ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

অবৈধ আমদানি বন্ধে চাই কঠোর পদক্ষেপ

রেজওয়ানুল হক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
অবৈধ আমদানি বন্ধে চাই কঠোর পদক্ষেপ

গাজীপুরে মোবাইল ফোন কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ দেশের বাজারে অবস্থান শক্ত করেছে চীনভিত্তিক বৈশ্বিক মোবাইল ফোনসেট ব্র্যান্ড ট্রানশান। এন্ট্রি লেভেল থেকে শুরু করে মিড রেঞ্জের ফোন দিয়ে টেকনো ও আইটেল ব্র্যান্ডের এরই মধ্যে দেশের বাজারে উৎপাদন শুরু হয়।

দেশে উৎপাদনের কারণে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে ফোন পাচ্ছে গ্রাহকরা।

বর্তমানে স্থানীয় বাজারের মোবাইল ফোনের চাহিদার ৯০ শতাংশই আমরা সব ব্র্যান্ড মিলে পূরণ করছি। কিন্তু এর বাইরে অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আসছে প্রায় ৪০ শতাংশ। আইফোন ছাড়া প্রায় সব ব্র্যান্ডের কারখানা এ দেশে রয়েছে। তাই প্রায় সব কম্পানিই আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ পুরো দেশের মার্কেটের যে চাহিদা, সেটা পূরণের সক্ষমতা দেশের কারখানাগুলোর আছে। কিন্তু আমরা অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোনের সঙ্গে টিকতে পারছি না।

গত বছর স্মার্টফোনের চাহিদা ছিল এক কোটি, ফিচার ফোনের চাহিদা ছিল এক কোটি ৮০ লাখ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোনের বাজার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার।

এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আসা। দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। যদি বৈধভাবে আমদানি করা হয়, তাহলে ৫৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। অবৈধভাবে মোবাইল ফোন আসার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের উৎপাদন ক্যাপাসিটি পূরণ হচ্ছে না, যার ফলে সরকার ভ্যাট ও ট্যাক্স হারাচ্ছে।

দেশে ১৫ হাজার কোটি টাকার মোবাইল ফোনের বাজারের মধ্যে অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোনের বাজার প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার। অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আসা বন্ধের ব্যাপারে আমরা সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। প্রতিটি মোবাইল ফোনে আইএমইআই নম্বর থাকে, দেশে উৎপাদিন মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরের জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সরকার যেসব আইএমইআই নম্বর অনুমোদন দিচ্ছে, শুধু সেইগুলোই বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে সক্রিয় হোক। আর অবৈধভাবে যেগুলো আসছে, সেগুলো কোনোভাবেই সক্রিয় হতে পারবে না। এ বিষয়ে গত বছর সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন কিন্তু অবৈধ পথে মোবাইল ফোন আসা ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল। এরপর সরকার যখন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেল, তখন থেকে অবৈধ মোবাইল ফোন আসার প্রবণতাও বেড়ে গেল। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে যে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টারের (এনইআইআর) সফটওয়্যার কেনা হয়েছিল, তা কার্যত বন্ধ।  

এই মুহূর্তে আমাদের দেশের বড় সমস্যা হচ্ছে ডলার সংকট, যার কারণে আমাদের কাঁচামাল আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। দেশে উৎপাদনের জন্য আমাদের তিন মাস আগেই কাঁচামাল আমদানি করে আনতে হয়। উৎপাদকদের ডলার পেতে নানা সংকট হলেও অবৈধ ফোনের কারবারিদের ডলার পেতে সমস্যা হচ্ছে না। তারা হুন্ডিসহ নানা মাধ্যমে ডলার ক্রয় করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা ধীরগতির কারণে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রায় ৪০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে আমাদের যে কাঁচামাল রয়েছে, সেটা দিয়েই উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সামনে রোজার ঈদ আসছে, সেই সময় আমাদের কাঁচামালের চাহিদা বাড়বে। সে অনুযায়ী আমাদের চাহিদামতো কাঁচামাল আমদানি করতে পারছি না। তবে যেহেতু এ বছর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, হয়তো অন্যান্য বছরের তুলনায় বিক্রি কম হবে। যদি চাহিদা বেড়ে যায় তাহলে আমাদের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে।  

লেখক: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), ট্রানশান হোল্ডিংস বাংলাদেশ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।