ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রধানমন্ত্রী সমীপে এরশাদ

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪
প্রধানমন্ত্রী সমীপে এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে আমার কিছু কথা

৩ জুলাই ২০১৪ তারিখ দশম জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশনের সমাপ্তি দিন ছিল। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম-রীতি অনুসারে যে কোনো সংসদীয় অধিবেশনের সমাপ্তি দিনে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন সূচক বক্তব্য প্রদান করা হয়।

অতঃপর সংসদ নেতার ভাষণের পর মাননীয় স্পিকার মহামান্য রাষ্ট্রপতির ঘোষণা পাঠ করে শোনানোর মধ্য দিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন। ৩ জুলাই তারিখটিও ছিল তেমন একটি দিন। রেওয়াজ অনুসারে প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আমি বক্তব্য প্রদান করলাম। তারপর সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ নেতার ভাষণের পর সংসদে তার বক্তব্য খণ্ডন করার আর কোনো সুযোগ থাকে না। সংসদ নেতা সেদিন আমার সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন- সেখানে বাস্তবের সঙ্গে গরমিল আছে এবং তা ইতিহাস স্বীকৃত নয়। কিন্তু তার বক্তব্য দেশবাসী শুনেছেন এবং সংসদেও রেকর্ড হিসেবে থেকে গেছে। সত্য প্রতিষ্ঠা করতে ওই বক্তব্য খণ্ডন করার প্রয়োজন আছে। যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে সংসদে সে সুযোগ আমার ছিল না- তাই যথার্থ তথ্য পত্রিকায় প্রকাশ করে অন্তত রেকর্ড রেখে দিতে চাই।

প্রথমত. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জেনারেল জিয়া যে পথে ক্ষমতায় এসেছেন এবং ক্ষমতায় থেকেছেন- সেই একই পথে আমিও ক্ষমতায় এসেছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতার্থে এবং সার্বিকভাবে অনুধাবনের লক্ষ্যে এই প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। আমি কখনোই বলি না যে- আমি গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিলাম। তবে দ্ব্যর্থহীনভাবে একথা বলতে পারব যে- ক্ষমতা আমি দখল করিনি, ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছিল এবং আমার ক্ষমতা গ্রহণকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসেছি। ইতিহাস তার সাক্ষী। আর যিনি আমাকে ক্ষমতা গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন- তৎকালীন সময়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। ফলে তখন দোষ যদি হয়ে থাকে তাহলে তা আমার নয়, সেটা তৎকালীন গণতান্ত্রিক সরকারের। এছাড়াও আমি ইতিহাস থেকে আরও একটু সামান্য অংশ জেনে নেওয়ার অনুরোধ করব। অর্থাৎ তখনকার রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে কী কথা বলেছিলেন- তার সেই বক্তব্য রেডিও-টিভিতে প্রচারিত হয়েছে এবং পত্র-পত্রিকায় ছাপা অক্ষরে রয়ে গেছে। আলোচনার স্বার্থে আমি সেটা এখানে তুলে ধরছি। রাষ্ট্রপতি সাত্তারের বক্তব্য ছিল এইরকম- “দেশের আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জাতীয় স্বার্থে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সারা জীবন আমি ঐকান্তিকতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করেছি এবং সর্বদাই দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের সার্বিক অবস্থার যাতে উন্নতি হয়, তাই কামনা করেছি। দেশের এই বর্তমান অবস্থায় দেশের জন্য রয়েছে আমার আন্তরিক মঙ্গল কামনা। আমি পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে এই মোনাজাতই করি যে, তার অসীম রহমতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে শান্তি, ন্যায়বিচার, প্রগতি ও সমৃদ্ধির এক নবযুগের সূচনা হবে। বাংলাদেশে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং আমাকে সবরকমভাবে সাহায্য করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। আমাদের দেশবাসীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সাধনের জন্য দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর মহান প্রচেষ্টার আমি সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি। জাতির প্রয়োজনে দেশের জন্য আমি যে কোনো কর্তব্য পালনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করব না। পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”।

আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি- সামরিক আইন কোথাও কোনোভাবে প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু বিগত শতাব্দীর ৮০’র দশকে, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সামরিক আইন ছিল। ধরে নেওয়া যায়, গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের যাত্রায় এই সামরিক আইন ছিল প্রসব বেদনার মতো। সামরিক আইনের প্লাবন ধোঁয়া মাটিতে সেখানে গণতন্ত্রের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। আজকের শতাব্দীর সূচনা যাত্রায় সেই গণতন্ত্র বৃক্ষ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে স্বস্তি ও সুবাতাস বইয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র কায়েম হয়েছে তাও বেরিয়েছে সামরিক আইনের গহ্বর থেকে। ’৮২ সালের সামরিক আইন ছিল একটি ব্যতিক্রমী অধ্যায়। বিশ্বের যেসব দেশে সামরিক আইন জারি হয়েছে, তার কোথাও ক্ষমতাসীন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা ছেড়ে দেননি। যেখানে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে সেখানেই সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানকে মরতে হয়েছে কিংবা কারারুদ্ধ হতে হয়েছে। তারপর যিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন তিনি সামরিক ফরমান বা সামরিক আইন জারি করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৮২ সালের সামরিক আইন জারি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে অভিহিত হয়েছে। একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সামরিক আইন জারি করেছেন এবং তিনি সার্বিক ক্ষমতা গোটা সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ন্যস্ত করেছেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান হিসেবে সে সময় আমি ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলাম মাত্র। তখন সেনাপ্রধান হিসেবে যিনিই থাকতেন তাকেই এই ক্ষমতা গ্রহণ করতে হতো। তাই আগেই বলেছি ’৮২ সালের সামরিক আইন জারির জন্য যদি অপরাধ হয়ে থাকে তার জন্য অপরাধী হবেন বিচারপতি সাত্তার। আর তখন ক্ষমতা গ্রহণের জন্য যদি অপরাধ হয়ে থাকে তার জন্য অপরাধী গোটা সশস্ত্র বাহিনী। কোনো বিশেষ এক ব্যক্তি হতে পারেন না। যিনি সেনাবাহিনীর প্রধান থাকেন তিনি ইচ্ছা করলেই সব কিছু করতে পারেন না। যেমনটি পারেননি জেনারেল শফিউল্লাহ। তিনি জাতির জনকের যেমন প্রাণ রক্ষা করতে পারেননি, আবার সেই হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা আনতেও পারেননি। এরপর জেনারেল খালেদ মোশাররফ সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ঠিক করার চেষ্টা করেও জওয়ানদের সমর্থন না পেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, এমনকি নিজের জীবনও দিয়েছেন। সুতরাং সেনাবাহিনীর প্রধান হলেই তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারেন না, আবার কেউ গ্রহণ করার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেন না। যেমনটি পারেননি জেনারেল মঞ্জুর। বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা সশস্ত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছেন, সশস্ত্র বাহিনী তা গ্রহণ করেছে। এটাই বাস্তবতা। জেনারেল জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ এবং আমার ক্ষমতা গ্রহণের তফাৎ এখানেই। জিয়া সাহেব ক্ষমতায় এসেছেন রক্তপাতের মধ্য দিয়ে। তার ক্ষমতায় আসার সোপান তৈরি হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। তারপর ৩ নভেম্বর এবং ৭ নভেম্বরে রক্তে ভেজা পথ পেরিয়ে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসেছেন। আর আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং দেশের স্বার্থে আমি তা গ্রহণ করেছি। জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসেছেন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আর আমি ক্ষমতায় এসেছি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সামরিক আইন জারির কারণে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ বিষয়টি অনুধাবন করবেন। বলা হয়ে থাকে- আমি নাকি বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা গ্রহণ করেছি। একটি কথা নিশ্চয়ই সবাই বুঝবেন বন্দুকের নল থেকে ফুল বের হয় না, বের হয় গুলি। এটাই ব্যতিক্রম যে, কোনো একটি গুলির শব্দ ছাড়াই ১৯৮২-এর পটপরিবর্তন ঘটেছে। সেই পরিবর্তনে আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থন ছিল। অন্তত আওয়ামী লীগের তৎকালীন মুখপত্র দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদকীয়তে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। আরও একটি কথা অনুধাবন করতে হবে বিচারপতি সাত্তার শিশু ছিলেন না যে, বন্দুকের ভয় দেখাতেই তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। তিনি ছিলেন বয়সে বৃদ্ধ, জীবনের সামনে তার বেশি সময়ও ছিল না। জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই তিনি পার হয়ে এসেছিলেন। শেষ বয়সে জীবনের জন্য এতটুকু ভয় তার মধ্যে থাকতে পারে না। বিচারপতি সাত্তার তার মন্ত্রিসভাকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে বিএনপি আজও তাকে ক্ষমা করতে পারেনি। তিনি ছিলেন বিএনপির দ্বিতীয় চেয়ারম্যান এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। আজ তিনি প্রয়াত। অথচ তার দল দ্বিতীয় চেয়ারম্যানের মৃত্যুবার্ষিকী পর্যন্ত পালন করে না। বন্দুকের নল দিয়ে সবকিছু হয় না। ওটা ছিল মাও সেতুংয়ের কথা- “বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস”। বঙ্গবন্ধু তার প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন “জনগণই ক্ষমতার উৎস”। সময়ের বিবর্তনে বঙ্গবন্ধুর কথাই যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে। বন্দুকের নলের সাহায্যে সাময়িকভাবে কিছু পাওয়া গেলেও যেতে পারে কিন্তু সেটা হয় ক্ষণস্থায়ী। সেদিন সেনাবাহিনী যদি বন্দুকের নলের সাহায্যে ক্ষমতা গ্রহণ করত, তাহলে তার স্থায়িত্বকাল কোনোভাবেই ৯ বছর হতে পারত না। এই ৯ বছরের মধ্যে ৪ বছর ছিল সামরিক শাসন, বাকি পাঁচ বছর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে। তাও এই চার বছর সামরিক শাসন স্থায়ী হয়েছে রাজনীতিবিদদের কারণে। কারণ ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৮৪ সালে আমি সাধারণ নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। তখন আমার কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। সেদিন সব দল নির্বাচন বর্জন করায় সামরিক শাসন আরও দুই বছর স্থায়ী হয়েছে। সেদিন বিচারপতি সাত্তার যদি বন্দুকের নলের মুখে সামরিক আইন জারি করে থাকেন তাহলে বিচারপতি আবুল ফজল আহসানুল্লাহ চৌধুরীও কি বন্দুকের নলের মুখে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন? সেদিন প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনও কি বন্দুকের নলের মুখে আমার শপথ পাঠ করিয়েছিলেন? বিচারপতি নুরুল ইসলাম কিংবা বিচারপতি হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়াও কি বন্দুকের নলের মুখে আমার মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেদিন সংসদে আরও একটি কথা বলেছিলেন যা সঠিক নয়। তিনি বলেছিলেন, আমি নাকি সেনাপ্রধান থাকাকালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় বিচারপতি সাত্তারকে আমার প্রার্থী বলে বক্তব্য রেখেছিলাম। এ কথার একবর্ণও সত্যি নয়। আমি সেনাপ্রধান ছিলাম- সেনাবাহিনীর নিয়মনীতি, আদর্শ আমি যথার্থভাবে অনুসরণ করেই ওই পদে আসীন হতে পেরেছিলাম। সুতরাং সেনা নিয়ম ভঙ্গ করার প্রশ্নই ওঠে না। ১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারিতে যে রাজনৈতিক দলটির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- সেই দল মাত্র ১০ মাস ১০ দিন বয়সে এদেশে গণতন্ত্র নামের শিশুটিকে জন্ম দিয়েছে। সেই গণতন্ত্র শিশুর জন্মদাতা আজকের জাতীয় পার্টি। আমার কোনো রাজনৈতিক খায়েশ ছিল না। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোই আমাকে দিয়ে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করাতে বাধ্য করেছে। জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করেই আমাকে নির্বাচনে যেতে হয়েছে। জাতীয় পার্টিতে সমাবেশ ঘটেছিল এদেশের বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের। এই পার্টি সৃষ্টির মাত্র ৫ মাসের মাথায় ১৯৮৬ সালের ৭ মে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তখন সব দলেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে একমাত্র বিএনপি অংশগ্রহণ না করে ২০১৪ সালের ভুলের গোড়াপত্তন করেছিল। সেদিন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে রাষ্ট্র পরিচালনার ইতিহাস হয়তো অন্যভাবে লেখা থাকত। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ’৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ভোট সম্পূর্ণ জাতীয় পার্টির পক্ষে এসেছে। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৪২ দশমিক ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৫৩টি আসন লাভ করেছিল। বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফলের রেকর্ড দেখলে বোঝা যাবে, জাতীয়তাবাদী শক্তির ভোট সবসময় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের মধ্যেই ওঠানামা করেছে।

এবার সংসদের সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে মাননীয় সংসদ নেত্রী ’৮৬ সালের নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে যে প্রশ্ন করেছেন তাও যথার্থ নয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ৭৬টি আসন লাভ করেছিল। তার আগে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী শক্তি ৪১ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোট লাভ করে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ২৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩৯টি আসন লাভ করেছিল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ’৮৬ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটের হারও বেড়েছে, আসনও বেড়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সংসদই এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তারিখটি ছিল ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর। সেদিন আমি সংসদে দাঁড়িয়ে সামরিক আইনের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে ঘোষণা দিয়েছিলাম- সেখানে বলেছিলাম, জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের ভীত আজ রচিত হলো- যা কেউ কোনো দিন নস্যাৎ করতে পারবে না। সৌভাগ্য যে, সেই গণতন্ত্র আজও বলবৎ আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ছিল এই যে, সেদিন গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংসদের যে অধিবেশন বসেছিল- সেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোটের সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না। ওই দিনের অধিবেশন ছিল ৫ ঘণ্টা স্থায়ী। বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে জাসদ রব-এর ৪ জন, মুসলিম লীগের ৪ জন, শাহজাহান সিরাজের (জাসদ) ৩ জন, বাকশালের ২ জন এবং স্বতন্ত্র সদস্য লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লাইলা সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। সরকারি ও বিরোধী দল মিলিয়ে ২২৩ জন সংসদ সদস্য সেদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সদস্যরা কেন সেই ঐতিহাসিক দায়িত্বটি পালন করলেন না তা আজও আমার কাছে বোধগম্য নয়। আমি যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলাম দেশবাসী আজও সেই গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও গণতন্ত্র ব্যাহত হয়নি। আর হবেও না। সে কথাই আমি ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর সংসদে বলেছিলাম। আমার শাসনামলের শেষ দিকে যারা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন তারা মূলত একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করেছেন। সেই আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ছিল আমাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। আমি তাদের দাবি মেনেছি। শর্ত ছিল সব দলের মতো আমাকেও সমান সুযোগ দিয়ে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে। বিরোধী দলের অসাংবিধানিক দাবিকে আমি সংবিধানের আওতায় এনে সাংবিধানিক পন্থায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছেড়েছি। কিন্তু ক্ষমতা ত্যাগের মাত্র ৬ দিনের মাথায় চুক্তি ভঙ্গ করে আমাকে গ্রেফতার করা হলো। সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব ছিল শুধু নির্বাচন পরিচালনা করা। কিন্তু যে বিচারপতির হাতে আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম তিনি চুক্তি ভঙ্গ করে বে-আইনিভাবে আমাকে সপরিবারে গ্রেফতার করলেন। আমি ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আগে বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করে এসেছিলাম। সেই বাতিল করা আইনেই আমাকে গ্রেফতরা করা হয়। তখন গণতন্ত্র প্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বিবেক আসেনি যে, বাতিল করা আইনে একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে গ্রেফতার করা যায় না। সেদিন সবাই নীরব ছিলেন। সম্প্রতি আমি এক জনসভায় বলেছিলাম খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবেন না, তাহলে তার ফল নিজেদেরই ভোগ করতে হবে। কথিত আছে- যিনি গিলোটিন তৈরি করেছিলেন- তাকেই প্রথম ওই গিলোটিনের নিচে গলা বাঁড়িয়ে দিতে হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস- বাতিল করা জরুরি আইন যারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন একসময় ওই আইনেই তাদের আটক হতে হয়েছে। অর্থাৎ ওয়ান ইলেভেনের সরকার ওই আইনের বলেই দমন-পীড়নের কাজটি সম্পাদন করেছেন। দুই নেত্রীকে আটক হতে হয়েছে- বিশেষ ক্ষমতা আইনেই। আমি শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা ছেড়ে দিলাম। তারপর আপনারা অশান্তির আগুন জ্বালালেন। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে দেখুন- ১৯৯১ সালের নির্বাচন কি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল? যদি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের নমুনা দেখাতে হয়, তাহলে সেখানে সব দলের প্রতি সমান সুযোগ এবং দৃষ্টি থাকতে হয়। কিন্তু ১৯৯১-এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কি সচ্ছন্দে নির্বাচন করতে পেরেছে? আমাকে জেলে রাখা হয়েছে। আমার দলের মন্ত্রীরা কেউ জেলে ছিলেন, কেউ পলাতক ছিলেন। নেতা-কর্মীরা কেউ মাঠে নামতে পারেননি। ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া যায়নি। কেউ একটা পোস্টার লাগাতে পারিনি। রেডিও-টিভিতে আমার দলের কেউ বক্তব্য রাখতে পারেননি। এ অবস্থার মধ্যে ’৯১-এর নির্বাচন হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে ’৯৬ নির্বাচনেও। তারপরেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আমরা ৩৫টি আসনে বিজয়ী হয়েছি। আমি একা পাঁচটি আসনে বিজয়ী হয়েছি। একবার নয় তাও দুই-দুইবার।

 আমরা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ। জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তি। যাদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীদের ঐক্য রয়েছে তাদের আমরা সত্যিকার জাতীয়তাবাদী মনে করি না। সে কারণেই আমরা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের একটি রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী বলেই স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলকে আমরা সবসময় সহযোগিতা করে এসেছি। সেই ইতিহাস নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগের বন্ধুদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে যে, তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসতে ২২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই ২২ বছর পর তারা এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনে সক্ষম হয়েছে। তথ্য ঘেঁটে দেখুন- এই তিনবারই ক্ষমতায় আসতে জাতীয় পার্টির সহযোগিতা গ্রহণ করতে হয়েছে। যখন সহযোগিতা পায়নি তখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। ’৯১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোটেরই ক্ষমতায় আসার কথা ছিল। অবশ্যই তারা ক্ষমতায় আসত- যদি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ওপর বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানাত। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জন্য লেবেল প্লেয়িং ফ্লিড থাকলে বিএনপি কোনোভাবেই ১৩৪ আসন লাভ করে জামায়াতের ১৮ আসনের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারত না। আমরা বিনা প্রচারে শত প্রতিকূলতার মধ্যে শুধু ব্যালট পেপারে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নামটা রেখেই ৩৫ আসনে বিজয়ী হওয়া ছাড়াও ৩১ আসনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলাম। ১৭ আসনে জোর করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু আমিও যদি বাইরে থাকতাম- তাহলে আর ১০টা আসন পেলেও জামায়াত-বিএনপির সরকার গঠিত হতে পারত না। তাই আমি সংসদে বলেছি জামায়াত-বিএনপি বিষবৃক্ষের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী। ১৯৯১-এর নির্বাচনে আমাদের সহযোগিতা ছিল না বলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পায়নি। এরপর ১৯৯৬-এর নির্বাচনে আমরা সমর্থন দিয়েছিলাম বলেই ২২ বছর পর তারা ক্ষমতার মুখ দেখেছে। সভানেত্রী আপনি একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকান- ইতিহাসের তথ্য স্মরণ করুন। দেখুন- ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনের ফল কী ছিল? আপনারা পেয়েছিলেন ১৪২ আসন। এই দিয়ে কি সরকার গঠন করতে পারতেন? কারণ অপরদিকে কি ছিল? বিএনপির ১১৮, জাতীয় পার্টির ৩৪ এবং জামায়াতের ৩। আমরা বিএনপির প্রস্তাবে সাড়া দিলেই তো আমাদের মিলিত আসন দাঁড়াত ১৫২। তখন রাষ্ট্রপতি ছিল বিএনপিরই। আমি তাদের লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। নিঃশর্তভাবে আপনাদের সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় এনেছি। কিন্তু আপনারা কি তার মূল্য দিতে পেরেছিলেন? যার জন্য ২০০১-এর নির্বাচনে আমাদের সহযোগিতা পাননি। ফলে ফল দাঁড়াল- আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতার বাইরে। সব ভুলে ২০০৮-এর নির্বাচনে আপনাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলাম। মাননীয় সভানেত্রী আরেকবারও স্মরণ করে দেখুন- ২০০৮-এর নির্বাচনেও কি আপনারা সততার স্বাক্ষর রেখেছেন? জোটগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৪৮ আসন দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৯টি আসন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির ১৭টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেখে দেওয়া হয়েছে। এই আচরণের পরিভাষা কী তা নিশ্চয়ই সবাই বলতে পারবেন। শেষ পর্যন্ত এলো দশম জাতীয় সংসদ। এই নির্বাচনের ঘটনাবলী যেভাবেই প্রবাহিত হোক না কেন- জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে বলেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং নির্বাচনের ফল বৈধতা এবং আংশিক হলেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ আবার আমাদের সহযোগিতায় ক্ষমতা আসতে পারল। এবার আমরা পরিপূর্ণভাবে প্রধান বিরোধী দলের আসনে অবতীর্ণ হতে পেরেছি। আমরা সরকারের সমালোচনা করব এবং সহনশীলতার সঙ্গে তা হজম করার মানসিকতা সরকারি দলের থাকতে হবে। আমরা ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সংসদে ফাইল ছোঁড়া, ক্যামেরা ভাঙা, গালাগালি করা কিংবা রাস্তায় গাড়ি ভাঙা, ট্রেনে আগুন দেওয়া, গাছ কাটা রাজনীতি আমরা করি না। এতে যদি বিরোধী চরিত্রে ঘাটতি থাকে- তা আমরা কখনোই পূরণ করতে যাব না। সত্যিকার গণতন্ত্রের চর্চা করতে হলে বিরোধী পক্ষকে হেয় করা, কটাক্ষ করে কথা বলা কিংবা আক্রমণাত্মক মনোভাব অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।

আমি আশা করি আওয়ামী লীগের বন্ধুরা অতীত পর্যালোচনা করেই জাতীয় পার্টির প্রতি যথার্থ আচরণ প্রদর্শন করবেন। আমরা সংসদে আসন সংখ্যার দিক থেকে ছোট আছি। কিন্তু কাল যে বড় হব না তা নয়- এদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাকিয়ে দেখলে দেখা যাবে, এবার যারা বিরোধী আসনে, আগামীতে তারা ক্ষমতায়। এভাবেই পালাবদল হয়ে আসছে। আমরা আশাহত নই। প্রকৃত জাতীয়তাবাদী শক্তিকে জাতীয় পার্টির পতাকাতলে আসতেই হবে। কারণ জাতীয়তাবাদের আরেকটি ধারা আজ বিপন্ন। তারা জামায়াতের গহ্বরে বিলীন হতে যাচ্ছে। এখান থেকে বের হওয়া আর তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জামায়াতকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন, আর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বামীর সুবাদে প্রতিষ্ঠা পাওয়া জামায়াতের সঙ্গে নিজের দলকে বিলীন করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এদিকে জামায়াতও সঠিক টার্গেট করতে পেরেছে। কারণ তারা জানে, স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ শক্তি এবং আওয়ামী পন্থিদের কোনো লোককে তাদের দলে টানা সম্ভব নয়। হয়তো শিবিরের কিছু ছদ্মবেশী ক্যাডারকে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে- (যেমনটি ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকে পড়েছে) কিন্তু এই পক্ষের অনুসারীদের জামায়াত কখনো তাদের সংগঠনে নিতে পারবে না। সেখানে বিএনপির সঙ্গে মিশে থাকতে পারলেই তাদের সুবিধাবাদী অংশকে দলের ভেড়াতে পারবে এবং তা পেরেছেও। বিএনপির মধ্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাদের একটি অংশ এবং নেতা-কর্মীদের কিছু অংশ দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোথাও না কোথাও ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দাড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে আসছে। গোয়েবলসের ফর্মুলা অনুসারে- একটি মিথ্যাকে বারবার বললে যেমন সত্যে পরিণত হয়, তেমনি একজন জাতীয়তাবাদী যদি বারবার জামায়াতকে ভোট দিতে থাকে তাহলে সেও জামায়াতে পরিণত হয়ে যায় এবং তা হয়েছেও। এটাই হচ্ছে বিএনপির বড় ‘উপহার’ যে, অসংখ্য স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী- এমনকি কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধাকেও পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে জামায়াতে পরিণত করে দিয়েছে। সুতরাং প্রকৃত জাতীয়তাবাদী শক্তিকে জাতীয় পার্টির প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারাকে অব্যাহত রেখেই এগিয়ে যেতে চাই এবং সেভাবেই পার্টিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। এখানে আমরা কোনো মহল কর্তৃক সমালোচিত কিংবা বিরোধিতার সম্মুখীন হলেও হতে পারি- তাহলে সেই মহলকে আমরাও শনাক্ত করতে পারব যে, কারা প্রকৃত জাতীয়তাবাদের প্রতিপক্ষ- যারা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না এবং স্বাধীনতার চেতনাকে অবজ্ঞা করে।

পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই- আমরা আপনাদের কীভাবে সহযোগিতা করেছি, তা একটু স্মরণে রাখবেন। ইতিহাসের আলোকে কথা বলবেন। আমি এ কথাও বলি না যে, সব সময় আপনারা জাতীয় পার্টির ওপর বৈরী আচরণ করেছেন। বিএনপি যা করেছে তা আপনারা করেননি। আপনাদের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের রাজনীতির নীতি-আদর্শ কখনোই মিলবে না। তবে মিল আছে দুটি জায়গায়- তা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক চেতনা এবং দেশপ্রেম। এই দুটি ক্ষেত্রে সাদৃশ্য আছে বলেই আমরা বারবার আপনাদের সহযোগিতা করে আসছি। অনুরূপ সহযোগিতা আমরাও কামনা করি এবং সেটা ভাষা, আচরণ ও কর্মে।

লেখক : সাবেক রাষ্ট্রপতি।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের  সৌজন্যে

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।