ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

কিশোরী ঋতু প্রধানমন্ত্রীর কথা রাখলো!

আশরাফুল আযম খান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১২
কিশোরী ঋতু প্রধানমন্ত্রীর কথা রাখলো!

জাতীয় দৈনিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার অভ্যাস অনেক দিনের। নানান সংকটে আবর্তিত দেশটার ভবিষ্যৎ কী? আজকের দিনের মতো যদি  পত্রিকার পাতায় কোনো একটি সুখবর পাই সারা দিনটা ভালো কাটে।

একটা মানসিক তৃপ্তি অনুভব করি। দু’-একটি ভালো খবর এই আশাহীন সময়ে আশাবাদী হবার নিভু নিভু প্রদীপটাকে জ্বালিয়ে রাখে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় নানান মৃত্যুর খবর দেখি। রাস্তায় পারাপার হতে গিয়ে ট্রাকচাপায় পথচারীর মৃত্যু, ব্যর্থ প্রেমে বিষপানে কিশোরীর মৃত্যু, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ব্যবসায়ীকে খুন, পরকীয়া প্রেমের বলি হয়ে স্বামী অথবা স্ত্রীর মৃত্যু, নির্মাণকাজ করতে গিয়ে বহুতল ভবন পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু- এ রকম অসংখ্য অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর এখন পত্রিকার পাতায় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এসব মৃত্যু আমাদের মানবিক বোধগুলোকে যেন দিনে দিনে ভোঁতা করে দিচ্ছে। অনেক আগেই এসব কিছু যেন আমাদের সকলের কাছে একটা গা-সওয়া ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেদিন একটা ছোট খবরে আমার চোখ আটকে যায়।

৩১ মার্চ কালের কণ্ঠের ৩য় পাতায় সংবাদ শিরোনাম, “রাজধানীতে শিশুসহ তিনজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু”। সংবাদের ভিতরে এক মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনায় লেখাÑবাড্ডার শাহজাদপুর খিলবাড়ীরটেক এলাকায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুৎ চলে গেলে সিঁড়ি থেকে নামার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঋতু আক্তার (১৫) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রী মারা গেছে। নিহত ঋতুর খালাতো ভাই শাহীন জানান, শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় গরম লাগছিলো। এ সময় ঋতু ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলা থেকে বাসার বাইরে বাতাসের জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। সিঁড়ি ছিল অন্ধকার। হঠাৎ পা পিছলে সিঁড়ির ফাঁক দিয়ে সে নিচে পড়ে যায়। আহত অবস্থায়  প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের প্রতি আমার প্রশ্ন, ১৫ বছরের প্রাণচঞ্চল এই কিশোরীটির মৃত্যুর জন্য আমরা কাকে দায়ী করবো? ট্রাকচাপায় পথচারীর মৃত্যুর জন্য হয়তো নির্বোধ চালককে দায়ী করা যায়, স্ত্রীর আত্মহত্যার জন্য পাষণ্ড স্বামীকে, রাজনৈতিক হট্টগোল কিংবা সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতেও মৃত্যু হয়নি এই কিশোরীর। তবে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? তবে কি আমরা তার মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করতে পারি? হয়তো পারি। ঋতুর অপরাধ যে সে এই কংক্রিটের ঢাকা শহরে দুর্বিষহ লোড-শেডিং সহ্য করতে না পেরে একটু বাতাসের জন্য বড় বেশি কাঙাল হয়ে উঠেছিল। ঋতুর দোষ যে তার ছোট চঞ্চল মন দুঃসহ গরমে চার দেয়ালে বন্দী থাকতে চায়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তাঁর কথাই সত্যি হলো। কিছু দিন আগে সংসদের শেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় বলেছিলেন, “লোড-শেডিংয়ের দরকার আছে, মানুষ যাতে ভুলে না যায় লোডশেডিং নামে কিছু একটা ছিল। ”

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কথা আর কেউ না রাখুক। অসহায় মধ্যবিত্ত পরিবারের এই চিরচপল মেয়েটি রেখেছে। সত্যি তো মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় তার শোকাহত পরিবার লোড শেডিং এর কথা আজীবন মনে রাখবে। যেদিন প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের সুফল হিসেবে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে না, সেদিন সকলে ভুলে গেলেও মেয়েটির স্বজনেরা লোড-শেডিংয়ের দুঃসহ স্মৃতিকে ক্ষণিকের জন্য ভুলবে না। প্রধানমন্ত্রীতো ঠিকই বলেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ।
 
-আশরাফুল আযম খান, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
asrafshebu@gmail.com

সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।