ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আপসহীন খালেদা

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৩
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আপসহীন খালেদা

বিরোধী দলের নেত্রী সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার বক্তব্য শুরুই হয়েছে স্তম্ভিত ক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত শব্দগুলো উচ্চারণের মধ্য দিয়ে।

এরপর গণহত্যার কথা বলেছেন। দোষ দিয়েছেন সরকারকে।

এখানে গণহত্যার একটি সংজ্ঞা উল্লেখ না করে পারছি না। ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহিত রেজ্যুলেশন ২৬০(৩) অনুসারে যেসব কর্মকাণ্ড গণহত্যার উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় সেগুলো হচ্ছে:

ক) পরিকল্পিতভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য তাদের সদস্যদেরকে হত্যা বা নিশ্চিহ্নকরণ।
খ) তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিসাধন।
গ) পরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে ধ্বংসসাধন কল্পে এমন জীবননাশী অবস্থা সৃষ্টি করা যাতে তারা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
ঘ) এমন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যাতে একটা জাতি বা গোষ্ঠীর জীবন ধারণে শুধু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নয়, সেই সঙ্গে তাদের জন্ম প্রতিরোধ করে জীবনের চাকাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।
ঙ) একটি জাতি বা গোষ্ঠীর শিশু সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে তাদের জন্ম পরিচয় ও জাতিগত পরিচয়কে মুছে ফেলাকেও গণহত্যা বলা হয়।

পাশাপাশি এর সঙ্গে সংগঠিত গণহত্যার শাস্তির কথাও বলা হয়েছে। যা এখানে উল্লেখের প্রয়োজন নেই।
মাননীয় বিরোধীদলের নেত্রী কি অর্থে গণহত্যার কথা উল্লেখ করেছেন তা বোধগম্য নয়। তবে দেশব্যাপী জামায়াতের তাণ্ডবে পুলিশসহ ৭৮ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তিনি যদি এ অস্থিরতা ও নৈরাজ্যকে গণহত্যা বলে থাকেন তবে সুস্পষ্ট ভাষায় বলা যায়, তিনি সঠিক কথা বলেননি। বরং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর সংগঠিত গণহত্যা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত সব গণহত্যায় নিহতদের এক ধরনের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে আমরা অবশ্যই যেকোনো অপ্রত্যাশিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাই।

বিরোধী দলীয় নেত্রী সরাসরি জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবকে সর্মথন দিয়ে মূলত দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে সংঘাতে দিকে ঠেলে দিয়েছেন। পাশাপাশি হিন্দু পল্লীসহ নিরীহ সংখ্যালঘুদের ওপর জামায়াতি তাণ্ডবে বৈধতা দিয়েছেন। যা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ কখনো প্রত্যাশা করে না।

অভিযোগ উঠেছে, দেশের ভাবমূর্তি বর্হিবিশ্বে নষ্ট করতে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এটাকে ‘গণহত্যা’ বলা হচ্ছে। এতে সরকার বিশ্বের কাছে অপদস্থ হলে লাভবান হবে বিএনপি-জামায়াত। আশা করি, এ তথ্য যেন সত্যি না হয়।

সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর থেকেই উগ্রবাদী জামায়াতের জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো একযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ও নিরীহ মানুষের বাড়ি-মন্দিরে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলাকে বৈধতা দিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন, এই বাংলাদেশ তারা চাননি। এর মাধ্যমে দেশের শান্তি প্রিয় মানুষের সঙ্গে তিনি এক ধরনের প্রতারণা করেছেন। দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষকে করেছেন অপমান।

বিএনপি নেতারা কাদের মোল্লার রায়ের সময় বলেছিলেন, সরকার জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেছে। আর সাঈদীর রায়ের বিষয়ে বলছেন, এ রায় প্রশ্নবিদ্ধ। এই দৈত অবস্থান জাতির সামনে বিএনপির আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে। বরাবরে মতই আবারও প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেই আছে এবং থাকবেও।

তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের লোকজন মসজিদে আক্রমণ করেছে। অথচ দেশের প্রায় সব গণমাধ্যম দেখিয়েছে ও কাগজগুলো লিখেছে, জামায়াত-শিবির এসব আক্রমণ ও তাণ্ডব চালিয়েছে। যারা জাতীয় পতাকা ছিড়ে টুকরো টুকরো করলো অথচ তিনি তাদেরই পক্ষ নিলেন। আমাদের শহীদ মিনার ভাঙচুর করা হয়েছে অথচ তার বক্তব্যে এর কোনো উল্লেখ করা হয়নি।

অনেকে তাকে ‘আপসহীন’ বলতে ভালোবাসেন। হয়তো তিনি নিজেও তাই মনে করেন। এবার প্রমাণ হয়েছে, তিনি আপসহীনই বটে, তবে স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর প্রশ্নে একজন আপসহীন নেত্রী তিনি। একথা স্বীকার করতেই হচ্ছে।
Bitu
আশরাফ সিদ্দিকী বিটু

 


বাংলাদেশ সময়: ২২২৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৩
এমআইআর/সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।