রুল আনাম জানান, এমন কোনো ঘটনা জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
এসআই