ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মুসা ইব্রাহীম, দয়া করে সত্য বলুন

ড. জিনিয়া জাহিদ, কনট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৪
মুসা ইব্রাহীম, দয়া করে সত্য বলুন

মুসা ইব্রাহীম সর্বপ্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছেন- এ নিয়ে মাতামাতি ছিল পুরো ২০১০ জুড়ে। আমরা সবাই মুসাকে নিয়ে নিঃসন্দেহে গর্বিত ছিলাম।



স্বপ্নেও কখনো কল্পনা করিনি যে, কেউ এভারেস্ট জয় নিয়েও মিথ্যাচার করতে পারেন। অর্থ্যাৎ এভারেস্ট জয় না করেও কেউ নিজেকে এভারেস্ট জয়ের দাবিদার হিসেবে নিজেকে জাহির করতে পারেন!

তবে এটা সত্য যে, শুরু থেকেই কয়েকজন বাংলাদেশি ট্র্যাকার মুসার এভারেস্ট জয় নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে এসেছিলেন। আমরা সেসবকে পারস্পরিক বিদ্বেষ মনে করে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আর মুসাকে স্থান দিয়েছিলাম ইতিহাসে, আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায়।

আবারও মুসার এভারেস্ট জয় নিয়ে সন্দেহ বেশ জোরালো হলো সম্প্রতি প্রকাশিত “নেপাল পর্বতের” প্রকাশনায় মুসার নাম না থাকায়। সবার সন্দেহের তীর মুসার প্রতি।

মুসা বলছেন যে, তার এভারেস্ট জয়ের স্বপক্ষে না-কি প্রমাণ আছে। আছে অনেক ছবি। মুসার এভারেস্ট জয়ের সেই ছবিগুলো দেখার জন্য মুসার ওয়েবে ঢুঁ মারতে গিয়ে দেখি মুসার ব্যান্ডউইথ সীমাবদ্ধতায় সেই ওয়েব কাজ করছে না। এতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ওয়েবের এহেন সমস্যা সত্যি অস্বস্তিকর। মুসার প্রতি সন্দেহ যেন আরো পোক্ত হয়ে উঠছে।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় দেখছি যে, মুসার পক্ষে কথা বলতে এসেছেন অস্ট্রেলীয় এভারেস্টজয়ী ব্রেন্ডন ও’ মাহনি। আর কাকতালীয় কি না জানিনা মুসাও এখন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্রেন্ডনের ভাষ্য নিয়েও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।

এসব নিয়ে আলোচনার আগে চলুন দেখে আসি ব্রেন্ডনের এভারেস্ট জয় নিয়ে কোনো সন্দেহ আছে কিনা।   নাকি নেই।   

ব্রেন্ডনের এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড পাওয়া যায় নিচের লিঙ্কে। সেই লিঙ্কে দেখা যায় ব্রেন্ডনও উত্তর দিক থেকেই সামিট করেছিলেন। দলের মধ্যে আরো অনেকেই থাকলেও ২৩ মে ২০১০ এ ব্রেন্ডনসহ অল্প কয়েকজন এভারেস্ট শৃঙ্গে পৌছ‍ুতে সক্ষম হয়েছিলেন।
 
লিঙ্কে সবার নাম দেয়ার আরেকটি কারণ হলো, এই লিস্টের বোল্ড করা আরো দুটি নাম এই আলোচনায় আসবে, যা অবশ্যই মুসার এভারেস্ট জয় নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত।  
 
“Mount Everest the British Story” (http://www.everest1953.co.uk/2010-to-present.html)
Year: 2010
Season: Spring
Leader: Stuart Peacock (UK)
Route: North Col – North East Ridge
Height Reached: Summit
 
Members: Jonathan Davies (UK), Matthew Dickinson (UK), Stephen Green (UK), Owen Lewsey (UK), Simon Price (UK), Keith Reesby (UK), Ian Ridley (UK), Andrew Robertson (UK), Mathew Snook (UK), George Stewart (UK), Peter Sunnucks (UK), Mark Walsh (UK), Nigel Williams, Heather Geluk (Canada), Michael Goldsmith (USA), Kenneth Grischow (USA), Scott Grischow (USA), Maxwell O’Meara (USA), Brendan O’Mahoney (Australia), Jantoon Reigersman (Netherlands), Phurba Ridar Bhote (Nepal), Nurbu Bhote Lama (Nepal), Surendra Kumar Gurung (Nepal), Dorje Khatri (Nepal), Mingma Gyabu Sherpa (Nepal), Nima Thundu Sherpa (Nepal), Pasang Angchuk Sherpa (Nepal), Sonam Dorje Sherpa (Nepal)
 
Summit Reached By: Stuart Peacock, Maxwell O’Meara, Brendan O’Mahoney, Mathew Snook, Peter Sunnucks, Phurba Ridar Bhote, Nurbu Bhote Lama, Dorje Khatri, Mingma Gyabu Sherpa, Pasang Angchuk Sherpa and Sonam Dorje Sherpa on the 23rd May

Deaths: None
 
২৫ মে ২০১০ তারিখে ডয়েচে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাত্কারে মুসা বলেছিলেন, ‘নর্থ ফেসের দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে অক্সিজেন মাস্কের পাইপ লিক হয়ে যায়৷ কিন্তু শেরপারা বুঝতে পেরে সেটিকে সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে ফেলে৷’

তিনি বলেন, ‘৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় পাইপ লিক হয়ে যাওয়া সহজ কথা নয়৷ কিন্তু তাও বেঁচে গেছি৷’
 
মুসা এভারেস্ট জয়ের চেষ্টা করেছিলেন এবং তার অক্সিজেন পাইপ লিক হয়েছিল দ্বিতীয় ধাপে এবং তার ভাষ্যানুযায়ী সেই পাইপ ঠিক করেছিলেন তার শেরপা। অথচ সেসময় তাকে তার শেরপা নয়, সাহায্য করেছিলেন আরেক ট্র্যাকার স্টিফেন গ্রীন।

পাঠক লক্ষ্য করুন, স্টিফেন গ্রীনের নাম উপরের তালিকায় আছে। তবে তিনি এভারেস্ট জয় করতে পারেন নি। কেন পারেন নি তাও সেসময় বিশ্বের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল।

এভারেস্ট জয় না করেও স্টিফেন গ্রীনকে "হিরো" বলে অভিহিত করা হয়েছিল। আর এজন্য পরোক্ষভাবে আমাদের মুসার ভূমিকাও ছিল।
 
নিচে যে লিঙ্ক দেওয়া হলো তা থেকে জানা যাচ্ছে-

……Tired and despondent he (স্টিফেন গ্রীন) descended the mountain with his team mate Brendon but soon came across a collapsed Bangladeshi climber. The climber’s Sherpa was not able to help him on his own and this is where Stephen and Brendon noticed his oxygen tank was turned down low and had a hole in the pipe. Stephen gave him the rest of his own water to drink and power gels which gave him enough energy to return to his feet and be escorted down the mountain to safety.
(সুত্র: http://www.edinburghspotlight.com/2011/05/edinburgh-lad-scales-everest/)
 
এছাড়াও ২২ জুন ২০১০ এর "সান" পত্রিকায় ডগলাস ওয়াকারের রিপোর্টে স্টিফেনের এই ঘটনা জানা যায়। যেখানে স্টিফেনকে হিরো বলে সম্বোধন করা হয়। রিপোর্টে উল্লেখ, যে দুজন আরোহীকে স্টিফেন সাহায্য করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন হলেন আমাদের মুসা ও আরেকজন হলেন নাইজেল উইলিয়ামস, যার নাম উপরের তালিকায় বোল্ড করে দেওয়া হয়েছে। এই নাইজেলও কিন্তু সামিটারদের তালিকায় নেই।   
 
উপরের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, স্টিফেন গ্রীনের বন্ধু ছিলেন এই ব্রেন্ডন। তারা একই দলের সদস্য ছিলেন এবং একসঙ্গে ছিলেন। তার মানে ব্রেন্ডন জানতেন যে, মুসাকে স্টিফেন বাঁচিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন এবং এভারেস্ট থেকে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছিলেন।
 
অথচ তার নাম ব্রেন্ডন ও মুসা দুজনেই কেন চেপে গেলেন তা সত্যি প্রশ্নসাপেক্ষ। যে স্টিফেন অক্সিজেন স্বল্পতায় চূড়ায় উঠতে পারলেন না, তার টিমমেট ব্রেন্ডন চূড়া জয় করলেন, অথচ একই সমস্যায় পরে মুসা কিভাবে এভারেস্টের চূড়ায় উঠলেন?

আবার ডয়েচে ভেলের সাক্ষাত্কারে সাহায্যকারী স্টিফেনের নাম একবারও না নিয়ে মুসা কেন শেরপার নাম নিলেন? এ কি মুসার অকৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ নয়?

এখানে অবশ্যই সত্যতার ঘাটতি রয়েছে। আশা করি মুসা সবার সম্মুখে তার জবাব দেবেন।

মুসা এভারেস্ট জয় করেছেন কি করেন নি সেটা বড় কথা নয়, কথা হলো মুসা সত্য এড়াচ্ছেন কেন? তিনি তথ্য গোপন করার অনৈতিক খেলায় মেতেছেন কেন? সত্য জানা দরকার।
 
মুসা ইব্রাহীম, দয়া করে সত্য বলুন।

ড. জিনিয়া জাহিদ: অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।