ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রেললাইনে বাস, থেমে গেল ট্রেন!

মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১২
রেললাইনে বাস, থেমে গেল ট্রেন!

ঢাকা: মঙ্গলবার, ঘড়ির কাঁটায় রাত ১০টা। রাজধানী ঢাকার উত্তরা মডেল টাউনের পাশ ধরে যাওয়া কসাইবাড়ি রেলগেট।

ট্রেন আসছে, আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, তীব্র আলো জ্বলছে। এদিকে হই চই শুরু হয়ে গেল। বেশকিছু মানুষকে খুবই উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, রেল লাইনের ওপরেই ঠায় দাঁড়িয়ে অনেকগুলো গাড়ি। একটি কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেটকার, অটোরিকশাসহ নানা যানবাহন। হৃদস্পন্দন শুরু হয়ে গেল। একটি দুর্ঘটনার হাতছানি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

হাতে থাকা মোবাইল ফোনে ভিডিও অপশন অন করে অপেক্ষা করছি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার চিত্র ধারণ করবো বলে।

স্থানীয় কিছু মানুষ গাড়িগুলো সরানোর কাজে ব্যতিব্যস্ত। অতি কষ্টে দু`পাশে যানবাহন সরিয়ে লাইন থেকে সবগুলো গাড়ি সরানো হলো। এবার সাঁ করে রেললাইনের ওপর উঠে গেল যাত্রীবাহী একটি লোকাল বাস। হুড়মুড় করে বাস থেকে নামতে শুরু করে যাত্রীরা।

এ ঘটনা দেখে হৃদকম্পন আরও বেড়ে যেতে লাগলো। বাসচালকের কাণ্ডজ্ঞান দেখে অবাক হলাম। কোনো কূলকিনারা করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ রেললাইনের উভয় পাশের সড়কে যে পরিমাণ যানবাহন। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কোথায় যাবে বাসটি?

ততক্ষণে একদম কাছে চলে আসে ট্রেনটি। কিন্তু সবকিছু দুমড়েমুচড়ে না দিয়ে ট্রেনটি থেমে গেলো। কিছুটা অবাক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তিবোধ করলাম। ততক্ষণে সবাই মিলে দীর্ঘ চেষ্টার পর বাসটি রেল লাইন থেকে সরানো সম্ভব হয়।

এ পর্যায়ে এলেন গেটম্যান। তিনি গেট ফেললেন। ট্রেনটি পুনরায় চলতে লাগলো। ট্রেন এলো। সাঁ করে পাশ দিয়ে চলে গেলো। তবে আস্ত ট্রেন না, শুধু ইঞ্জিন। সে যা-ই হোক। দুর্ঘটনা কিন্তু ঘটে যেতো। হয়তোবা শুধু ইঞ্জিন থাকার কারণে ট্রেনটি দুর্ঘটনা এড়িয়ে থামাতে সক্ষম হয়। কিন্তু যদি ট্রেনটি না থামতো তবে কি বিপদই না ঘটে যেতো!

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেটম্যান রেলেগেটে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে ট্রেনের দিকে খেয়াল না থাকা সড়কপথের যানবাহনগুলো চলছিল তাদের স্বাভাবিক নিয়মে। কিছু মানুষের অসাবধানতা আমাদের মৃত্যুর কোলে নিয়ে যায় খুব সহজেই। সারাদেশেই এমন মানুষদের দৌরাত্ম্য আজ নিরন্তর। সময়ের কাছে আজ জীবনের মূল্য নিমিষেই ম্লান হয়ে যায়।

ঘটনার শেষ লগ্নে এসে গেটম্যান জানান, তিনি ভাত খেতে গিয়েছিলেন। আসতে বিলম্ব হয়ে গেলো। কিন্তু তার এই বিলম্ব কত সর্বনাশ ডেকে আনত, তা কি সে একটুখানি ভেবে দেখেছেন? না কি আদৌ ভাববেন?

এদেশে অন্য দুর্ঘটনার চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার এতো বেশি কেন? দু`বছর আগের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে যে কোনো দুর্ঘটনার মধ্যে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৪৭ ভাগ। যদিও অন্য দেশগুলোতে এর মাত্রা মাত্র দুই ভাগ। গত দুই বছরের উপর্যুপুরি সড়ক দুর্ঘটনার হিসাব কষলে হয়তো এই ৪৭ এতদিনে উল্টে ৭৪-এ পরিণত হয়ে গেছে।

এই রাজধানীতে বছর তিনেক আগে একটি বাসকে ট্রেন উড়িয়ে দিয়েছিল। প্রাণহানি ঘটেছিল। প্রায়শই পত্রিকার পাতায় খবর হয়, ট্রেনের সঙ্গে যানবাহনের সংঘর্ষ। এসব দুর্ঘটনা নিছক গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলার কারণে। কিন্তু আমরা শুধরাতে পারছি না অনেক ইতিহাস সৃষ্টির পরও। অনেক রক্ত ঝরছে, অনেকে বরণ করছেন পঙ্গুত্ব। কিন্তু ঘুম ভাঙছে না আমাদের। আমরা ঘোরের ঘোরে হারিয়ে যাই নিরন্তর।

মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সাংবাদিক।
news.joynal@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১২
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর Jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।