ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

টাকার হিসাব দিন!

জিনিয়া জাহিদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৪
টাকার হিসাব দিন! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো্)

স্মরণকালের ভয়াবহ "রানা প্লাজা দুর্ঘটনায়" এখন পর্যন্ত ১১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। উদ্ধারকৃত প্রায় ১৮০০ জন ছোট-বড় নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।



দুর্ঘটনার প্রায় নয় মাস অতিক্রান্ত হলেও রানা প্লাজার হতাহতদের এক রেশমা ছাড়া কারো কথাই আমাদের তেমন স্মরণ নেই। না থাকারই কথা। নানা সমস্যাসংকুল এই দেশে এক ঘটনা নিয়ে বেশিদিন পরে থাকার জো নেই।
 
বিস্মৃতপ্রায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনা আবার আলোচনায় আসে হতভাগী সালমার ‘আত্মহত্যা’র কারণে। পত্রিকায় প্রকাশ, রানা প্লাজার সাততলার একটি কারখানায় সালমা চাকরি করতেন। দুর্ঘটনার প্রায় পাঁচ-ছয়দিন পরে উদ্ধারকর্মীরা সালমাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল। মাথায় আঘাতসহ তার শরীরে রড ঢুকে গিয়েছিল এবং কয়েকটি স্থানে হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল।
 
কয়েকমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত দেড়মাস ধরে সালমা স্বামী-সন্তানসহ নতুন করে জীবন শুরু করেছিলেন। একটা চাকরিও করছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু সেইসাথে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণাও তার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল।
 
যথাযথ চিকিত্সা ও আর্থিক অনটনের কারণে সম্প্রতি সালমা আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।
 
সালমার মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে “আর্থিক কারণ” প্রকাশ পেয়েছে। তবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ দাবি করেছেন, সালমার আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ চিকিৎসার অভাব বা আর্থিক অনটনের জন্য নয়।

অথচ তার আত্মীয় স্বজন দাবি করছেন, সালমা মাত্র ষাট হাজার, মতান্তরে সরকারি ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা থেকে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার, টাকা পেয়েছিলেন।

সৈয়দ আশরাফের দাবি, সালমাকে কত টাকা সাহায্য দেওয়া হয়েছিল তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে খোঁজ নিলেই জানা যাবে।

আমরা মনে করি, সালমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা সরকারী তহবিল থেকে দেয়া হয়েছিল সেই স্টেটমেন্ট প্রকাশ করলে এ নিয়ে ধোঁয়াশা আর থাকে না।
 
আমরা জানতে চাই রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে আমাদের পাঠানো টাকার কতটুকু হতভাগী সালমা পেয়েছিল?   

দেশ বিদেশের বিভিন্ন কোণ থেকে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০০ কোটির উপর সাহায্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে পাঠানো হয়েছিল। যে যেভাবে পেরেছে সাহায্য করেছে। স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছিল। এছাড়াও গণজাগরণ মঞ্চের কথা বলেও বিভিন্ন দেশে রানা প্লাজার ভিকটিমদের জন্য টাকা ওঠানো হয়েছিল।

প্রশ্ন হলো এই সাহায্যের টাকা রানা প্লাজার আহত এবং নিহতদের পরিবার কে কত পেয়েছিল?
 
প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমাকৃত ১০০ কোটির মধ্যে মাত্র ১৮.৫ কোটি টাকা সাহায্য এখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে বলে সিপিডি তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে। অনেকেই এখনো প্রতিশ্রুত অর্থসাহায্য পায়নি বলে জানা যায়!
 
যাদের জন্য অর্থ সাহায্য পাঠানো হয়েছে, তাদেরকে না দিয়ে দীর্ঘ নয় মাস ধরে সেই টাকা কেন প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে এখনো পড়ে আছে? তাহলে বাকি টাকা কিসের জন্য রাখা হয়েছে?

যদি রানা প্লাজার কেউ এক কোটি করেও পায়, তাতেও তো আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ এই টাকা আমরা শুধুই ওদের জন্য পাঠিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে অলস ফেলে রাখার জন্য নয় কিংবা কবে কোন ভবন পুনরায় ধসে পড়বে সেই আশায়ও নয়।

তবে কেন যাদের জন্য এই অর্থ উঠেছে তাদেরকে তা দেওয়া হচ্ছে না?

আমরা চাই না পর্যাপ্ত টাকা সালমাদের নামে বরাদ্দ থাকার পরও আর কোনো সালমা অর্থাভাবে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাক। ওদের টাকা ওদের দিয়ে দিন।

রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গঠিত তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে সে হিসাব সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হলে বিভ্রান্তি এড়ানো সহজ হয়।

বাংলাদেশ সময় ১৬১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।