ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রক্তের রং সাদা, ইজ্জতের দাম কুড়ি পয়সা

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৩
রক্তের রং সাদা, ইজ্জতের দাম কুড়ি পয়সা

ফাঁসি ও যাবজ্জীবন সাজার সংবাদগুলো বেশ মনযোগ দিয়ে পড়া হয় না; তবুও পড়ি। প্রায়শঃই দেখি একজনকে হত্যার জন্যে তিন জনের ফাঁসি ও দুইজনের যাবজ্জীবন এবং একজনের ৭ থেকে ১০ বছর জেল।

বাদ বাকিরা বেকসুর খালাস। শরিয়তি আইনের কেসাস (রক্তের দাম পরিশোধে মুক্তি) বাংলাদেশে প্রচলিত নয়। ইদানীং অবশ্য দয়ালু রাষ্ট্রপতিরা প্রায়শঃই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা মওকুফের ব্যবস্হায় মেতে আছেন। অবশ্য এসব হচ্ছে অতি সাধারণ আম-জনতার রক্তের মূল্য।

বাংলাদেশে আম-জনতার জীবনের দাম?--- একেবারে সুলভ মূল্য! ’মূল্যবান’ নামিদামি লোক বা রথী-মহারথীরা যদি আম-জনতার কারোর রক্ত নেন, খুন বা গুম করেন তখন বিচারের বাণী প্রায়শঃই কাঁদে। হালের বিশ্বজিৎ হত্যা আমাদের শংকাকে যুক্তিযুক্ত করে তোলে। উল্টোটা ঘটলে বা রথী মহারথীদের কেউ সাধারণ কারো হাতে খুন বা গুম হলে আইন গর্জে ওঠে। ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্যায়-অবিচার রোধে! একই উপমা ধর্ষণ ও ধর্ষিতার ক্ষেত্রেও। ধনী ও প্রভাবশালীদের হাতে ধর্ষিতার ইজ্জতের মূল্য হয় মাত্র কয়েক হাজার টাকা। কিন্তু প্রভাবশালী কারো ঘরের কন্যা-বোনের দিকে নজর দিলেই সমাজচ্যুতি-জুতো পেটা হয় ন্যূনতম শাস্তি।

কিছুক্ষণ আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দ্বিতীয় রায় হয়েছে। এই রায় একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের চেয়ে কম লজ্জার নয়। তিন-চারশ হত্যা আর শতাধিক ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণিত হবার পর জামায়াতি কাদের মোল্লাকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। গড়ে প্রতি ২০জন হত্যা ও ২০টি ধর্ষণের জন্যে মাত্র একবছর করে কারাদণ্ড! শহীদের রক্ত এতোই সস্তা! মূল্যহীন! জাতির নারীদের সম্ভ্রমের কোনো মূল্য নেই? এতোই নগণ্য মা-বোনের সম্মান! জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ মাত্রেরই রক্তের রং লাল হয়।   রক্তের ঋণও লাল রক্তের মতোই পবিত্র। কিন্তু আমাদের ঢাক-ঢোল পেটানো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নিশ্চয়ই শহীদদের রক্তের রঙকে সাদা ভেবেছেন, নাহলে প্রমাণিত এতো হত্যার বিপরীতে মাত্র সামান্য ক’বছর জেল ঘোষনার রায় হতো না। বীরাংগনা নারীদের ইজ্জত যে এতো মূল্যহীন তা দেখতে হতো না।

পুরো জাতির হূদয়ে আশা জাগিয়ে এ-কী খেলা খেললো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সামান্য এক নির্বাচনী বৈতরণী পেরুনোর স্বার্থেই ভেস্তে দিলো পুরো জাতির স্বপ্ন ও প্রত্যাশা। জাতির সাথে এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা একাত্তরের খুনি হয়তো জামায়াতও করে নি। আমরা সাধারণ মানুষ জামায়াতিদের ‘রাজাকার’ ডেকে ঘৃণা প্রকাশ করি। এখন আওয়ামীদের কী নামে ডেকে ঘৃণা ও প্রত্যাখান জানাবো? ভীষন এক অন্তর্জ্বালায় ভুগছি, ফুঁসছি এক অক্ষম আক্রোশে।

হয়তো আগামী নির্বাচনে বিশাল টাকার চাঁদা যোগাবে জামায়াত কিংবা জামায়াত হবে মহাজোটের অন্যতম অংশীদার। হয়তো জামায়াত অন্তর্বর্তী সরকারের বদলে আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী বিএনপিহীন নির্বাচনকে জায়েজীকরণে ’রাজাকার’ বা সহায়তাকারী হবে। আরো অনেক ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।

আওয়ামীরা পুনঃনির্বাচিত হওয়া মাত্রই কারাগারে ’মহামান্য’ কাদের মোল্লা গুরুতর অসুস্হ হয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্যে প্যারোলে মুক্তি পাবে। সে চিকিৎসার মেয়াদ হবে অতি দীর্ঘ। কিংবা আগামী নির্বাচনে জনরায় আওয়ামী প্রেম প্রত্যাখান করে বিএনপি’তে ঝুঁকলে  কাদের মোল্লার জামিন হবে অতি দ্রুত। জামিনের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়বে। বাড়তেই থাকবে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জাতির সাথে এই বেঈমানীকে ‘রাজাকারের কাজ’ ডাকাটা বোধকরি অন্যায় হবে না। জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতায় জামায়াত ও আওয়ামী লীগ আজ দুই সহদোর।

abidআবিদ রহমান: মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক, ইমেইল: abid.rahman@ymail.com

 

সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।