ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

শাবাশ বাংলানিউজ!

মাহমুদুল হাসান, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১২

ঢাকা: ‘শাবাশ বাংলানিউজ। গ্রামীণফোনকে তোমরা দেখিয়ে দিয়েছো, অন্যায়কারী যতো বড়ই হোক নিস্তার নেই।

এই ধরনের সাংবাদিকতা করুক দেশের সব গণমাধ্যমগুলো। তাহলেই অন্যায় কমে যাবে, তৈরি হবে জবাবদিহিতা...’

এই উক্তিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া। তরুণ ও প্রতিভাবান সাংবাদিক শরিফুল হাসান গত কিছু দিন ধরে বাংলানিউজ গ্রামীণের অন্যায় কার্যক্রম নিয়ে অত্যন্ত ‘সাহসিকতার’ সাথে যে ধারবাহিক প্রতিবেদন করছে তারা স্বীকৃতি দিলেন এই স্ট্যাটাসের  মাধ্যমে। স্ট্যাটাসটি অন্য ফেসবুক ব্যাবহারকারীদের পছন্দ হয়েছে বেশ। রোববার বিকেলে স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর বেশ ‘লাইক’ও পাচ্ছেন শরিফুল হাসান।  

এখানে ‘সাহসিকতা’ শব্দটি ব্যাবহারের একটি যৌক্তিক কারণ রয়েছে। গ্রামীণফোণ দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর। আর গণমাধ্যমকে চলতে হয় বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে। সে ক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপন যে কোন গণমাধ্যমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কিন্তু গণমাধ্যমের সবচে বড় দায়িত্ব হচ্ছে গণ বা জনমানুষের কথা বলা। নিঃসন্দেহে গ্রামীণফোনের  অন্যায়ভাবে চাকরি ছাটাইয়ের ঘটনাটির সংবাদমূল্য বেশ। যেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও অসুস্থ কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হচ্ছে, তা গণমাধ্যমে উঠে আসা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে, বাংলানিউজ ছাড়া কোথাও এ সংবাদ নেই। বিজ্ঞাপন খোয়নোর ভয়ে গণমাধ্যম ‘সেলফ সেন্সরড’ হয়ে গেছে।

তবে বাংলানিউজ ভয়কে জয় করেছে। ‘জনগণকে সঠিক তথ্য জানানো’ গণমাধ্যমের সবচে প্রধান এই কাজটি করছে বাংলানিউজ। লোভনীয় বিজ্ঞাপনকে তোয়াক্কা করেনি বাংলানিউজ, এটাই বাংলানিউজের ‘সাহসিকতা’। গ্রামীণফোনের মতো একটি বিদেশি কর্পোরেট কোম্পানির অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলানিউজের ধারাবাহিক প্রতিবেদন বাংলাদেশের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা চর্চায় মাইলফল হয়ে থাকবে বলে আশা করা যায়।

প্রতিবেদনের ফলে সবচে বড় কাজটি হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন গ্রামীণফোনের কর্মীরা। চাকরি হারানোর শঙ্কায় থাকা কর্মীরা সাহস পাচ্ছেন, কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করছেন।

বাংলানিউজের এই ধারবাহিক প্রতিবেদন চারদিকে সাড়া ফেলে দিয়েছে। অন্যান্য গণমাধ্যমে কেন এই সংবাদটি আসছে না তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। আর এই আলোচনার জন্য সবাই বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে বেছে নিয়েছেন। রোববার বিকেলে সাংবাদিক তপন মাহমুদ লিমন ফেসবুকে লিখেছেন,

‘ কাছে থাকার এতো বুলি দিলেও শেষ পর্যন্ত সেই নিজের কর্মীদেরই ছাটাই করে দূরে ঠেলে দিলো গ্রামীণফোন !!!! হায়রে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। আর আমাদের অনেক মিডিয়া চেপে গেল খরবরটি শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন খোয়ানোর ভয়ে......হায়রে বস্তুনিষ্ঠতা !!!!!!!!’।

দেশের অন্যতম একটি শীর্ষস্থানীয় ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতা ফেসবুকে লিখেছেন,‘ শুধু ফোন কোম্পানি নয় এখনকার মিডিয়াগুলোও আক্ষরিকভাবেই কপোরেট হাউজ। চতুর পেশাদারিত্বের আড়ালে নিজস্ব নিয়ম কানুনের নিমিত্তেই পরিচালিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে একধরনের আধাখেচড়া মানসিকতা। যে কারণে মানুষ মরলেও কারো কোনো বিকার জন্মায় না, মানবাধিকার লংঘিত হলেও কোনো তেজ কোথাও দেখা যায়না। কেউ কারো নয়, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের...’।

সম্প্রতি কর্মী ছাঁটাই ছাড়াও গ্রামীণের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় তিন কিস্তিতে প্রায় হাজার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু এসব বিষয় সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে স্থান পায় না কেবল বিজ্ঞাপনের ভয়ে। কলরেট নিয়েও কোটি কোটি গ্রাহকের রয়েছে অসন্তোষ।
কবি ও সাংবাদিক আলীম হায়দার ফেসবুকে কয়েকদিন আগে লিখেছেন, “গ্রামীণ ফোন। রাত ১২ টার পরে ১ টাকা করে জিপি টু জিপি মিনিট কাটতেছে। কোন অফার চেঞ্জ করলে সেটা কাস্টমারদেরকে জানানো উচিত। কিন্তু এই গ্রামীণফোনের পুরাতন কাস্টমার অনেক। চাইলেও হঠ্যাৎ করে নম্ব^র বদল করা যাচ্ছে না। সেই সুবিধাটা দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছে। । অনেকেই হয়তো এখনো খেয়াল করেননি , আগের চেয়ে অনেক বেশী টাকা কাটছে এখন জিপি। কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়েছিলাম, তারা বললো এমনটা নাকি আজ নতুন না। গত দু`মাস ধরেই চলছে। আমরা হয়তো ব্যস্ততার কারণে খেয়াল করিনি। গ্রামীণফোন সারাদিন এসএমএস দিতে দিতে বিরক্ত করে দেয়। আর নিজেদের কলরেট বাড়ানোর ব্যাপারটা বিনা নোটিশে করে ফেলে। একচেটিয়া মার্কেট দখলের এটাই একটা সুবিধা। ব্যবসা হিসেবে অবশ্যই ভালো। জয় হোক গ্রামীণফোনের। কারণ , অন্যরা কেউ তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি। পারলে এই অবস্থা হতো না। একচেটিয়া ব্যবসা। নব্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী। ”
এই স্ট্যাটাসে লাইক পড়েছে অনেকগুলো। কমেন্ট করেছেন বেশ কয়েকজন। দিলশাদ কে দিশার মন্তব্যটা ছিল এরকম-‘ জিপি একরকম টেরোরিস্ট... ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে এক একটা অ্যাড বানায়...(অংশবিশেষ)”
সবশেষে কবি আলীম হায়দারের কথায় ফিরে যাচ্ছি। গ্রামীণফোনকে তিনি আখ্যা দিয়েছেন নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হিসেবে। তার কথার যতার্থতা রয়েছে। দেশি কিছু মীর জাফর-ঘসেটি বেগমের সহায়তায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা পায়। দীর্ঘ দুই শতাব্দির জন্য অস্ত যায় ভারত বর্ষের স্বাধীনতা। আর নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতোই অস্বাভাবিক হারে মুনাফা করছে আরেক বিদেশি কোম্পানি গ্রামীণফোন। দেশে থেকে নিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের গণ-মাধ্যম এসব বিদেশি কোম্পানিকে সামান্য বিজ্ঞাপনের লোভে প্রশ্রয় দিয়ে ‘নব্য মীর জাফর-ঘসেটির ভূমিকা পালন করে যাবে, না-কি এদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে?

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘন্টা, জুলাই ৮, ২০১২
এমএইচ/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।